করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে দেশে বন্ধ রয়েছে সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে সংগ্রামী এই শিক্ষার্থীর ওপরেও।
কথা হলে তিনি জানান, কিছুদিন আগে বাবা মারা যাওয়ার ফলে সংসারের একটা বড় দায়িত্ব এখন তার কাঁধেই। লকডাউনে তার টিউশনি বন্ধ হয়ে গেলে বাধ্য হয়ে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা চলে যান। মাস পার হতে না হতেই মেস মালিক ভাড়ার টাকার জন্য ফোন দেওয়া শুরু করেন। কোনো রকম বুঝিয়ে এক মাসের ভাড়া বাকি রাখলেও পরের মাসের শুরুতে বাড়িওয়ালার তাগাদাতে বাধ্য হয়ে ধার-দেনা করে দুই মাসের মেস ভাড়া পাঠাতে বাধ্য হন।
মিসবাহ আহমেদ বলেন, খুব অসহায় লাগছে, জানি না যেসব বাসায় পড়াতাম সেসব বাসায় আর যেতে পারব কি-না। নিজেদের সচেতনতার জন্যই এখন অনেক পরিবার বাসায় টিউটর নিতে চাইছে না। এদিকে বাড়িতে থেকেও তেমন কোন কাজ না থাকায় পুনরায় ঢাকায় ফিরেছি কিছু একটা কাজের খোঁজে। আমাদের মতো টিউশনি করে লেখাপড়ার খরচ চালানো শিক্ষার্থীর সংখ্যা রাজধানীতে অনেক। আমরা এখন কী করব কোনোভাবেই সেই হিসাব মেলাতে পারছি না।
এমন সংকট শুধু দুই এক জনের না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা অপর শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই টিউশনি, খণ্ডকালীন চাকরি, প্রকাশনা সংস্থায় প্রুফ রিডিংসহ বিভিন্ন কাজ করে পড়াশোনার খরচ চালান। কিন্তু করোনার ছুটিতে তাদের এসব খণ্ডকালীন কাজেরও ছুটি হয়েছে। চলতি মাসের বেতনও দেয়নি অনেকে। ফলে বাড়ি ভাড়া দিতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী। যারা ঢাকায় আছেন তাদের অনেকের খাবার টাকাও শেষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় অনেক শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন এলাকায় মেস বা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হয়। তাছাড়া, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশই নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও রয়েছেন নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা। তাদের অনেকেই টিউশনি, অথবা খণ্ডকালীন চাকরি করে তাদের পড়াশোনা ও থাকা-খাওয়ার খরচ চালান।
এ অবস্থায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলেন, এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি নিজেদের প্রতিষ্ঠানের টিউশনি করে চলা শিক্ষার্থীদের তালিকা করে সহযোগিতা করেন, তাহলে তারা কিছুটা উপকৃত হবে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তার রোধে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ১৮ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এরপর অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাড়িতে চলে গেলেও, যাদের টিউশনি বা খণ্ডকালীন চাকরি আছে, তারা রয়ে যান। কিন্তু এর মধ্যে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা হয়। বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের পরিবহনও। পরে সাধারণ ছুটি কিছুটা শিথিল করলেও বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে এই শিক্ষার্থীরা পড়েছেন বিপাকে। এখন উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় থাকা খাওয়ার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
তবে যেসব শিক্ষার্থীরা ঢাকায় বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সমস্যায় আছেন, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে বলে জানিয়েছে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০২০
এইচএমএস/এমকেআর