ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

কক্ষপথে বঙ্গবন্ধু-১ 

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৩ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৮
কক্ষপথে বঙ্গবন্ধু-১  ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে উৎক্ষেপণের ১০দিন পর কক্ষপথে পৌঁছেছে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। 

রোববার (২১ মে) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্যাটেলাইট কক্ষপথে তার অবস্থান নিয়েছে।

সাধারণত স্থিতিশীল হতে ১২ দিন সময় নেয়। আমরা আশা করছি দুই-চারদিনের মধ্যে এটি স্থিতাবস্থায় থাকবে। ’

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্য দিয়ে ও ইকুয়েডরের রাজধানী কিটো শহরের ওপর দিয়ে কক্ষপথ বরাবর এগোচ্ছে বলে স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইটের ইমেজ থেকে জানা গেছে। আর ৩৫ হাজার কিলোমিটার উপরে যাওয়ার পরই ৩৬ হাজার কিলোমিটারে কক্ষপথ শুরু হয়। তবে এখন স্যাটেলাইটের গতি ধীর, কারণ স্থিতাবস্থায় থাকার সময় হচ্ছে। এছাড়া ওয়েবসাইটে স্যাটেলাইটের অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিও স্পস্ট দেখা যাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্পের জন্য রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান ইন্টার স্পুটনিক ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ অরবিটাল স্লট লীজ ইন এর ভিত্তিতে ক্রয় করা কক্ষপথেই স্যাটেলাইটটি প্রদক্ষিণ করবে।

এদিকে, আগামী তিন মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কার্যক্রম শুরু করবে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে। এর ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য এবং বাকিগুলো ভাড়া দেওয়া হবে। এতে সরকার আশা করছে, বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ যে ১৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে সেই অর্থ সাশ্রয় হবে।

এছাড়া এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ডিটিএইচ (ডাইরেক্ট টু হোম) সেবা, স্যাটেলাইট টেলিভিশনের সম্প্রচার এবং ইন্টারনেট সুবিধাসহ ৪০টি সেবা পাওয়া যাবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে শুধু বৈদেশিক মুদ্রাই সাশ্রয় হবে না, সেই সঙ্গে অব্যবহৃত অংশ নেপাল, ভুটানের মতো দেশে এটি ভাড়া দিয়ে প্রতি বছর আয় হবে প্রায় ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বর্তমানে সম্প্রচার ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিষয়ে গবেষণার কাজের জন্য বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বছরে এক কোটি ৪০ লাখ ডলার (১১৮ কোটি টাকা) গুণতে হয়। এই স্যাটেলাইট কাজ শুরু করলে বিদেশি স্যাটেলাইট নির্ভরতা কাটিয়ে ওঠে অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের পেছনে ব্যয় হচ্ছে দুই হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক হাজার ৯০৮ কোটি টাকা বিদেশি চুক্তি এবং বাকি এক হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে সরকার।

২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকায় ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কিনতে ফ্রান্সের থালেস এলিনিয়া স্পেসের সঙ্গে চুক্তি করে বিটিআরসি।

পরে গতবছর স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে অর্থায়নের জন্য এইচএসবিসি ব্যাংকের সঙ্গে প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণচুক্তি করে সরকার।

ফ্রান্সের থ্যালেস এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্মাণ শেষে পরীক্ষা, পর্যালোচনা ও হস্তান্তরের পর বিশেষ কার্গো বিমানে করে সেটি যুক্তরাষ্ট্রের কেপ কেনাভেরালের লঞ্চ সাইটে পাঠানো হয়।

এরপর ১১ মে বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতের পর যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের ঐতিহাসিক লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯-এ থেকে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয় স্যাটেলাইটটি।

বিটিআরসি জানিয়েছে, স্যাটেলাইটটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর এর নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের গ্রাউন্ড স্টেশনে হস্তান্তর করা হবে। স্যাটেলাইটের গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায়।

থ্যালেসের বিজ্ঞানিরা গ্রাউন্ড স্টেশনে দেশের ১৮ জন তরুণকে নিয়ে স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার কাজ করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৮
এমআইএইচ/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।