এবারের ফিফা কংগ্রেসে কোনও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নেই, বিশ্বকাপের আয়োজক ঘোষণাও নয়—তবুও যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবকে ঘিরে মানবাধিকার ইস্যু এবং রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণে আলোচনায় রয়েছে এ সম্মেলন।
আজ বৃহস্পতিবার প্যারাগুয়ের আসুনসিওনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই কংগ্রেসে বড় কোনও নীতিগত সিদ্ধান্ত নেই—মূলত ২০২৫ সালের বাজেট অনুমোদন, বার্ষিক ও আর্থিক প্রতিবেদন উপস্থাপন এবং শৃঙ্খলা ও নৈতিকতা কমিটির মতো কিছু সংস্থার পুনর্নিয়োগই রয়েছে এজেন্ডায়।
বিতর্ক: মানবাধিকার পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক সংযোগ
২০২২ কাতার বিশ্বকাপের আগে যেমন বিতর্ক উঠেছিল, এবারও একই প্রশ্ন উঠছে—২০৩৪ সালের আয়োজক সৌদি আরবে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং ফেয়ারস্কয়ার সহ একাধিক মানবাধিকার সংগঠন সতর্ক করেছে ২০৩৪ বিশ্বকাপের নির্মাণকাজে যুক্ত অভিবাসী শ্রমিকদের ঝুঁকি নিয়ে।
তারা বলছে, প্রতিরোধযোগ্য দুর্ঘটনায় অনেক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে এবং পর্যাপ্ত সুরক্ষা ও ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা নেই। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সৌদি আরবে অভিবাসী শ্রমিকদের "চরম শোষণ" এর অভিযোগও তুলেছে।
এমনকি কাতারে শ্রমিকদের দুরবস্থার ক্ষেত্রেও ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনো স্পষ্টভাবে কোনও সমালোচনা মেনে নেননি। বরং তিনি সেসময় কাতারে বসবাস শুরু করেন এবং "উন্নতি"র দিকটাই তুলে ধরেন। এখন তিনি সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন।
ট্রাম্প প্রশাসন ও ২০২৬ বিশ্বকাপ
২০২৬ বিশ্বকাপের মূল আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র, যার সাথে মেক্সিকো ও কানাডাও রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতিও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইনফান্তিনো এবং ট্রাম্পের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। ইনফান্তিনো গত কয়েক মাসে ট্রাম্পের সঙ্গে ১০ বার সাক্ষাৎ করেছেন, এমনকি ট্রাম্পের অভিষেকেও উপস্থিত ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র পরপর দুটি বড় ফিফা টুর্নামেন্ট আয়োজক:
- ২০২৫ সালের ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ
- ২০২৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপ
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে সমর্থকদের যাতায়াত কতটা সহজ হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
সম্প্রতি ইউরোপ এবং লাতিন আমেরিকার কিছু পর্যটককে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার সময় জিজ্ঞাসাবাদ এবং আটক করা হয়েছে—যা উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
বিশেষ করে ইরান, এল সালভাদর, গুয়েতেমালা বা হন্ডুরাস থেকে আসা দর্শকদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
বিশ্বকাপ আরও বড় হচ্ছে?
২০২৬ বিশ্বকাপে দল সংখ্যা ৩২ থেকে ৪৮-এ বাড়ছে—এটাই চূড়ান্ত। তবে এবার নতুন করে প্রস্তাব উঠেছে ৬৪ দলের বিশ্বকাপ আয়োজনের।
এই প্রস্তাব দিয়েছে ২০৩০ সালের আয়োজক দেশগুলোর একটি, উরুগুয়ে। তাদের মতে, এতে আরও দেশ অংশ নিতে পারবে এবং বিশ্বব্যাপী ফুটবলের প্রসার ঘটবে।
তবে ইউরোপ, এশিয়া এবং উত্তর আমেরিকার অনেক সদস্য বলছে—এত বড় টুর্নামেন্ট আয়োজন করা কঠিন এবং এতে প্রতিযোগিতার মানও নষ্ট হতে পারে।
জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বার্ন্ড নুয়েনডর্ফ বলেন, “আমরা এই প্রস্তাব সমর্থন করব না, কারণ এতে বিশ্বকাপের গুণগত মান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ”
তবুও প্রস্তাবটি আলোচনা টেবিলে রয়েছে। ফিফার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “কোনও সদস্য দেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব এলে, ফিফার তা বিশ্লেষণ করাই দায়িত্ব। ”
ইনফান্তিনো এ বিষয়ে এখনও মুখ খোলেননি। তবে তিনি ৩২ দলের ক্লাব বিশ্বকাপ এবং সম্প্রতি ৪৮ দলবিশিষ্ট নারী বিশ্বকাপ অনুমোদন করেছেন—যা তার অবস্থান কিছুটা ইঙ্গিত করে।
তথ্যসূত্র- ডয়েচে ভেলে
এমএইচএম