ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

নিজ বসতবাড়ির ‘কীটযুক্ত আম’ মোটেই ক্ষতিকর নয়

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫২ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০২২
নিজ বসতবাড়ির ‘কীটযুক্ত আম’ মোটেই ক্ষতিকর নয় বসতবাড়ির স্থানীয় ভ্যারাইটির আমে কীট। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: চলছে মধু মাস। ফলসম্ভারে মুখর আমাদের চারপাশ।

এসব ফলসম্ভারের মাঝে ফলের রাজা হিসেবে আম পছন্দের একেবারে শীর্ষে। ছোট-বড় সবাই আম পছন্দ করে থাকেন। আমের কোনো তুলনা নেই। সব বিবেচনায় আমের জুড়ি মেলা ভার।  

নিজের বসতবাড়ি আম- সেতো স্বাদ-পুষ্টি আর আবেগ অনুভূতির বিরাট অংশ দখল করে আছে। ‘ঝড়ের দিনে মামার দেশে আম কুড়াতে সুখ’ কাব্যবিন্যাসেও আমের স্পর্শ বাঙালির চিরাচরিত সমৃদ্ধময় পারিবারিক অবিচ্ছিন্ন বন্ধনের অংশ হয়ে রয়েছে।

কিন্তু বসতবাড়ির আমে প্রায়শই বাঁধসাধে কীট বা পোকা! বাজার থেকে ক্রয় করা আম নয়, নিজ বাড়িতে পূর্বপুরুষদের লাগানো বুড়ো আম গাছের নিচ থেকে কুঁড়িয়ে আগ্রহসহকারে কাটতে গেলেই দেখা যায়, ভেতরে একটি অংশ কালো! এই ফলটি যখন কচি ছিল তখন কীট তাতে ছিদ্র করে বিশেষ মুহূর্তে ভেতরে প্রবেশ করেছে।

অর্থাৎ এই আমের ভেতর কীট বসত গড়েছিল সবার আড়ালে। ফলটি যখন পরিপূর্ণ হয় তখন ফলটি কাটলে ভেতরের বিকৃত অংশটি বের হয়ে আসে। এ দৃশ্য দেখে কেউ কেউ তখনি আমটি ছুঁড়ে ফেলে দেন। কেউ কেউ আবার কীটের কালো অংশটি কেটে পুরো আমের অন্যান্য অংশটি খেয়ে ফেলেন। বিষয়টি যার যার পছন্দের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল।  

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- আমাদের বাড়ির আবেগ অনুভূতি বা স্মৃতিবিজরিত আমগাছের এমন অল্পবিস্তর কীটময় বা পোকাচ্ছন্ন আম কী স্বাস্থ্যসম্মত?এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মৌলভীবাজার এর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারী বাংলানিউজকে বলেন, ‘নিজের গাছের আম খাওয়া দারুণ আনন্দদায়ক ব্যাপার। এটাতে দ্বিমত করার কোনো সুযোগ নেই। এমন আমগুলো স্বাস্থ্যসম্মত, মোটেই ক্ষতিকর নয়। এতেও কোনো সন্দেহ নেই। আমরা একটা জিনিস বারবার বলি – যদি প্রয়োজনীয় সময়ে স্প্রে করতে পারতো তবে এই সব পোকা বা কীটগুলো আমে থাকতো না। এটা হচ্ছে বিজ্ঞানের কথা। ’ 

আমাদের বসতবাড়িতে যে আমগুলো আছে এগুলো লোকাল ভ্যারাইটি (স্থানীয় বৈচিত্র্য)। হয়তো এগুলোতে একটু আঁশ বেশি থাকবে, হয়তো একটু টক লাগবে। আবার কোনো কোনোটা হয়তো একটু মিষ্টিও হবে। অর্থাৎ সবকিছু বিবেচনায় আমাদের বাড়ির আমগুলো সত্যি অতুলনীয়।  

দেশের অঞ্চলভিত্তিক আম উৎপাদনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের রাজশাহী, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঠাকুরগাঁও অর্থাৎ নর্থবেঙ্গলের আমের কিন্তু এতো পোকা কখনো ধরে না। কারণ সেই এলাকায় বৃষ্টিপাত অপেক্ষাকৃত কম হয়। আবহাওয়াতে ময়েশচার বা বায়ুর আদ্রতা কম থাকে, যার ফলে সেখানকার আমগুলো স্বাভাবিকভাবেই ভালো হয়। আর আমরা অবস্থান করছি দেশের ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট প্রান্তে। আমাদের এই রিজিওনটা (এলাকা) হচ্ছে বৃষ্টিবহুল। হাওর-বিল এবং প্রাকৃতিক জলাভূমিসমৃদ্ধ এই রিজিওনটা। এখানের বায়ুতে আদ্রতা সবসময় বেশি। যার ফলে আমাদের এইদিকের আমগুলোতে পোকা-মাকড় বেশি হয়ে থাকে। পোকাদমনে গাছের স্প্রে’র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা পেশাদার, অপেশাদার বা সৌখিন সব আমচাষিকেই ২ বার আম গাছে স্প্রে করতে বলে থাকি। একবার হলো- যখন আমের বোল বা মুকুল যখন আসে। আরেকবার হলো- যখন গুটিগুটি আম গাছে ধরে। অর্থাৎ গাছের আমগুলো যখন মার্বেলের মতো আকার ধারণ করে ঠিক তখনই দ্বিতীয়বার আমগাছে স্প্রে করতে হয়। তাহলে আম পরিপূর্ণ হলে আমের ভেতর যে কীট বা পোকা হয় সেটা আর হবে না।  

আমাদের স্থানীয় কৃষি অফিসগুলোতে আগ্রহীরা যোগাযোগ করলেই তাদেরকে কৃষিবিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়ে থাকে বলে জানান কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারী।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০২২
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।