কথা হলে জানালেন, সামনেই নতুন বছর। আসছে হালখাতাও।
চৈত্র প্রায় শেষ। পহেলা বৈশাখের আর খুব বেশি দেরি নেই। বাংলা নববর্ষের শুরুতেই ব্যবসায়ীদের অন্যতম আয়োজন নতুন খাতা খোলার উৎসব হালখাতার। পহেলা বৈশাখের দিনে বিগত বছরের ক্রেতা-বিক্রেতার পুরোনো সব দেনা-পাওনা চুকিয়ে করা হবে মিষ্টিমুখ। সঙ্গে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে নতুন যাত্রা শুরু হবে ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্কে। এমনটাই জানাচ্ছিলেন এ ব্যবসায়ী।
তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে বাবা-জ্যাঠাদের হালখাতার আয়োজন করতে দেখে আসছি। ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনো আমাদের অনেকেই হালখাতার আয়োজন করে। যদিও এখন ডিজিটাল যুগ। কম্পিউটারে সব হিসাব করা হয়। বাকিও তেমন থাকে না। তারপরও ঐতিহ্য রক্ষায় আমরা প্রায় সব ব্যবসায়ীরাই হালখাতা পালন করি।
কথা হয় পুরান ঢাকার চকবাজারের ডালপট্টির এস আলম এন্টারপ্রাইজের মালিক আলী আজগরের সঙ্গে। তিনি বলেন, কালের বিবর্তনে হালখাতার উৎসাহ-উদ্দীপনা অনেকটাই কমে গেছে। এছাড়া কম্পিউটারে হিসাব করায় লালসালুতে বাঁধাই করা হিসাব খাতার চল অনেক কমে গেছে। হালখাতার সেই রমরমা উৎসব-আমেজ এখন আর নেই। আগে খুব ধুমধাম করে এ উৎসব পালন করা হতো। এখন অনেকটা নিয়ম রক্ষার জন্যই হালখাতার আয়োজন করেন ব্যবসায়ীরা।
পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে দেশের ছোট-বড় প্রায় সব ধরনের ব্যবসায়ীই হালখাতা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শহর-বন্দর-গ্রাম সর্বত্রই এ উৎসবের প্রস্তুতি চলছে বেশ জোরেশোরে। তবে এ উৎসব সবচেয়ে বেশি জমকালোভাবে উদযাপিত হয় রাজধানীর পুরান ঢাকায়ই।
বৃহস্পতিবার (৫ এপ্রিল) পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজার, শ্যামবাজার, ইসলামপুর, বাবুবাজার, চকবাজার ও মৌলভীবাজারে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ধোয়ামোছার কাজ করতে দেখা গেছে। ব্যাবসায়ীরা সাজিয়ে-গুজিয়ে রাখছেন দোকানের সরঞ্জাম। অনেক দোকানের ব্যবস্থাপক আমন্ত্রণপত্রের ওপর পাওনাদের নাম লিখেছেন। হালখাতার জন্য অনেকে মিষ্টির দোকানে অর্ডারও দিচ্ছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ধোয়ামোছা ও দোকান সাজানোর পাশাপাশি হালখাতার প্রস্তুতি হিসেবে অনেক ব্যবসায়ী নতুন রং লাগিয়ে ও চুনকাম করে সাজিয়ে তুলেছেন নিজেদের প্রতিষ্ঠান। সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে দোকানে লাগিয়েছেন ফুল আর ফেস্টুনও। মুসলমান ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নিয়েছেন মিলাদ-মাহফিল ও গোলাপ জল ছিটিয়ে নতুন বছরের ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু করার। আর শাঁখারীবাজার ও তাঁতীবাজারের সনাতন ধর্মাবলম্বী বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে চৈত্রসংক্রান্তি, চড়ক পূজা ও গণেশ পূজা পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে তাঁতিবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী মানিক রক্ষিত বাংলানিউজকে বলেন, আমরা হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী বর্ষবরণ উৎসব করে থাকি। তাই আমাদের পহেলা বৈশাখ একদিন পরে হয়। একই দিনে আমরা শিব ও চড়ক পূজারও আয়োজন করি।
শাঁখারিবাজার ঘুরে দেখা গেছে, এরই মধ্যে প্রায় সব ক্রেতা ও অতিথিদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে আমন্ত্রণপত্র। এখন শুধু বাকি নিজ নিজ দোকানের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কাজ। তাই ব্যবসায়ীরা সব পণ্য নামিয়ে ধুয়ে-মুছে দোকান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন। পাশাপাশি পুরাতন খাতার সব লেনদেনের হিসাবও করছেন। কেন না বছরের প্রথম দিনে তারা নতুন খাতা দিয়ে নতুন করে ব্যবসা শুরু করবেন। তাই পয়লা বৈশাখ আসা পর্যন্ত তেমন একটা কেনাবেচা করছেন না তারা। হালখাতার অনুষ্ঠানটি যেন সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারেন সে দিকেই এখন তাদের নজর।
এবার তাঁতিবাজার ও শাঁখারিবাজারে মোট দুই হাজার দোকানে হালখাতার অনুষ্ঠান হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। চৈত্র মাসের শেষ দিনে অর্থাৎ চৈত্রসংক্রান্তিতে আগের সব দেনাপাওনার নিষ্পত্তি করবেন তারা। পহেলা বৈশাখে হবে নগদে বেচাকেনা। এদিন ব্যবসায়ীরা লাল কভারের নতুন হালখাতা চালু করবেন। এতে থাকবে নতুন বছরের হিসাব-নিকাশ। এর পরদিন থেকেই শুরু হয় নগদের পাশাপাশি বাকিতে লেনদেন, যা নিষ্পত্তি হয় আবার চৈত্র মাসের শেষ দিনে। আর সে সময় পর্যন্ত সুন্দরভাবে পথ চলার মনোবাসনা নিয়েই হালখাতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৮
এইচএমএস/টিএ