ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

‘ভালো করে নাচগান করবেন, বকশিশ পাইবেন’

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৮
‘ভালো করে নাচগান করবেন, বকশিশ পাইবেন’ পুতুল নাচ। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: বাংলা একাডেমির বৈশাখি মেলা জমে উঠেছে বেশ। তবে আরও জমে উঠেছে এ মেলার পুতুল নাচ। সবাই যখন মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে খুঁজে নিচ্ছেন তাদের পছন্দের পণ্যটি, তখন একটি দল মাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী 'ঝুমুর ঝুমুর পুতুল নাচ' দেখার জন্য।

টিনের ছিউনি দেওয়া অস্থায়ী ছোট্ট মঞ্চের শেষপ্রান্তে লাল কাপড়ের পর্দা টানিয়ে দেখানো হচ্ছে পুতুল নাচ। মঞ্চের এক প্রান্তে বাজছে ড্রাম, তালে তালে অন্য প্রান্ত থেকে করা হয় গান এবং পুতুলের কথাগুলো অনুবাদ।

পুতুল নাচ শুরু হতে না হতেই মূল মঞ্চের সামনে বেশ ভিড় গেল। ছোট্ট একটা গ্যালারিতে অন্তত ৩০ জন দর্শক রয়েছে। সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে অপেক্ষা করছেন ঐতিহ্যবাহী পুতুল নাচ দেখার জন্য।

পাঁচ বছরের শিশু থেকে শুরু করে দর্শক হয়েছেন ৬০ বছরের মালতী গুপ্তও।  

তিনি বলেন, অনেক আগে গ্রামের মেলায় একবার পুতুল নাচ দেখেছিলাম। এখন তো আর এগুলো পাওয়ায় যায় না। প্রচলন উঠে গেছে বললেই চলে। অথচ এক সময় এ পুতুল নাচই ছিল মেলার অন্যতম আয়োজন।

মালতী গুপ্তর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই পর্দা উঠলো মূল মঞ্চের। বেরিয়ে এলো লাল জরির কাপড় পরা একটি মেয়ে পুতুল। কথা বলতে শুরু করলো ‘চিকচিক চিকচিক’ করে। পুতুল ‘চিকচিক’ করে যা বলে, পাশ থেকে তা দর্শকদের জন্য অনুবাদ করে দেন সাথী খাতুন।  

সাথী খাতুন পুতুলকে বলেন, ‘ও দিদিমণি, আসরে যখন আইছেন, কিছু নাচ-গান করবেন। ’ 

পুতুল জবাবে বলল, ‘চিকিচিকি। ’ অর্থাৎ, ‘নাচগান করব?’ 

উত্তরে সাথী বলেন, ‘ভালো করে নাচগান করবেন, বকশিশ পাইবেন। ’ 

একথা শুনে পুতুলটি নেচেনেচে গাইতে শুরু করে।

একটির পর একটি নতুন নতুন পুতুলের নাটক। পুতুলদের সাপখেলা, বিয়ের আসর, ভূত খেলা এবং সবশেষে হয় নৌকা বাইচের আয়োজন। বাইচের নৌকা দুটি শেষ মুহূর্তে কুমিরের আক্রমণের শিকার হয়ে অসময়ে ডুবে যায়।

শুরু হয় পরবর্তী আসরের আয়োজন। মাইকের ঘোষণায় বেরিয়ে যায় সকল দর্শক। তবে তার আগে কথা হয় দলের অরিত্র চক্রবর্তীর সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে জানান, পুতুল নাচ এখন তো প্রায় বিলুপ্ত। তবে মেলা সহ বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানেও তারা পুতুল নাচের আয়োজন করে থাকেন।

পুতুল নাচের প্যান্ডেল থেকে বেরিয়েই কথা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের শিক্ষার্থী শারীফ অনির্বানের সঙ্গে।  

তিনি বলেন, শহরের এই যান্ত্রিকতার মাঝেও বাংলা একাডেমি একটি বহুমূল্য ঐতিহ্যকে আমাদের সামনে তুলে এনেছে। আমাদের এ ঐতিহ্য রক্ষা করার জন্য আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। এছাড়া পুতুল নাচকে টিকিয়ে রাখতে আরো বেশি প্রচারণা এবং আয়োজন করা উচিত।

বৈশাখ (১৪২৫) উপলক্ষে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে বৈশাখি মেলা। ২৩ এপ্রিল মেলার শেষদিন, চলবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।  

সন্ধ্যায় মেলা মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পুতুল নাচ, মৃৎশিল্প, কারুশিল্পসহ মেলায় প্রায় সব গ্রামীণ স্বাদই পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৬০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৮
এইচএমএস/এনএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।