২০২৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ফুটবলারদের স্বার্থরক্ষাকারী বৈশ্বিক সংগঠন 'ফিফপ্রো' গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে কিছু ভেন্যুতে ম্যাচ শুরুর নির্ধারিত সময় নিয়ে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায় অনুষ্ঠেয় এই টুর্নামেন্টের কয়েকটি ভেন্যুতে দুপুর বা বিকেলে ম্যাচ আয়োজন করলে ফুটবলারদের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়তে হবে।
সম্প্রতি প্রকাশিত 'ফিফপ্রো'-এর গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস সিটি, মায়ামি এবং মেক্সিকোর মন্তেরে শহরকে "চরম উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ" (extremely high risk) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে দিনের আলোয়, বিশেষ করে দুপুরে খেলা মানেই খেলোয়াড়দের জন্য তাপঘাত বা হিট স্ট্রোকের মতো ঝুঁকির মুখে পড়া।
সংগঠনটির মেডিকেল ডিরেক্টর ড. ভিনসেন্ট গাউটবার্জ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, বিশেষ করে মায়ামি বা অরল্যান্ডোর মতো শহরগুলোতে গত কয়েক বছরের আবহাওয়া বিশ্লেষণ করে বলা যায়—ওখানে দুপুরে খেলা মানেই খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্য নিয়ে বড় ঝুঁকি। প্রশ্ন হলো, আমরা কি আদৌ সেখানে দিনের বেলায় খেলা আয়োজন করা উচিত মনে করি?”
এছাড়া, আটলান্টা, ডালাস ও হিউস্টনের মতো ভেন্যুতেও উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে, যদিও সেখানে রিট্র্যাক্টেবল ছাদ ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারণে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব বলে মনে করছে 'ফিফপ্রো'।
তবে উদ্বেগ এখানেই শেষ নয়। চলতি বছরের যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ক্লাব বিশ্বকাপে দেখা গেছে গরমের সরাসরি প্রভাব। লস অ্যাঞ্জেলেসে দুপুর ১২টায় অনুষ্ঠিত চেলসি বনাম এসপেরঁস ও পিএসজি বনাম অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের ম্যাচগুলো নিয়ে 'ফিফপ্রো' বলেছে, “এই গরমে এমন ম্যাচ শুরু করা মোটেও গ্রহণযোগ্য ছিল না। ”
খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে 'ফিফপ্রো' বেশ কয়েকটি প্রস্তাবও দিয়েছে—যেমন হাফটাইম ১৫ মিনিটের পরিবর্তে ২০ মিনিট করা, যাতে খেলোয়াড়রা শরীর ঠান্ডা রাখতে ও পানি পান করতে পারেন। এছাড়া প্রতি ম্যাচে দুটি নির্ধারিত ‘কুলিং ব্রেক’-এর (৩০ ও ৭৫ মিনিটে) বদলে আরও ঘন ঘন কিন্তু ছোট বিরতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
তবে সবকিছুর পরও 'ফিফপ্র'র সাধারণ সম্পাদক অ্যালেক্স ফিলিপস স্পষ্ট করেছেন, “আমাদের হাতে ফিফাকে বাধ্য করার কোনও ক্ষমতা নেই। শুধু যুক্তি ও নৈতিক চাপ দিয়েই আমরা কাজ করি। ক্লাব বিশ্বকাপে কিছু জায়গায় ফিফা আমাদের সুপারিশ মেনেছে, কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বিশেষ করে ম্যাচ শুরুর সময় নিয়ে তারা নমনীয় হয়নি। ”
বিশ্বকাপের মূল ম্যাচসূচি চূড়ান্ত হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে ড্র অনুষ্ঠানের পর। তবে তার আগে 'ফিফপ্রো' ফিফার সঙ্গে আরও আলোচনা করবে বলে জানিয়েছে। সংগঠনটির আশঙ্কা—বাণিজ্যিক স্বার্থ, টিভি সম্প্রচারের সময়সীমা ও বৈশ্বিক দর্শকদের চাহিদার চাপে পড়ে খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি উপেক্ষিত হতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে 'ফিফপ্রো' জোর দিয়ে বলছে—টুর্নামেন্টের সফলতা তখনই আসবে, যখন খেলোয়াড়রা নিরাপদ, সুস্থ ও স্বস্তিতে খেলতে পারবেন। দুপুরের রোদের নিচে, ভয়ংকর গরমে তা সম্ভব নয়।
এমএইচএম