ঢাকা, বুধবার, ৩ পৌষ ১৪৩১, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

বারবার প্রকল্পের ডিজাইন পরিবর্তন, সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২৪
বারবার প্রকল্পের ডিজাইন পরিবর্তন, সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি

ঢাকা: ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতাধীন প্রকল্প গ্রহণের সময় যথাযথ সমীক্ষা এবং অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শের অভাবে অনেক প্রকল্পের কার্যপরিধি ও ডিজাইন বারবার পরিবর্তন করতে হয়েছে, ফলে সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি করেছে এবং প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত সুবিধাগুলো জনগণের কাছে পৌঁছাতে দেরি হয়েছে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতাধীন দপ্তর/সংস্থাসমূহ কর্তৃক ২০০৯ হতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়িত/বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের মূল্যায়নে এমন পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়। জুলাই ছাত্র-জনতা আন্দোলনের সফলতা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত। আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতায় বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোর দুর্নীতি, অনিয়ম, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ করণীয় মূল্যায়নের জন্য একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।

বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ২০২৪ সালের ২২ আগস্ট গঠিত চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ৯০ দিনের পর্যালোচনা শেষে প্রতিবেদন দাখিল করে। কমিটি প্রকল্পগুলোর সমাপ্তি রিপোর্ট, অডিট আপত্তি, ক্রয় কার্যক্রম এবং কর্মপরিকল্পনার অগ্রগতি পর্যালোচনা করে। তাদের বিশ্লেষণে প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা চ্যালেঞ্জ ও ব্যর্থতার দিক উঠে এসেছে, যা বিভাগের উন্নয়ন সম্ভাবনাকে সীমিত করেছে।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে প্রকল্প বাস্তবায়নে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ এবং ব্যর্থতার দিক উঠে এসেছে। প্রকল্প গ্রহণের সময় যথাযথ সমীক্ষা এবং অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শের অভাবে অনেক প্রকল্পের কার্যপরিধি ও ডিজাইন বারবার পরিবর্তন করতে হয়েছে, ফলে সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি করেছে এবং প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত সুবিধাগুলো জনগণের কাছে পৌঁছাতে দেরি হয়েছে। কিছু প্রকল্পের আর্থিক, প্রযুক্তিগত এবং অর্থনৈতিক প্রভাব সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি, যার ফলে প্রকল্পগুলো কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। অনেক প্রকল্পের অডিট আপত্তি এখনও নিষ্পত্তি হয়নি, যা আর্থিক স্বচ্ছতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। বেশ কিছু প্রকল্পের প্রকল্প সমাপ্তি রিপোর্ট জমা না দেওয়ার কারণে প্রকল্পের কার্যকারিতা নিরূপণ কঠিন হয়ে পড়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে এই চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে কমিটি বেশ কিছু কার্যকর সুপারিশ করেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, প্রকল্প গ্রহণের সময় অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ এবং সঠিক সমীক্ষার মাধ্যমে চাহিদা ও কার্যপরিধি নির্ধারণ করা উচিত। অডিট আপত্তি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের সমস্যা এড়াতে পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নিয়মিত পরিদর্শন এবং মান নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হবে। আর্থিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ভ্যাট-ট্যাক্স নিয়মিতভাবে জমা দেওয়ার পাশাপাশি প্রকল্প পরিচালকের দক্ষতা এবং স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে হবে। প্রকল্প অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গেই পরিচালকের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা জরুরি।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের উন্নয়ন কার্যক্রমের সফলতা নির্ভর করছে পরিকল্পনা, কার্যকর বাস্তবায়ন এবং আর্থিক স্বচ্ছতার উপর। কমিটির প্রতিবেদন বিভাগের উন্নয়নে একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ হিসেবে কাজ করবে।

উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এই উদ্যোগ দেশের টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোকে শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে এবং বিভাগটিকে দুর্নীতিমুক্ত ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবে। গবেষণা, নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ এবং জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বিভাগটি বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় অনন্য ভূমিকা রাখতে পারবে। অধিকন্তু ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধির এই প্রচেষ্টা জাতির অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২৪
এমআইএইচ/এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।