সম্প্রতি যারাই যাচ্ছেন জেলা প্রশাসকের বাসভবনে তারাই সৌন্দর্যে বিমোহিত হচ্ছেন।
তাদের মতে, এর আগে বাহারি ফুল ও ফলের গাছ দিয়ে এত সুন্দরভাবে কেউ সাজিয়ে তুলতে পারেননি জেলা প্রশাসকের বাসভবন এলাকাটি।
বাড়িটি পুরাতন মডেলের হলেও বর্তমানে গেট দিয়ে প্রবেশ করার পরই চোখ কপালে উঠে যাওয়ার মতো অবস্থা। যদিও গেটের বাইরে দু’পাশে বিশাল ফুলের বাগান। যা দেখে যে কেউ প্রকৃতির প্রেমে পড়ে যাবেন। তবে গেট দিয়ে প্রবেশের পর বাসভবনটির চারিপাশ ঘিরে থাকা ফুল-ফল ও বিভিন্ন সবজির গাছ দেখে মনে হবে প্রকৃতির এক অনবদ্য কাব্য গড়ে উঠেছে।
জেলা প্রশাসকের বাসভবন ঘুরে দেখা গেছে, বাসভবনের চারদিকটাতে ঘিরে গড়ে ওঠা বাগানের প্রায় প্রতিটি গাছই বাহারি রঙের ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে, ফুলগাছগুলোর ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন ধরনের ফল-শাকসবজির গাছ শোভা পাচ্ছে। যেখানে খাবারযোগ্য ফসলের সমারোহও রয়েছে। আর পুরো বাসভবনটির চারিপাশে, সুপারি-নারিকেল, কাঁঠাল, আম-আমলকীসহ বড় ধরনের বৃক্ষ যেন শোভা বাড়িয়েছে কয়েকগুণ।
বাগানের কিংবা বাংলোর দক্ষিণ দিকে রয়েছে একটি পুকুর। পুকুরে তেলাপিয়া, রুই, কাতল, মৃগেলসহ অ্যাকুরিয়ামে রাখা যায় এমন প্রজাতির মাছ যত্নেই একত্রে চাষ করা হচ্ছে। বাগানে ঘুরে বরিশাল চারুকলার সংগঠক ও বিআরইউর সাবেক সভাপতি নজরুল বিশ্বাস বলেন, এই ডাকবাংলোতে অনেকবার আসা হয়েছে, তবে এখন জেলা প্রশাসক বরিশালের দায়িত্ব নেওয়ার পর খুব একটা আসা হয় না। পহেলা ফাল্গুনের পরেদিন রাতে যখন এই বাংলোর প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করি, তখন তো আমার চোখকেই আমি বিশ্বাস করাতে পারিনি। এত সুন্দরভাবে ফুল ও ফলের গাছ লাগিয়ে বাংলোর চারদিকটা সাজানো হয়েছে, সত্যিই অকল্পনীয়। আর জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমানও দেখিয়ে দিয়েছেন ইচ্ছে থাকলে কিনা সম্ভব হয়।
নজরুল বিশ্বাস বলেন, শুধু বাগান দিয়ে শোভা বাড়ানো হয়েছে এমন নয়, বাংলোর ভেতরে পুকুরে হরেক রকমের মাছচাষও করা হয়েছে। আবার পুকুরের মধ্যে গোলঘর, বাগানের একপ্রান্তে গোলঘর অপর এক প্রান্তে উঁচুতে গাছের মধ্যে মাচা ঘর বানানো হয়েছে। যা একজন প্রকৃতিপ্রেমী না হলে কোনোদিনও সম্ভব হতো না। আর সবকিছু ছাপিয়ে দিনের বেলায় এ বাগান বাংলোবাড়ি যতটা না রূপবান, রাতের বেলা তার চেয়ে বেশি সুন্দর। তাও সম্ভব হয়েছে পুকুরে মধ্যে ঝরনা, বাহারি রঙের আলোকবাতির ঝলকানিতে।
জেলা প্রশাসনের মিডিয়া সেলের দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার সুব্রত বিশ্বাস দাস বলেন, ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান যোগদান করেন। এরপর থেকেই তিনি বাসভবনটি একটু আলাদাভাবে সাজানোর চেষ্টা করেছেন। তার এখানের বাগানে ১শ প্রজাতির গাছ রয়েছে এবং পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছও রয়েছে। আবার পুকুরের মধ্যে গোলঘর, বাগানের গাছের ভেতর মাচা ঘর সবই তার পরিকল্পনায় করা হয়েছে। বাগানের আলোকসজ্জাতেও পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে। এর মধ্যে হরেক রঙের জবা, গোলাপ, গাঁদা, পিটুনিয়া, প্যানজি, ডেন্টাস, গজানিয়া, ডালিয়া, সিলভিয়া, পপি, কসমস, জিনিয়া, জারবেরা, সূর্যমুখি, গন্ধরাজ, গ্লাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকাসহ ১শ ধরনের ফুলগাছ রয়েছে। আবার ফলের মধ্যে মাল্টা, ডালিম, আনারসসহ হরেক প্রজাতির গাছ রয়েছে। ওলকপি, ফুল-বাঁধাকপি, ব্রোকলি, ক্যাপসিকাম, গাজর, লেবু, আলু, লালশাকসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করা হয়েছে এখানে। জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, গ্রামের ছেলে বিধায় গাছ লাগানোর প্রতি আগ্রহটা ছোটবেলা থেকেই ছিলো। বাসার সবাই গাছ পছন্দ করেন। বিশেষ করে ফুলগাছের প্রতি আগ্রহটা সবার। তাই নিজের মতো করে বাগানটি তৈরির পর এখন নিজের কাছেই তো ভালো লাগছে। এই বাগানে যশোরে গদখালী, পিরোজপুরের স্বরুপকাঠী ও স্থানীয় নার্সারির গাছ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যখন বাকেরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছিলাম। তখন যে বাগান করেছিলাম তা নিজেই পরিচর্যা করতাম। কিন্তু এখন কাজের পরিধি বেড়েছে, তাই আগের মতো বাগানে সময় দিতে পারি না। তবে বাগানের আনন্দ একটু আলাদা, যেমন এখন বাগানে ভরা ফুলগুলো মনকে পুলকিত করছে সবসময়, বাসায় ঢুকতেই অন্যরকম অনুভূতি হয়। আবার যে ফসল হচ্ছে তা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কর্মচারীরা একটু একটু করে খাচ্ছি। যা নিজেদের মধ্যে একটা আন্তরিকতা সৃষ্টি করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২০
এমএস/এএটি