ঢাকা: শীতের গরম পিঠার বৈশিষ্ট্য- হাত পুড়িয়ে দেওয়ার আগেই ঠাণ্ডা হয়ে যাবে খুব শিগগিরই। পিঠা ধরলে হাতে গরমের আঁচ দেবে কিন্তু জ্বালাবে না।
অফিস যাওয়া আর ক্ষেতে যাওয়া মানুষের মধ্যে বড় তফাত আছে। তাই তো শহরে পিঠা উপভোগের সময় সন্ধ্যা আর গ্রামে সকাল বেলা।
গত দশ বছরে রাজধানীতে বেশ কয়েকটি সাজানো-গোছানো পিঠার দোকান হয়েছে। বেইলি রোড, ধানমন্ডি, গুলশানের বড় শপিংমলগুলো ঘিরে পিঠার আসর বসে। যেখানে কাচঘেরা ঘরে কাচের সেলফে রাখা পিঠাকে আলোকিত করে এনার্জি বাল্বের বাড়তি সাদা আলো। পিঠার সামনে নাম লেখা থাকে, মাইক্রোওভেনে গরম করে দেওয়া হয় পরিমাণ মতো। সেখানে গ্রামীণ পিঠার ধোঁয়া ওঠার গন্ধ থাকে না!
তবে রাজধানীতে কিন্তু পিঠার মূল জায়গাটাই অলিগলি আর ফুটপাথ। বাস স্টপেজ, গলির মোড়ে, শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলগুলোকে কেন্দ্র করে জমে ওঠে পিঠার আসর। শীতকালের স্ট্রিট ফুডের বাজার জমিয়ে তোলে দুটি পিঠা; চিতই আর ভাঁপা।
শুক্রবাদের মোহাম্মাদীয়া মার্কেটের পাশের গলিতে দুটি পিঠার দোকান পথের ধারেই। একটি ভ্যানের ওপর আরেকটি নিচে।
রানী বেগম প্রতি বছরের মতো এবারও চিতই পিঠা নিয়ে বসেছেন রাস্তার পাশে। চারটি স্টোভের চুলায় চারটি ছোট লোহাড় কড়াই। সেগুলোতে চালের গুঁড়ার তরল মিশ্রণ ঢেলে দিচ্ছেন তিনি। গরম কড়াইতে আড়াই থেকে তিন মিনিটের মধ্যেই শক্ত হয়ে উঠছে এক পাশ। খুন্তি দিয়ে কড়াই থেকে আলাদা করে সামনের টিনের ওপর দৈনিক পত্রিকার কাগজের উপর সাজিয়ে রাখছেন গরম গরম পিঠা।
পথের ধারের এই পিঠার দোকানের ক্রেতাদের নেই কোনো শ্রেণী বৈষম্য। অফিস ফেরত লোকজন, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে নির্মাণ শ্রমিক সবাই রানী বেগমের পিঠার ক্রেতা।
শীত বাড়তে থাকলে বিক্রি আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন এই পিঠার দোকানি। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘এখন ৫/৬ কেজি আতপ চাইল ভিজাই। রাতে ভিজাইলে সকালে তোমার খালু ভাঙ্গাইয়া আনে। অন্যদের জন্যে ভাঙ্গাইতে ২০ টাকা লাগলেও আমাগো কেজিতে লাগে ১৫ টাকা। যদিও গত বছর এক কেজি চালা ভাঙ্গাইতে লাগতো ৫/৬ টাকা। এই বছর সবকিছুরই দাম বেশি। চাইলের কেজি ৩৮ টাকা। গত বছর ছিল ২৪ টাকা। ’
সামনেই রানী খালার স্বামীর চায়ের দোকান। সেখান থেকে কেতলিতে গরম পানি ঢেলে দেন বড় পাতিলে। পিঠার গুঁড়ির সঙ্গে অল্প একটু বেকিং পাউডার, টেস্টিং সল্ট এবং সাধারণ লবণ মিশিয়ে অনেকক্ষণ ধরে নাড়লেই হয়ে যায় পিঠার মিশ্রণ।
চারটি কড়াইতেই পানি ঢেলে সেখানে আবার লবণ দেন। পুরো পানিটাই শুকায় কড়াইতে। এর কারণ হিসেবে তিনি জানান, লবণের কারণে কড়াই ভালো পরিষ্কার হয়, এতে পিঠা কালো হয় না।
প্রতিদিন সকাল থেকেই চাল গুঁড়ি করা, ভর্তা বাটা এসব নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয় রানী বেগমকে। বিকেল ৪টার পর দোকান সাজিয়ে বসেন তিনি।
পিঠার সঙ্গে দেওয়া ভর্তার মধ্যে রয়েছে- শুঁটকি, ধনিয়া, সরিষা ভর্তা ও কালিজিরা ভর্তা। ভর্তা প্রসঙ্গে রানী বেগম বলেন, ভর্তাটা খুব ভালো কইরা বানাইতে হয়। চিতই পিঠা খাওয়ার স্বাদ অনেকটাই নির্ভর করে ভর্তার ওপর।
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যা নাগাদ প্রায় ৪ কেজি চালের পিঠা বিক্রি হয়েছে রানীর। প্রতিটি পিঠার দাম ৫ টাকা। ঢাকার অনেক জায়গায় ৮/১০ টাকা দরেও চিতই পিঠা বিক্রি হয়।
পিঠার দাম প্রসঙ্গে রানী বলেন, এই রাস্তায় এই দরেই চলে। সবাই এই পিঠা ৫ টাকা করে খায়। আর অন্য জায়গার তুলনায় এখানকার পিঠা একটু ছোট।
তরুণী ক্রেতাদের প্রতি কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘কয়টা মাইয়্যা আছে পিঠা নিয়া ঢং করে বেশি। মাত্র কড়াই থেইক্যা উঠাই, শীতে পিঠা তাড়াতাড়ি ঠাণ্ডা হয়। এরপরও কয় কড়াইয়েরটা দিতে। বলি, গরমটা বাসায় নিয়া যাইতে যাইতে তো ঠাণ্ডাই হইয়া যায়। তখন খায় না!’
বাংলাদেশ সময়: ২০০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৬
এমএন/এমজেএফ