ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সমর্থকরা ‘গোড়া’: টাইম ম্যাগাজিন

ওয়ার্ল্ড কাপ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৯ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৪
আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সমর্থকরা ‘গোড়া’: টাইম ম্যাগাজিন

ঢাকা: ৭ জুন, বিশ্বকাপ নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়েছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের দু’দল সমর্থক। কিন্তু সে সংঘর্ষ রিওডি জেনেরিও কিংবা বুয়েন্স এইরেসের কোনো মাঠে নয়, প্রায় ১৫-১৬ হাজার কিলোমিটার দূরের শহর বরিশালে।

আর এ কাণ্ডটি ঘটিয়েছেন আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের বাংলাদেশি সমর্থকরা!

বাংলাদেশের আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের সমর্থকদের ‘গোঁড়া’ আখ্যা দিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শুরুটা এভাবেই করেছে প্রখ্যাত মার্কিন সংবাদ সাময়িকী ‘টাইম’।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মাহমুদ হাসান নামে এক ব্রাজিলিয়ান ভক্ত বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ডাইনিং রুমে বসে ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টাইন ফুটবল তারকা দিয়েগো ম্যারাডোনার করা ‘হ্যান্ড অব গড’ খ্যাত গোলকে ‘অবৈধ’ দাবি করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। তার ওই বক্তব্যে সেখানে উপস্থিত আর্জেন্টাইন সমর্থকরা প্রতিবাদ করেন। কিন্তু সেটা শেষ পর্যন্ত তীব্র সংঘর্ষে রূপ নেয়, আর এতে ১১ জন আহত হন।

টাইম’র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কেবল এখানেই শেষ নয়, এরপর ১৮ জুন লালমনিরহাটের হাতিয়াবান্ধায় আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের সমর্থকদের সংঘর্ষে মিলন হোসেন নামে এক রেস্টুরেন্টকর্মী নিহত হন।

লাতিন আমেরিকার ফুটবলের দুই জায়ান্টের প্রতি সমর্থন বাংলাদেশকে অনেক বেশিই বিশ্বকাপের উন্মাদনায় আচ্ছন্ন করে রেখেছে।

বাংলাদেশের সর্বত্র আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পতাকা ওড়ানোর কথা উল্লেখ করার সঙ্গে সঙ্গে যশোরে পতাকা ওড়ানো নিষিদ্ধের কথাও বলা হয় প্রতিবেদনে।

টাইম উল্লেখ করে, সহিংসতায়ই কেবল ফুটবল উন্মাদনা শেষ নয় এখানে। রাজধানী ঢাকায় আর্জেন্টিনার পতাকা উড়াতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েও তিনজন মারা যান।

এসব দুর্ঘটনায় নিহতদের বাংলাদেশি সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ‘বিশ্বকাপের শহীদ’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করা হয় টাইমের প্রতিবেদনে!

সাময়িকীটির প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিকের সাংবাদিক ইফতি মাহমুদ টাইমকে বলেছেন, বাংলাদেশে ব্রাজিলের সমর্থনের মূল কারণ দারিদ্র্য।

ইফতি ব্যাখ্যা করেন, ব্রাজিল দল দেখতে বাংলাদেশিদের মতো। যেমন পেলে, রোমারিও এবং নেইমাররা কালো, তেমনি বাংলাশিরাও কালো। তারাও (ব্রাজিল) দরিদ্র, আমরাও দরিদ্র।

ব্র্যাক’র গবেষক আবু আহসান’র উদ্ধৃতি দিয়ে টাইম তার প্রতিবেদনে দাবি করে, আর্জেন্টিনার সমর্থনের পেছনে রয়েছে দেশটির মানুষের ‘ঔপনিবেশবিরোধী মানসিকতা। কারণ ম্যারাডোনা ইংরেজদের হারিয়েছেন। এই ইংরেজরাই একসময় দেশটির ঔপনিবেশিক ছিল। এ কারণেই ইংলিশ তারকা ফুটবলার ডেভিড বেকহাম এখানে জনপ্রিয় নন। তাছাড়া, ম্যারাডোনাও  ‘ক্রেজি’ এবং বাংলাদেশিরাও ক্রেজি লোকজনকে ভালোবাসে!

ঔপনিবেশবিরোধী মানসিকতা থেকেই বক্সার মোহাম্মদ আলী ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের প্রতি বাংলাদেশের প্রচ্ছন্ন সমর্থন রয়েছে বলে টাইমের কাছে ব্যাখ্যা দেন আবু আহসান।

বাংলাদেশের মানুষ ফুটবল কেবল নয়, যেকোনো খেলার প্রতিই আবেগপ্রবণ। তাই বলে ব্যাখ্যাদাতাদের উদ্ধৃতি দিয়ে টাইমের ম্যাগাজিনে এদেশের ফুটবল সমর্থকদের ‘গোড়া’ বলে যে আখ্যা দেওয়া হয়েছে এবং স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে “বিশ্বকাপ শহীদ’ বলে ‍আখ্যা দেওয়া হয়’ বলে যে দাবি করা হয়েছে সেটা বেশ দৃষ্টিকটূই বলে মনে করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২২৩৯ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।