ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

কিশোর সওয়ার পিঠে উর্ধ্বপানে রংবাজ-নাগরাজ

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৬
কিশোর সওয়ার পিঠে উর্ধ্বপানে রংবাজ-নাগরাজ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রংবাজের পিঠে সওয়ার হয়ে প্রস্তুত রিপু। মামুন প্রস্তুত নাগরাজের সওয়ার হয়ে। দু’জনের বয়স আনুমানিক ১২ থেকে ১৪ মধ্যে। তাদের একহাতে ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরার রশি। আরেক হাতে চাবুক। ছটফট করছিলো রংবাজ-নাগরাজ নামের ঘোড়া দুটো।
 

বগুড়া: রংবাজের পিঠে সওয়ার হয়ে প্রস্তুত রিপু। মামুন প্রস্তুত নাগরাজের সওয়ার হয়ে।

দু’জনের বয়স আনুমানিক ১২ থেকে ১৪ মধ্যে। তাদের একহাতে ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরার রশি। আরেক হাতে চাবুক। ছটফট করছিলো রংবাজ-নাগরাজ নামের ঘোড়া দুটো।
 
নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে চাইছিলো না ঘোরাগুলো। তবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ঘোড়া দুটো নিয়ন্ত্রণ করছিলো দুই সওয়ার। মাঝে মধ্যে পা দিয়ে সামনের অংশ জাপটে ধরছিলো। পেছনে হালকাভাবে চাবুকের আঘাত দিয়ে যাচ্ছিলো তারা।
 
রংবাজ-নাগরাজের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন রেফরি। গলায় ঝুলছিলো বাঁশি। মাঠের কিছুটা দূরে মঞ্চ। সময় হয়ে গেছে- মাইকে ঘোষকের এমন আওয়াজ শোনার সঙ্গে সঙ্গে রেফরির বাঁশি বেজে ওঠে।
 
মুহূর্তে সওয়ারের ইশারায় রংবাজ-নাগরাজ উর্ধ্বপানে ছুটতে থাকে। কখনো রংবাজ আগে ওঠে। আবার নাগরাজ। এভাবে আগে-পিছে ঘোড়া নিয়ে ছুটতে থাকে দুই সওয়ার। আর মাঠের চারদিক ঘিরে শতশত দর্শকস্রোতা করতালি দিয়ে যাচ্ছিলেন।  
রোববার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের সাতারা গ্রামে স্থানীয় যুব সমাজের উদ্যোগে আয়োজিত তিন দিনব্যাপি ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় গেলে এমন দৃশ্য দেখা যায়। প্রতিযোগিতা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
 
কুড়াতলা মাঠে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতায় পাঁচটি দলে বিভক্ত হয়ে মোট ৩১টি ঘোড়া অংশ নেয়।
 
তবে ঘোড়াগুলোর সওয়ার ছিলো ৭-৮জন কিশোর। ছোট বেলা থেকেই এসব কিশোররা দূর-দূরান্তের বিভিন্ন এলাকায় অনুষ্ঠিত ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় গিয়ে সওয়ার হয়ে ঘোড়া দাবড়ায়। এরা অবশ্য বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
 
ধুনটের রিপু ও রাসেদ, ঝাঁঝরের সজিব, নন্দীগ্রামের মামুম ও হাসান, তারাকান্দির রনি তাদের কয়েকজন। বয়সের কারণে তাদের অন্যের সহায়তায় ঘোড়ার পিঠে উঠতে হয়।  
 
এদের কেউ কেউ ৩-৪বছর ধরে ঘোড়ার সওয়ার হয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। আবার কারো কারো সওয়ার হওয়ার বয়স এক থেকে দেড় বছর। প্রচণ্ড দক্ষতার সঙ্গে তারা ঘোড়া পরিচালনা করে থাকেন।  
 
মামুন ও রিপু বাংলানিউজকে জানায়, তাদের সওয়ার হয়ে ঘোড়া দাবড়ানোর বয়স প্রায় পাঁচ বছর। লেখাপড়া করতে ভাল লাগে না। সব সময় শুধু ঘোড়া চালাতে মন চায়। তাই এটাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে তারা।

 
তারা আরো জানায়, ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ঘোড়ার মালিকদের সঙ্গে তাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। ঘোড়ার মালিকরাই তাদের খুঁজে নেয়।
 
প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার জিতে দিতে পারলে তাদের সেই দিন ১হাজার টাকা দেওয়া হয়। এছাড়া প্রতিদিন ঘোড়ার মালিকারা পারিশ্রমিক হিসেবে তাদের ৩-৪শ’ টাকা করে দেন।
 
প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি করা ঘোড়াগুলোর বিভিন্ন নাম দিয়ে থাকেন মালিকরা। সাতারা গ্রামে আয়োজিত ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় সূর্যলাল, পাওয়ার হর্স, কালারাজা, অগ্রদেব, ডায়মন্ড, রংবাজ, নাগরাজ, লালনসাহা, কিরণমালা, আল্লাহর দান নামের ঘোড়াগুলো অংশ নেয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৬
এমবিএইচ/বিএস
 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।