গত ১৫ বছর ধরে তানজিবো ক্লিফে আত্মহত্যা করতে আসা মানুষদের বাঁচানোর কাজ করে আসছেন সিজে। এখন পর্যন্ত তিনি বাঁচিয়েছেন ৬০৯ জন মানুষকে।
প্রাক্তন পুলিশ সদস্য সিজে বলেন, যখন আমি আত্মহত্যা করতে আসা কোনো মানুষকে দেখি, তাকে আমার বন্ধুর মতো মনে হয়। তাদের আমি খুব স্বাভাবিকভাবে জিজ্ঞেস করি, ‘এই, কেমন আছো বন্ধু?’ তারাও যেন সেসময় কথা বলার জন্য কাউকে খুঁজছিলেন।
এভাবেই কথা বলতে বলতে ভয়ানক পরিণতি থেকে ফিরিয়ে আনেন সিজে। তার পরনে থাকে জেলেদের ব্যবহৃত ‘ফিশিং হ্যাট’, হাতে থাকে বাইনোকুলার। চোখে বাইনোকুলার লাগিয়ে খুঁজে চলেন আত্মহত্যা করতে আসা মানুষের উপস্থিতি।
সিজে জানান, সবাই সাধারণত বিকেল বা সন্ধ্যার দিকে এখানে লাফানোর জন্য আসে। সূর্য ঠিক অস্ত যাওয়ার সময়ই কেন যেন সব দুর্দশা থেকে মুক্তি চায় সবাই। অনেকে আর্থিক সংকটে পড়ে আসে এখানে। বসন্তের শুরুতে যখন লেখাপড়ার চাপ বেড়ে যায়, তখন ছাত্র-ছাত্রীদের আসতে দেখা যায়। তবে কেউ কেন যেন বৃষ্টির দিন আত্মহত্যা করতে আসে না।
জাপান বিশ্বের অন্যতম আত্মহত্যা প্রবণতার দেশ। দেশটির প্রতি এক লাখ জনের মধ্যে ১৭ জন আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যাকারীদের বেশিরভাগই পুরুষ। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা হয় গলায় ফাঁস দিয়ে। ১৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ আত্মহত্যা। সংখ্যাটা সড়ক দুর্ঘটনা ও ক্যানসারে মৃত্যুর সংখ্যার চেয়েও বেশি। ২০১৬ সালে জাপানে আত্মহত্যা করেছেন প্রায় ২২ হাজার জন।
জাপানের বেশিরভাগ আত্মহত্যা ঘরের ভেতরে সংঘটিত হলেও, অনেকে উঁচু ব্রিজ, পাহাড়ের চূড়া কিংবা ভবন থেকেও লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন। এসব স্থানের মধ্যে অন্যতম হলো তাজিনবো ক্লিফ। টোকিও থেকে ২০০ কিলোমিটার পশ্চিমে এর অবস্থান। বলা হয়, অনেক আগে তাজিনবো নামে এক সন্ন্যাসীকে তার শত্রুরা এ খাদ থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিল। অর্ধ মাইলেরও বেশি প্রসারিত এ খাদটি এরপর থেকেই হয়ে ওঠে আত্মহত্যা করতে ইচ্ছুকদের প্রিয় স্পট।
সিজে প্রায় ৪২ বছর পুলিশে চাকরি করেন। তার সর্বশেষ পোস্টিং ছিল তাজিনবোতে। চাকরির সুবাদে তাকে প্রায়ই খাদের নিচ থেকে অত্মহত্যা করা মানুষের মরদেহ সরাতে হতো।
২০০৩ সালের বিকেলে এক দম্পতিকে সেখানে আসতে দেখেন সিজে। জিজ্ঞাসা করে জানা যায়, তারা টোকিওর এক দোকান মালিক এবং তারা খুব খারাপভাবে ঋণে ডুবে আছেন। তাই দু’জন মিলে তাজিনবোর কিনারা থেকে লাফানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সিজে সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ কর্তৃপক্ষকে খবর দিলে তাদের উদ্ধার করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। কিন্তু পাঁচদিন পর খবর আসে, তারা বাড়িতে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
বিষয়টা মর্মাহত করে সিজেকে। এরপর পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিয়ে তাজিনবো ক্লিফে পাহারা দেওয়ার কাজ শুরু করেন। বর্তমানে তার সঙ্গে আরও ২০জন স্বেচ্ছাসেবী একই কাজ করেন।
সিজে বলেন, আমরা নিজেদের মধ্যে সময় ভাগাভাগি করে নেই এবং প্রতিবার একজন করে খাদের কিনারা ধরে ঘুরে বেড়াই। কারণ একাধিক ব্যক্তিকে একসঙ্গে দেখলে আত্মহত্যাকারীরা সতর্ক হয়ে উঠবে।
সিজে সম্প্রতি একটি ড্রোন জোগাড় করেছেন। এ ড্রোনের সাহায্যে পাহাড়ের কিনারা পর্যবেক্ষণ করা আরও সহজ হয়ে উঠবে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৮
এনএইচটি/এএ