একেবারে ছিন্নমূল যারা তারা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতে প্রতিনিয়তই বাস্তবতার সঙ্গে যুদ্ধমুখর। প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলো আজ প্রভাবশালীদের সম্পূর্ণ দখলে।
অভাব, দারিদ্র্য বড় নিদারুণভাবে গ্রাস করেছে মৎস্যজীবীদের। বাংলা নববর্ষ উদযাপনের কোনো প্রকার উসাহ-আমেজ একেবারেই নেই হাইল হাওর সংলগ্ন শ্রীমঙ্গল উপজেলার পশ্চিম ভাড়াউড়া গ্রামে। প্রায় পাঁচ শতাধিক মৎস্যজীবীর বসবাস এখানে।
১৪ এপ্রিল (শনিবার) দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, কোথাও নববর্ষের কোনো প্রকার আয়োজন নেই। এলাকার প্রত্যেকে যার যার কাজে বেরিয়ে পড়েছেন। কেউ বোরো ধান কাটতে মাঠে গেছেন। কেউ বা মাছ ধরতে হাওরের দিকে রওনা হয়েছেন।
এই এলাকার ছিন্নমূল মানুষের প্রতিনিধি রুকাম উদ্দিন। স্থানীয় মাছরাঙা সমবায় সমিতির সভাপতি তিনি। এলাকার গরীব-দুস্থ জেলেদের পক্ষে কথা বলতে গিলে তাকেও বিভিন্নভাবে হয়রানিসহ মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়।
তিনি এই বাংলা নববর্ষকে ঘিরে তার গ্রামে গ্রামীণ খেলা ‘হাডুডু’ এর প্রচলন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যর্থতা সঙ্গী হয়েছে তার।
‘গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা হচ্ছে হাডুডু। এই খেলাটিকে আমাদের গ্রামে ব্যাপকভাবে প্রচার করতে আমি-আমাদের গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী আরো কয়েকটি গ্রামের দশটি দলের সমন্বয়ে একমাসব্যাপী খেলার আয়োজন করি। ফাইনাল খেলাটি গত বছরের ১৪ এপ্রিল, পহেলা বৈশাখের দিন অনুষ্ঠিত হয়। ’
ওই দিনের চূড়ান্ত খেলায় শাহপরান ২১ পয়েন্ট পেয়ে ১৭ পয়েন্ট প্রাপ্ত মাছরাঙাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। এই খেলাটির আয়োজক ছিলাম আমি। মাসব্যাপী এই খেলাটি আয়োজনকালে কত যে ভুল বোঝাবুঝি, কত যে বাকবিতণ্ডা হয়েছিল তা এতো সহজে বলা যাবে না। এলাকার কিছু মানুষ আমার এই শুভ কার্যক্রমটিতে কৌশলে ঝগড়া-বিবাদ লাগিয়ে ব্যর্থতার দিকে নিয়ে যেতে চেয়েছে।
তার আক্ষেপের সুর ক্ষোভের সঙ্গে বেরিয়ে আসে: ‘এই বছর কানে ধরেছি। এমন হাডুডু খেলার আয়োজন আর করবো না। গতবছর বাংলা নববর্ষকে ঘিরে চেয়েছিলাম বাংলার কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিবো। কিন্তু শতভাগ সফল হতে পারলাম কই?’
‘এবার আমাদের এলাকার চেয়ারম্যান আমাকে সাফ জানিয়ে দিলেন, মারামারি লাগলে তুমি এগুলো সামলিও; আমি এগুলোতে আর নাই’। এই হলো আমার নববর্ষের ব্যর্থ প্রয়াস''-- জানান রুকাম উদ্দিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৮
বিবিবি/এসএইচ/জেএম