কলকাতা: ভারতের রাজস্থান, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, উড়িষ্যা, আসাম, দিল্লির মত বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোয় বাংলাভাষী শ্রমিক দেখলেই হেনস্থা করা হচ্ছে। বাংলা কথা বললেই 'বাংলাদেশি' সন্দেহে আটক করা হচ্ছে।
আগামী বুধবার(১৬ জুলাই) কলকাতার কলেজ স্কোয়ার থেকে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত মিছিলে হাঁটবেন মুখ্যমন্ত্রী। স্থানীয় সময় বেলা একটা নাগাদ মিছিল শুরু হওয়ার কথা। শুধু শহরে নয়, মমতার নির্দেশ কলকাতাসহ রাজ্যের সবকটি জেলায় এই মিছিল করবেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। মিছিল শেষে বক্তব্য রাখবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোমবার(১৪) এই মর্মে নির্দেশিকা জারি করেছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। যদিও ১৬ জুলাই দিনটি আগেই ঠিক করেছিলেন নেত্রী। তবে বঙ্গে নিম্নচাপের কারণে লাগাতার বৃষ্টির জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না শাসকদল। অবশেষে,আগামী বুধবার সর্বম্মতিভাবে ঠিক করা হয়েছে শাসকদলের পক্ষ থেকে।
আগামী ২১ জুলাই, দলনেত্রীর নেতৃত্বে তৃণমূল ঘটা করে পালন করবে‘শহীদ দিসব’। অনেকেই মনে করেছিলেন, শহীদ দিবসের মঞ্চ থেকেই ‘ভিনরাজ্যে বাঙালি নিধন’এর প্রসঙ্গ তুলতে পারেন দলনেত্রী। কিন্তু তাতে নারাজ নেত্রী। তবে মমতার এই পৃথক অনুষ্ঠান নেওয়াকে, যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
এই নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেছেন, ভিন রাজ্যে বাংলায় কথা বললেই হায়রানির শিকার হতে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের। বাংলা ভাষা বললেই অপমান? ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানোর হুমকি? এটা কি ভারত? মন্ত্রীর দাবি, এই নিয়ে বারবার কেন্দ্র সরকার এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি দেওয়ার পরেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বিজেপি। পরিবর্তে যারা এই অন্যায় করছে, তাদের মদদ দিয়ে আসছে বিজেপি শাস্তি রাজ্যগুলি। যে কারণে প্রতিবাদের নামতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। বাংলা এবং বাঙালিকে অপমানের জবাব পথে নেমেই দেবে তৃণমূল।
অপরদিকে, দিল্লির বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার ৬ জন ভারতীয়কে বাংলাদেশে পুশ ইন করা হয়েছে। এই নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আগামী ১৬ জুলাই কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। শুনানি হবে বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চে।
মোট ছ’টি প্রশ্নের জবাব অমিত শাহের মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে চেয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। সেগুলি হল, ১) দানিস ও তার স্ত্রী এবং সন্তানকে আটক করা হয়েছিল? না কি তারা নিখোঁজ?; ২) আটক করা হলে বলতে হবে, তা কোনও আদালতের নির্দেশে হয়েছে কি না?; ৩) যদি আটক করা হয়ে থাকে, তবে কেন করা হয়েছে?; ৪) আটক করার আগে কি দানিস বা তার স্ত্রীকে আটকের কারণ জানানো হয়েছিল?; ৫) দিল্লি পুলিশ বা অন্য কোনও তদন্তকারী সংস্থা কি তাদের বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত করছে? সেই কারণে গ্রেপ্তার?; ৬) এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং দিল্লির প্রশাসনের মধ্যে কি কোনও কথাবার্তা হয়েছে?
প্রসঙ্গত, গত ৯ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সাংসদ সদস্য সামিরুল ইসলামের অভিযোগ ছিল, সম্প্রতি বীরভুম জেলার মুরারই ও পাইকর থেকে দুটি পরিবারকে বাংলাদেশ বর্ডারে পুশ ইন করা হয়েছে বলে, তাদের কাছে পরিবারের তরফে অভিযোগ এসেছে। ওই দুই পরিবার হলো; পাইকর থানার অন্তর্গত সুইটি বিবি (৩৩), কুরবান শেখ (১৫), ইমাম শেখ (৫)। এবং মুরারই থানার ধীতোরা গ্রামের দানিস শেখ (২৯), সোনালী বিবি (২৬) ও সাবির শেখ (৫)। এই দুই পরিবার দিল্লিতে বহু বছর ধরে ইট ভাঙার কাজে যুক্ত।
দুই পরিবার সূত্রে খবর, গত মাসের ১৮ জুন দিল্লির কেএন কাটজু থানা এলাকায় ছ’জনকে আটক করা হয়। আটক হওয়ার পরই অভিযুক্তরা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা জানায়, বাংলাদেশি সন্দেহে তাদের আটক করেছে দিল্লি পুলিশ। দ্রুতই পরিবারের সদস্যেরা দিল্লিতে এসে যেন তাদের মুক্ত করায়।
এ কথা শোনামাত্রই পরিবারের সদস্যেরা দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেন। তারা সেখানে পৌঁছোলে থানা থেকে জানানো হয় যাদের বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করা হয়েছিল, তাদের বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গের কোথা থেকে তাদের ‘পুশ ইন’ করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনও তথ্য থানার তরফে জানানো হচ্ছে না বলেই অভিযোগ করেছেন, পরিবারের সদস্যেরা। তারপরই পরিবারের তরফে, পশ্চিমবঙ্গের শ্রম দফতরের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়।
আগামী, ১৬ জুলাই অর্থাৎ মমতার পথে নামার দিনই মামলার শুনানি রয়েছে আদালাতে। তার উপর ২০২৬ সালে মাঝামাঝি পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, আদালতকে চাপে রাখার পাশাপাশি আরও একবার ‘বাংলা ও বাঙালি’সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগাতে চাইছেন মমতা। কারণ ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগেও বাঙালি সেন্টিমেন্টই মমতা মুখ্যমন্ত্রীর আসন পাইয়ে দিতে অনেকটাই সহয়তা করেছিল।
ভিএস/এমএম