শেষবারের মতো প্রেমিকাকে দেখতে ছুটে এসে প্রত্যাখ্যাত হয়ে এই চার ছত্র প্রেমিকার মন্দিরের দরজায় লিখে পাশের ফুলেশ্বরীতে ডুবে আত্মহত্যা করেছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম নারী কবি চন্দ্রাবতীর প্রেমিক জয়ানন্দ।
চন্দ্রাবতীকে নিয়ে আমার জমাটবাঁধা কৌতূহল দীর্ঘদিনের; মধ্যযুগের সাহিত্য সম্পর্কে যৎসামান্য জানার পর থেকেই।
অবশেষে এলো সে সুযোগ। গত ২১ সেপ্টেম্বর পাঁচজনের দল নিয়ে কিশোরগঞ্জ সফরে গিয়ে মন ও চোখ দুই-ই জুড়িয়ে এলাম। সফরসঙ্গী সাবেক সহকর্মী আজাদ, সজিব, রিমন ও মিঠুর মধ্যেও এ সফর নিয়ে ছিল দারুণ উৎসাহ। কিশোরগঞ্জ শহরে আমাদের যেচে আতিথেয়তা দেওয়া আরেক সাবেক সহকর্মী স্থানীয় সাংবাদিক টিটু দাস সঙ্গ দিলেন পুরোটা সময়।
কিশোরগঞ্জ শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তর দিকে অটোরিকশা চেপে দুপুরের পর আমরা যখন পাতুয়ারী গ্রামে ঢুকলাম, আর দশটা গ্রামের মতোই চারপাশ। তবে চন্দ্রাবতীর স্মৃতি নিয়ে আজো মাথা উঁচু করে থাকা শিবমন্দিরটি দূর থেকে দেখেই বুকের ধুপধুপানি টের পেলাম।
পাঁচ শতাব্দীর আগেও এখানে বহমান প্রমত্তা ফুলেশ্বরীর কোনো চিহ্নই এখন বোঝার উপায় নেই। বর্তমানে পাতুয়ারীর অদূরে কিশোরগঞ্জ শহরের বুক ভেদ করে চলা ক্ষীণস্রোতা মৃতপ্রায় নরসুন্দা এখনও বহমান। চন্দ্রাবতীর একমাত্র স্মৃতি হয়ে টিকে আছে কেবল তার শিবমন্দিরটি। অনেকটা শৌর্য হারালেও জৌলুস কমেনি কয়েক গজ ব্যবধানে নির্মিত ছোট-বড় আকৃতির মন্দির দু’টির।
মোঘল স্থাপত্যরীতি ও পোড়ামাটির ফলক ব্যবহার করে তৈরি মন্দির দু’টিই এখন এখানে এসে চন্দ্রাবতীকে খুঁজে পাবার একমাত্র অবলম্বন। চন্দ্রাবতীর বাড়ি বা নাগেশ্বরশোভিত পুকুরেরও কোনো অস্তিত্ব আজ আর নেই। তবে স্থানীয়রা কেউ কেউ মন্দিরের ৫০/৬০ গজ দূরে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত দ্বিতল একটি জীর্ণ ভবনকে চন্দ্রাবতীর পিতৃগৃহ বলে জানালেন। যদিও চন্দ্রাবতীর মন্দিরের বিলবোর্ডে বর্ণিত- এটা চন্দ্রাবতীর অধস্তন পুরুষ নীলকান্ত জমিদারের বাড়ি।
চন্দ্রাবতীর জন্ম ১৫৫০ সালে। ষোড়শ শতকের এই বিদুষী নারী বাংলা সাহিত্যের প্রথম নারী কবি। তার বাবা মনসামঙ্গলের অন্যতম কবি দ্বিজ বংশীদাস। বর্তমান কিশোরগঞ্জ সদরের মাইজখাপন ইউনিয়নের কাচারিপাড়া গ্রাম যেটি পাতুয়ারী নামে পরিচিত, ফুলেশ্বরীতীরের এই গ্রামেই জন্ম মধ্যযুগের কবি চন্দ্রাবতীর।
চন্দ্রাবতীকে কিংবদিন্তী করে তুলেছে তার সৃষ্ট লোকগাঁথা; ব্যর্থ অমর প্রেমকাহিনী। যা আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। চন্দ্রাবতীকে প্রথম জনসম্মুখে নিয়ে আসেন ১৮ শতকের কবি নয়ানচাঁদ ঘোষ, তার শ্রেষ্ঠকর্ম ‘চন্দ্রাবতী’ পালাকাব্যে। ১২টি অধ্যায়ে ৩৫৪টি ছত্রের এই একমাত্র লোকগাঁথাই বাংলা সাহিত্যে চন্দ্রাবতীর জীবনীর তথ্যভিত্তিক নির্ভরযোগ্য একমাত্র প্রামাণ্য দলিল।
নয়ানচাঁদের পালা থেকে জানা যায়, বাল্যকালে চন্দ্রাবতীর বন্ধু ও খেলার সঙ্গী ছিলেন অনাথ বালক জয়ানন্দ। ফুলেশ্বরী নদীর এপারে পল্লীতে চন্দ্রাবতীর বাস আর ওপারে সুন্ধা গ্রামে জয়ানন্দের পিতৃবসতি। অনাথ জয়ানন্দ পালিত হতে থাকেন মাতুলালয়ে। চন্দ্রাবতীর বাড়ির পাশে পুকুরপাড়ে ফুলবাগানে পূজার ফুল তোলার সময় জয়ানন্দের সঙ্গে তার পরিচয় ও সখ্যতা গড়ে ওঠে; ক্রমে প্রণয়। অবশেষে দু’জনের পরিণয়ের দিনটিও পারিবারিকভাবে চূড়ান্ত হয়।
ওদিকে, জয়ানন্দ স্থানীয় মুসলিম শাসক কাজীর মেয়ে আসমানীর অসামান্য রূপে মুগ্ধ হয়ে তার প্রেমে পড়েন। ত্রিভূজ এই প্রেমের ফলাফলই বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ব্যর্থ প্রেমাখ্যান।
চন্দ্রাবতীর সঙ্গে প্রণয়ের কথা জেনেও আসমানী জয়ানন্দকে বিয়ে করতে রাজি হন। কাজী জয়ানন্দকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করে মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে দেন। একইদিনে সন্ধ্যায় চন্দ্রাবতীর সঙ্গে জয়ানন্দের বিয়ের লগ্ন স্থির ছিল। চন্দ্রাবতী কনে সেজে অপেক্ষায় থাকলেও আসেননি জয়ানন্দ। পরে চন্দ্রাবতী খবর পান তার প্রেমিক আসমানীকে বিয়ে করেছে। ঘটনার আকস্মিকতায় চন্দ্রাবর্তী বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
নয়ানচাঁদের ভাষায়-
‘না কাঁদে না হাসে চন্দ্রা নাহি কহে বাণী
আছিল সুন্দরী কন্যা হইল পাষাণী
মনেতে ঢাকিয়া রাখে মনের আগুনে
জানিতে না দেয় কন্যা জ্বলি মরে মনে’
এরপর থেকে শুরু চন্দ্রবর্তীর বেদনাবিধুর দিন। শোক ভুলতে তিনি বাবার কাছে অনুমতি চান চিরকুমারী থেকে নিজেকে শিবের সাধনায় নিবেদন করবেন। মেয়ের দুখ ভোলাতে বাবা ফুলেশ্বরীতীরে বৃহৎ আকারের শিবমন্দির তৈরি করে দেন। যা এখনও চন্দ্রাবতীর স্মৃতি নিয়ে কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে।
ওদিকে, বিয়ের কিছুদিন পরে জয়ানন্দ বুঝতে পারেন আসমানীর প্রতি তার প্রেম ছিল মূলত মোহ। কোথাও কোথাও বলা হয়েছে, অনুতপ্ত হয়ে জয়ানন্দ চন্দ্রবতীকে চিঠিও লেখেন।
‘শিশু কালের সঙ্গী তুমি যৌবন কালের মালা
তোমারে দেখিতে মন হৈয়াছে উতলা’
..........................
‘ভাল নাহি বাস কন্যা এ পাপিষ্ঠ জনে
জন্মের মতন হইলাম বিদায় ধরিয়া চরণে
একবার দেখিয়া তোমা ছাড়িব সংসার
কপালে লিখেছে বিধি মরণ আমার’
চিঠি পড়ে চন্দ্রাবতীর সমস্ত অভিমান ও ক্ষোভ টুটে যায়। তিনি বাবার কাছে এর সমাধান চান। দ্বিজ বংশীদাস মেয়েকে সান্ত্বনা দেন-
‘তুমি যা লইয়াছ মাগো সেই কাজ কর
অন্য চিন্তা মনে স্থান নাহি দিও আর’
নয়ানচাঁদের ভাষ্যে, অনুশোচনায় দগ্ধ জয়ানন্দ চন্দ্রাবতীর কাছে ফিরে যেতে মনস্থ করেন। একদিন গোধুলীলগ্নে চন্দ্রাবতীর মন্দিরে গিয়ে দাঁড়ান অনুতপ্ত জয়ানন্দ। তখন মন্দিরের ভেতর সন্ধ্যাপূজায় মগ্ন ছিলেন চন্দ্রাবতী। জয়ানন্দ মন্দিরের বাইরে দাঁড়িয়ে চন্দ্রাবতীকে ডেকে হয়রান হলেও ধ্যানমগ্ন চন্দ্রাবতীর কানে প্রেমিকের সে আর্তনাদ পৌঁছেনি।
‘দ্বার খোল চন্দ্রাবতী দেখা দাও আমারে
না ছুঁইব না ধরিব দূরে থ্যাকা খাড়া
ইহ জন্মের মতন কন্যা দেও মোরে সাড়া
দেব পূজার ফুল তুমি গঙ্গার পানি
আমি যদি ছুঁই কন্যা হইবা পাতকিনী’
প্রেমিকার সাড়া না পেয়ে জয়ানন্দ তখন মন্দির লাগোয়া লালবর্ণের সন্ধ্যামালতী ফুল দিয়ে মন্দিরের দরজার চার ছত্রের একটি পদ লিখে ভগ্ন মনোরথে ফিরে আসেন।
জয়ানন্দ ফিরে যাবার অনেক পরে মন্দির থেকে বেরিয়ে চন্দ্রাবতী দেবালয় কলুষিত হয়েছে মনে করে তা পরিষ্কার করতে ফুলেশ্বরীতে যান পানি আনতে। নদীতীরে গিয়েই তিনি নদীতে ডুবে আত্মাহুতি দেয়া প্রেমিকের নিথর দেহ ভাসতে দেখেন। জয়ানন্দের আত্মহত্যা তাকে এতটাই ব্যথিত করে যে তখনই ফুলেশ্বরীর পানিতে নিজেও ডুবে মরেন অভাগী চন্দ্রাবতী।
অন্যমতে, জয়ানন্দের মৃত্যুর অল্প কিছুদিন পরই শোকাভিভূত চন্দ্রাবতীরও স্বাভাবিক মৃত্যু হয়।
জয়ানন্দের সুদ্ধা গ্রাম বা ফুলেশ্বরী কোনো কিছুরই এখন আর চিহ্নমাত্র নেই। তবে টিকে আছে পাতুয়ারী আর চন্দ্রাবতীর শিবমন্দির। জনশ্রুতি রয়েছে, পাশের ছোট মন্দিরটি দ্বিজ বংশীদাসের। বর্তমানে চন্দ্রাবতীর মন্দিরের পাশে তার স্মরণে একটি খোলা মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। তার স্মৃতিতে মন্দির লাগোয়া মাঠে চন্দ্রাবতীর নামে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
চন্দ্রাবতীর মন্দিরটি অষ্টাকোণাকৃতির। প্রতি কোনার প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য এক দশমিক সাত মিটার। নিচের ধাপে একটি কক্ষ ও একটি দরজা রয়েছে। মন্দিরের ভেতরের নিচের অংশটি দুই ধাপে নির্মিত। নিচের ধাপটি প্রায় অর্ধবৃত্তাকার খিলানের সাহায্যে নির্মিত। এতে প্রশস্ত কুলঙ্গি রয়েছে। এই ধাপের কার্ণিশ পর্যন্ত উচ্চতা দুই দশমিক সাত মিটার। কক্ষের ভেতরে সাতটি জানালার মতো কুলঙ্গি রয়েছে। যার প্রস্ত ৫২ সেন্টিমিটার এবং দৈর্ঘ্য ৯৯ সেন্টিমিটার। দ্বিতীয় ধাপটি সরলরেখায় নির্মিত। এটি অর্ধবৃত্তাকার খিলান দিয়ে তৈরি ও প্রশস্ত কুলঙ্গি রয়েছে। মন্দিরের চূড়ায় রয়েছে খাঁজকাটা কারুকাজ।
১৯৮৭ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মন্দির দু’টি সংস্কার করে। পরে পর্যটকদের জন্য বিশ্রাম ছাউনি তৈরি করা হয়। কিন্তু এরপর থেকে এর রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেই-মন্দিরের বহিরাবরণ আর ধ্বংস হতে বসা নীলকান্তর ভবনটি সে সাক্ষ্য দেয়। জাদুঘর ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ‘মন্দিরটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সম্পত্তি’ সাইনবোর্ড পুঁতেই তাদের দায় সেরেছে।
চন্দ্রাবতী ও তার সৃষ্টি অমর লোকগাঁথা আধুনিককালের পাঠকদের সামনে তুলে আনার মূল কৃতিত্ব ‘মৈমনসিংহ গীতিকার’ সংগ্রাহক চন্দ্রকুমার দের। ১৯১৩ সালে তৎকালীন ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত মাসিক পত্রিকা ‘সৌরভ’র ফাল্গুন সংখ্যায় ‘মহিলা কবি চন্দ্রাবতী’ শীর্ষক নিবন্ধ লেখেন তিনি। ওই নিবন্ধ পড়ে চন্দ্রাবতী সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠেন দীনেশচন্দ্র সেন। পরবর্তীতে দীনেশচন্দ্র সেন ও চন্দ্রকুমার দে যৌথভাবে লোকমুখে ছড়িয়ে থাকা চন্দ্রাবতীর পালা উদ্ধার করেন। ১৯৩২ সালে দীনেশচন্দ্র সেন প্রকাশ করেন চন্দ্রাবতীর ‘রামায়ণ’।
চন্দ্রাবতীর কালজয়ী আরো দুই সৃষ্টি মলুয়া ও দস্যু কেনারামের পালা। কালজয়ী এই কবির লেখা পৃথিবীর একাধিক ভাষায় অনুদিত হয়েছে। তাকে নিয়ে রচিত হয়েছে নাটক, পালা ও চলচ্চিত্র। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য নানাভাবেই তার কাছে ঋণী।
তবে চন্দ্রাবতী কিংবদন্তী হয়েছেন বাবার আদেশে রামায়ণ লিখে। তিনিই রামায়ণের প্রথম নারী রচয়িতা। তার শ্রেষ্ঠ এ রচনার ভূমিকাতে নিজের পরিচয়ে বলেছেন-
‘ধারাস্রোতে ফুলেশ্বরী নদী বহি যায়
বসতি যাদবানন্দ করেন তথায়
ভট্টাচার্য্য বংশে জন্ম অঞ্জনা ঘরণী
বাঁশের পাল্লায় তাল-পাতার ছাউনী’
কিন্তু ১৬০০ সালে মাত্র ৫০ বছর বয়সে মৃত্যুর ফলে রামায়ণ কাব্যের সীতার বনবাসের পর আর লেখা হয়নি। মধ্যযুগের তৎকালীন রক্ষণশীল হিন্দু সমাজে তার হাতে রামায়ণ রচনা কেবল ঐতিহাসিকই নয়, বিস্ময়কর ও বৈপ্লবিক।
চন্দ্রাবতীর বড় কৃতিত্ব নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে রামায়ণ রচনা। চন্দ্রাবতী এতে রামকে নয়, মূখ্য করে তুলেছেন সীতাকে; দেবী নয় মানবী রূপে বর্ণনা করে। নারীর দৃষ্টিতে তার রামায়ণ সৃষ্টি আর সীতাকে উপস্থাপনা নিঃসন্দেহে সাহিত্যের অনন্য অলঙ্কার। তাই চন্দ্রাবতী শুধু ব্যর্থ প্রেমের কিংবদন্তী নন, তিনি বাংলা সাহিত্যেরই অন্যতম দিশারী।
চন্দ্রাবতীর রামায়ণ মূলত পালাবদ্ধ অসম্পন্ন গীতসম্ভার। তিন খণ্ডে ১৯ অধ্যায় রয়েছে এতে। প্রথম খণ্ড জন্মলীলা’য় অধ্যায় আটটি। শিরোনামহীন দ্বিতীয় খণ্ডে দু’টি অধ্যায়- সীতার বনবাসপূর্ব কাহিনী ও বনবাসকালীন কাহিনী।
তৃতীয় খণ্ডেরও কোনো নামকরণ করা হয়নি। এই খণ্ডের নয়টি অধ্যায় হলো- সীতার বনবাসের সূচনা, সীতার বিরুদ্ধে কুকুয়ার চক্রান্ত, রামের কাছে সীতার নামে কুকুয়ার মিথ্যা অভিযোগ, রাম কর্তৃক সীতাকে বনবাসে পাঠানোর সিদ্ধান্ত, সীতার বনবাস, মুনি বাল্মীকির আশ্রয়ে সীতা কর্তৃক লব ও কুশের জন্মদান, সীতা ও হনুমানের সাক্ষাৎ, রাম-হনুমানের সাক্ষাৎ এবং সীতার অগ্নিপরীক্ষা ও পাতাল প্রবেশের বর্ণনা।
চন্দ্রাবতী যতবড় কিংবদন্তী, তাকে নিয়ে সে পরিমাণ তথ্য-উপাত্ত নেই। তিনি সাহিত্যপ্রেমীদের মানসে যতখানি উদ্ভাসিত, বাংলা সাহিত্যের প্রামাণ্য ইতিহাসে তাকে নিয়ে ততবেশি উদাসীনতা। সত্য এই, আমাদের লোকসাহিত্যে চন্দ্রাবতীর যে স্থান পাওনা ছিল, আমরা তাও দিতে পারিনি।
৫০০ বছর আগে, ফুলেশ্বরীর এই অজোপাড়াগাঁয়ে কতখানি প্রতিভা নিয়ে চন্দ্রাবতী উদ্ভাসিত হয়েছিলেন, তা ভাবতে গিয়ে বিষম খেলাম। অথচ সাহিত্যের রেনেসাঁ-উত্তরকালেও আমাদের সাহিত্য, কিংবা আড্ডায় তিনি নিদারুণ উপেক্ষিত। এমনকি, বাংলার প্রথম নারী কবি, প্রকৃত নারীবাদের দিশারী হলেও বর্তমানে নারী-স্বাধীনতা, নারী-অধিকার ও নারী-মুক্তি নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের অনেকের কাছেও চন্দ্রাবতী অনাবিষ্কৃত।
সফরসূচিতে আরো অনুষজ্ঞ থাকায় বিকেল গড়ানোর আগেই ফেরার পথ ধরলাম। মন্দির লাগোয়া রাস্তার মোড় পেরুতেই সামনের পুকুরে মন্দিরের প্রতিবিম্ব স্পষ্ট হয়ে উঠলো। মানসচক্ষে দেখতে পেলাম পুকুরপাড়ে ফুল তোলায় ব্যস্ত চন্দ্রাবতী-জয়ানন্দ;
‘চাইরকোণা পুস্কুনির পারে চম্পা নাগেশ্বর
ডাল ভাঙ্গ পুষ্প তুল কে তুমি নাগর
আমার বাড়ী তোমার বাড়ী ঐ না ঐ না নদীর পার
কি কারণে তুল কন্যা মালতীর হার’
-কবি ও ব্যাংকার
nabokobi@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১০০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৮
এসআই