ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

যেমন ছিল ‘ওৎজি’ মানবের খাবার

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪২ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৮
যেমন ছিল ‘ওৎজি’ মানবের খাবার ‘ওৎজি’ মানবের পাকস্থলী পরীক্ষা করছেন গবেষকরা

ছাগলের চর্বি, বন্য হরিণের মাংস। সঙ্গে গম আর ফার্ন জাতীয় খাবার। আপনার কাছে এগুলো কোনো মাস্টারশেফের মেন্যু মনে হতে পারে। কিন্তু এ মেন্যু আয়োজন ‘ওৎজি’ মানুষের। এ খাবারগুলো নাকি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধও ছিল তাদের জন্য।

বিজ্ঞানীরা ‘ওৎজি’ মানুষের শেষ খাবার মেন্যু উন্মোচন করেছেন। তারা বলছেন, ‘ওৎজি’র খাবার বেশ ভারসাম্যপূর্ণ ছিল কিন্তু এগুলো খুব বেশি পরিমাণ চর্বিযুক্ত খাবার।

 

‘ওৎজি’ নামের এ মানুষ আজ থেকে ৫ হাজার ৩০০ বছর আগে পৃথিবীতে বাস করতো। হিমবাহতেই তার মৃত্যু হয়। ১৯৯১ সালে তার দেহ আবিষ্কার করা হয়। এরপর তাকে মমি করে রাখা হয়। কিন্তু এর আগে তার দেহ সহস্রাব্দ বছর ধরে বরফ দিয়ে আবৃত ছিলে।   

বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে তার জীবনের অনেক তথ্যই উদঘাটন করতে পেরেছেন। সবশেষ তারা ‘ওৎজি’ মানবের মৃত্যুর আগের খাবার মেন্যু উন্মোচন করেছেন। তারা বলছেন, ‘ওৎজি’ মানবের পাকস্থলী চর্বি জাতীয় খাবার দিয়ে ভর্তি ছিল। যেমন- বন্য ছাগল, হরিণের মাংস, এক ধরনের পুরনো শস্যদানা। এছাড়াও সে ফার্ন জাতীয় বিষাক্ত খাবারও খেতো।  

খাবারগুলোতে চর্বি জাতীয় উপাদান ছিল ৫০ শতাংশ। যা আধুনিক যুগের আহারে চর্বির পরিমাণের থেকে ১০ শতাংশ বেশি।
‘ওৎজি’ মানবের পাকস্থলী
ইতালির বোলজানোতে অবস্থিত ইউরাক রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর মাম্মি স্টাডিজের গবেষক ড. ফ্রাঙ্ক মেইজনার বলেন, ‘ওৎজি’ মানব যে খাঁড়া স্থানে শিকার করতো এ অনুযায়ী সে পরিমাণ খাবার প্রয়োজন। এ স্থানে শিকার করার জন্য চর্বিযুক্ত খাবার দরকার। সে স্থানের রুঢ় আবহাওয়াতে চর্বি জাতীয় খাবার প্রয়োজনীয় শক্তি জোগাতো।

‘ওৎজি’ মানবের খাবারের মেন্যু নিয়ে গবেষণাটি ‘কারেন্ট বায়োলজি’তে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাটির ফলে তাম্রযুগের মানুষদের খাবারের তালিকার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।  

‘ওৎজি’ মানবের খাবারের তালিকা নিয়ে এর আগেও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কিন্তু এবারের মতো এতো বৃহৎ আকারে বিশ্লেষণ করা হয়নি। এ বিশ্লেষণটি ‘ওৎজি’ মানবের পাকস্থলীর বিভিন্ন উপাদানের সাহায্যে করা হয়েছে।  

তবে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো ‘ওৎজি’ মানবের পাকস্থলী খুব সম্প্রতি খুঁজে পাওয়া গেছে। দেহ মমি করে রাখার ফলে পাকস্থলীটি ঠিক জায়গায় ছিল না।  
পাকস্থলীর খাবারের নমুনা
বিজ্ঞানীরা অনুমান করে বলছেন, ‘ওৎজি’ মানবের খাবারের চর্বি দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য উপকরণ থেকে আসতো না। চর্বি সঞ্চয় হতো মূলত ‘আলপিন আইবেক্স’ নামে এক ধরনের বন্য ছাগলের প্রজাতি থেকে। এগুলো সাধারণত ইউরোপের আল্পস পর্বতমালায় পাওয়া যেত।  

ড. মেইজনার বলেন, ‘ওৎজি’ মানবের খাবারে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও চর্বি জাতীয় খাবারের ভালো সম্বন্বয় ছিল। কিন্তু আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, ‘ওৎজি’ মানব উচ্চ পরিমাণের চর্বি গলাধঃকরণ করতে পারতো।  

‘ওৎজি মানবের খাবার পুষ্টিসমৃদ্ধ হলেও এর স্বাদ ভালো ছিল না। ড. মেইজনার বলেন, খাবারগুলো অবশ্যই এখনকার খাবারের মতো সুস্বাদু নয়। খাবারে মোটেও লবণ থাকতো না।

গবেষকরা ধারণা করছেন, ‘ওৎজি’ মানব হারবালের ওষুধ গ্রহণ করতো। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ‘ওৎজি’ মানবের পাকস্থলীতে ফার্ন পেয়েছে। অথবা এমনও হতে পারে সে ফার্ন জাতীয় পাতায় দিয়ে খাবার মুড়ে রাখতো। ফলে ভুলেই বিষাক্ত ফার্ন তার পাকস্থলীতে চলে যেতো।  
‘ওৎজি’রা তাদের খাবার কাঁচা অবস্থায় অথবা পুড়িয়ে খেতো।

 

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৮
এএইচ/এএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।