ছোট বাক্সের ছোট ছিদ্রগুলোতে চোখ গলিয়ে আছে ছয় বছরের শিশু মানহা এবং অরিত্র। সুন্দরবনের বাঘ, ভাল্লুক, দার্জিলিং-এর পাহাড়, ফুলের বাগান, মক্কা শরীফ, মদিনা শহর, পরিস্থানের পরী; কি নেই বায়োস্কোপের মধ্যে।
বায়োস্কোপ দেখা শেষে ছিদ্র থেকে চোখ তুলে বেশ বিস্ময় নিয়ে তাকালো মানহা। চোখে মুখে তার ভালোলাগার রেশ। বললো- আমি এর আগে কখনও এটা দেখিনি। তবে আব্বু-আম্মুর কাছে বায়োস্কোপের অনেক গল্প শুনেছি। আজই প্রথম দেখলাম, অনেক ভালো লেগেছে আমার।
ভীষণ মনোযোগ নিয়ে বায়োস্কোপ দেখছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশরিফা আক্তার। বললেন, বায়োস্কোপের অনেক গল্প শুনেছি, বইতে পড়েছি। তবে কখনও দেখা হয়নি। আজই প্রথম বায়োস্কোপ দেখলাম। এটা সত্যি অনেক সুন্দর এবং ভালোলাগার মতো।
এক সময়ের গ্রামবাংলার অন্যতম প্রধান বিনোদনের মাধ্যম ছিল এ বায়োস্কোপ। ঐতিহ্যবাহী বিনোদনের এ মাধ্যমটি এখন প্রায় নেই বললেই চলে। আকাশ সংস্কৃতি আর কম্পিউটার গেমসহ বিনোদনের প্রায় সব মাধ্যম এখন ঘরে ঘরে পৌঁছে যাওয়ায় মুখ ফিরিয়েছে আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্য।
জলিল মণ্ডল বললেন, ‘টিভি আইসা এখন তো আর লোকে এইগুলা দেখেই না। শুধু কয়েকটা মেলার সময় যা চলে। আর এতো কথা বইলা ২০ টাকায় কি আর প্যাট চলে বাজান!’
বায়োস্কোপ দেখতে এসেছিলেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির আবৃত্তি বিভাগের প্রশিক্ষক এবং উপস্থাপক রূপশ্রী চক্রবর্তী। সবার মতো তিনিও বেশ উৎসাহ নিয়েই বায়োস্কোপ দেখলেন।
কথা হলে রূপশ্রী বাংলানিউজকে বলেন, গ্রামে বায়োস্কোপের দিনগুলো আগে অনেক সুন্দর ছিলো। তখন তো সবাই একসঙ্গে দলবেঁধে বায়োস্কোপ দেখতো। এখন এটি প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে। শিশুসহ আমরাও সবকিছুতেই এখন একটু নতুনত্ব চাই। সেদিক থেকে বায়োস্কোপটা আরও একটু সুন্দর এবং রঙিন করে উপস্থাপন করা যেতেই পারে। ছবিগুলোতেও আনা যেতে পারে বৈচিত্র্য। ফলে এটি আমাদের কাছে আরও বেশি আগ্রহের বস্তু হবে এবং গ্রহণযোগ্যতা পাবে বলেই আমি আশা করি।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে বৈশাখি মেলা। বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে একাডেমি প্রাঙ্গণের বটতলায় দেখা মেলে এ বায়োস্কোপের। আগামী ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত মেলা চলবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। প্রতি সন্ধ্যায় মেলামঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পুতুল নাচ, মৃৎশিল্প, কারুশিল্পসহ মেলায় গ্রামীণ মেলার প্রায় সব স্বাদই পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৮
এইচএমএস/আরআর