রাজশাহী: সুন্দর মনকাড়া রাস্তা বা ফুটপাত সবখানে মেলা ভার। রাস্তা কিংবা এর চারপাশে দৃষ্টিনন্দন দেয়ালচিত্র থাকলে ওই স্থান দারুণ শৈল্পিক হয়ে উঠতে পারে।
রাজশাহী মহানগরের অভিজাত এলাকা উপশহরের ৩ নম্বর সেক্টরের সড়ক সংলগ্ন একটি দেয়ালে আঁকা হয়েছে এ চিত্র। এর উচ্চতা ১১ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ৫৯ ফুট। একটি নকশার উপর ভিত্তি করে আঁকা দেয়ালচিত্রটি দর্শনার্থীদের মধ্যে ব্যতিক্রম এক আবেদন সৃষ্টি করেছে।
এক সপ্তাহের চেষ্টায় দেয়ালচিত্রটি এঁকেছেন চিত্রশিল্পী আবুল বাশার। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি চারুকলায় এম.ফিল করছেন। প্রায় এক যুগ ধরে এ কাজ করছেন তিনি। আর তার প্রতিষ্ঠান ‘বিফাইন’ সারা দেশে কাজ করছে।
দেয়ালচিত্রটির বিষয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘উপশহরের একটি রেস্তোরাঁর দেয়ালে চিত্রকর্মটি আঁকা হয়েছে। রেস্তোরাঁ মালিক ভিন্ন আঙ্গিকে রেস্তোরাঁ সাজাতে এটি আঁকতে বলেন। সাধারণত কোনো চিত্রকর্ম একটি থিম নির্ধারণ করে আঁকা হয়। এ দেয়ালচিত্রের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো থিম নেই। মূলত শোভাবর্ধনের জন্য এর নকশা নির্ধারণ করে এটি আঁকা হয়েছে। রেস্তোরাঁর মালিক নকশা সম্পর্কে একটি ধারণা দিয়েছিলেন, সে অনুসারে দেয়ালচিত্রটি এঁকেছি। রাজশাহীতে এ প্রথম একক নকশার ওপর এতো বড় দেয়ালচিত্র আঁকা হলো। ’
সরেজমিনে ওই দেয়ালচিত্রটি দেখতে গিয়ে সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বাস চোখে পড়ে। দেয়ালচিত্রটি পথের পুরনো চেহারায় আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে। পথচারীদের অনেকেই থমকে দাঁড়িয়ে দেয়ালচিত্রটি এক পলক দেখে নিচ্ছেন। এর মধ্যে ছোট শিশুদের উচ্ছ্বাসই সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। কেউ এর সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ বিমুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন।
চিত্রশিল্পী আবুল বাশার
চিত্রশিল্পী আবুল বাশার বলেন, ‘এ কাজটি করতে পারা আমার জন্য এক ভিন্ন রকমের অর্জন। রাজশাহীবাসীর কাছ থেকে যে আন্তরিকতা ও ভালোবাসা পাচ্ছি তা আমাকে বিমোহিত করছে। ’
আবুল বাশার নিজেকে চিত্রশিল্পী নয় বরং ‘রং মিস্ত্রি’ হিসেবে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন। তার মতে, রং তুলি দিয়ে আমাদের সমাজে শিল্প রচনা করা যায় না। কেননা শিল্পের প্রতি সমাজ বরাবরই উদাসীন। শিল্পকে মূল্যায়নের যথাযথ ক্ষমতা এখনও এ সমাজে হয়ে ওঠেনি। শিল্প যে একটা পেশা সেটাও খুব কম মানুষ বোঝে। শিল্পকে বিনামূল্যে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা সর্বত্র। তাই তিনি নিজেকে রং মিস্ত্রি পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
তিনি বলেন, ‘শিল্প তো আসলে একটা কাজ। এটাই আমার জীবিকার পথ, জীবিকার উৎস। তাই নিজেকে সাধারণের কাতারে নামিয়ে সমাজের সব শ্রমজীবী মানুষের চিন্তার সঙ্গে মিশে যেতে চাই। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২০
এসএস/এফএম