ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন হয়নি কামাল লোহানীর

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৯ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২০
শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন হয়নি কামাল লোহানীর

ঢাকা: দেশের প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বেশ কয়েকদিন আগে। তবে তার শারীরিক কোন উন্নতি এখনো হয়নি বলে জানিয়েছেন তার ছেলে সাগর লোহানী।

বুধবার (২০ মে) রাত ৮টার দিকে সাগর লোহানী বলেন, ফুসফুস ও কিডনির জটিলতা নিয়ে রোববার (১৭ মে) সকালে কামাল লোহানীকে রাজধানীর পান্থপথের হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে এখন অবস্থা আগের মতোই আছে।

তেমন কোন উন্নতি বা পরিবর্তন হয়নি।

তিনি জানান, বাবার ফুসফুস ও কিডনিতে সমস্যা অনেক দিনের। গত ২ মাস ধরে লকডাউনে বাবার ট্রিটমেন্ট হচ্ছিল না। তাকে হাসপাতালে নিতেও পারছিলাম না।  খুব জটিল অবস্থা। সপ্তাহখানেক আগে অবস্থা বেশ গুরুতর হয়। আমরা ওভার টেলিফোন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়িতে রেখেই তার চিকিৎসা করছিলাম। কিন্তু অবস্থা বেশ গুরুতর হয়ে পড়লে রোববার ((১৭ মে) সকালে বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করাই।

ফুসফুস ও কিডনির জটিলতা ছাড়াও হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের সমস্যাতেও ভুগছেন ৮৬ বছর বয়সী প্রবীণ এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।

কামাল লোহানীর প্রকৃত নাম আবু নাইম মোহা. মোস্তফা কামাল খান লোহানী। সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া গ্রামের খান মনতলা গ্রামে ১৯৩৪ সালের জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবার নাম সুজা লোহানী, মা রোকেয়া লোহানী। পাবনা জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন ১৯৫২ সালে। পরে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ইতি ঘটান কামাল লোহানী।

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে পাবনা জেলা স্কুলের শেষ বর্ষের ছাত্রাবস্থায় কামাল লোহানীর রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ১৯৫৩ সালে নুরুল আমিনসহ মুসলিম লীগ নেতাদের পাবনা আগমনের প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলায় পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষসহ কামাল লোহানী ও অন্যান্য সহযোদ্ধা গ্রেপ্তার হন।

১৯ বছর বয়সে প্রথমবারের মতো কারাগারে যান তিনি। মুক্ত হতে না হতেই আবার ১৯৫৪ সালে গ্রেপ্তার হন।  এই কারাবাসকালীন তিনি কমিউনিস্ট ভাবাদর্শে দীক্ষিত হন এবং আজীবন সেই আদর্শে অবিচল রয়েছেন। ১৯৫৫ সালে গ্রেপ্তার হলে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, তাজউদ্দীন আহমদ প্রমুখের সঙ্গে একই জেল কক্ষে বন্দিজীবন কাটান। সেই বন্দী দিনগুলোতে তিনি বঙ্গবন্ধুর সন্নিকটে আসেন।

১৯৬০ সালে তিনি বিয়ে করেন দীপ্তি লোহানীকে। কামাল লোহানী-দীপ্তি দম্পতির দুই কন্যা এক ছেলে। তারা হলেন সাগর লোহানী, বন্যা লোহানী ও ঊর্মি লোহানী। বেশ ক’বছর আগে দীপ্তি লোহানী প্রয়াত হয়েছেন।

ষাটের দশকের শেষ ভাগে ন্যাপের (ভাসানী) রাজনীতিতে জড়িয়ে তিনি যোগ দেন আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে। ১৯৫৮ সালে কামাল লোহানী জড়িত হয়ে পড়লেন নৃত্যশিল্পের সঙ্গে। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র শতবর্ষ পালনে পাকিস্তানি নিষেধাজ্ঞা জারি হলে ছায়ানটের নেতৃত্বে কামাল লোহানী ও হাজারো রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক কর্মী সাহসী প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।

১৯৬২ সালে কামাল লোহানী ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। পরে ১৯৬৭ সালে রাজনৈতিক আদর্শের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ক্রান্তি’ গড়ে তোলেন।

ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীর হয়ে গান গাইতেন আলতাফ মাহমুদ, শেখ লুৎফর রহমান, সুখেন্দু দাশ, আবদুল লতিফসহ প্রথিতযশা শিল্পীরা। ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে পূর্ব বাংলার শিল্পীরা যে ভূমিকা রেখেছেন, তার সঙ্গেও কামাল লোহানী সর্বতোভাবে জড়িত ছিলেন।
 
১৯৭১ সালে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে কামাল লোহানী একজন শিল্পী, একজন সাংবাদিক ও একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে কালক্ষেপণ না করে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংবাদ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশ বেতারের পরিচালকের দায়িত্ব পান।

১৯৭৫–এর ১৫ অগাস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর তিনি সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। ১৯৮১ সালে দৈনিক বার্তার সম্পাদকের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে নব উদ্যমে সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন। পরে তিনি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

কর্মজীবনে কামাল লোহানী দৈনিক মিল্লাত দিয়ে সাংবাদিকতার শুরু করেন। এরপর আজাদ, সংবাদ, পূর্বদেশ, দৈনিক বার্তায় গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। সাংবাদিক ইউনিয়নে দুই দফা যুগ্ম সম্পাদক ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতেও দুই বার মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ছায়ানটের সম্পাদক ছিলেন পাঁচ বছর।  কামাল লোহানী উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টাও।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২০
এইচএমএস/জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।