ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

‘ভারতের আদালতে ভগবানও বাদী হতে পারেন’

রক্তিম দাশ. কলকাতা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০১০
‘ভারতের আদালতে ভগবানও বাদী হতে পারেন’

কলকাতা: অযোধ্যার বিতর্কিত জমি নিয়ে দায়ের করা মামলায় গত বৃহস্পতিবার এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনৌ বেঞ্চ-এর দেওয়া রায় অনেকগুলি কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। এ রায়ে ওই জমিতে হিন্দু-মুসলিম দু’তরফের সহাবস্থান নিশ্চিত করা ছাড়াও, ভগবান রাম বা রামলালাও জমির একটি অংশের জমির মালিকানা পেলেন।



এ বিষয়ে দায়ের করা বেশ কয়েকটি মামলার মধ্যে একটির আবেদনকারী ছিলেন দেওকি নন্দন আগরওয়াল। তিনি গত ২১ বছর ধরে ওই আদালতে ভগবান রাম বা ভগবান শ্রী রাম বিরাজমান বা রামলালার হয়ে সওয়াল-জওয়াব করে যাচ্ছিলেন। লখনৌ বেঞ্চ-এর রায়ে বলা যায়, অবশেষে ভগবান রাম (রামলালা) তার নিজের জন্মস্থানের ওপর অধিকার ফিরে পেয়েছেন।

তবে ভগবান কোনও মামলার আবেদনকারী হতে পারেন কিনা এই প্রশ্নের উত্তরে বিচারপতিরা বলেছেন, ‘ভগবান রামের জন্ম নিয়ে কোনও মন্তব্য না করা গেলেও ওই জমিতে ভগবান রামের আত্মার অস্তিত্ব অস্বীকার করা যায় না। ’

বিচারপতিরা আরও বলেন, ‘তাছাড়া রামলালা (মামলায় ভগবান রাম বা রামলালাকে নাবালক দেখানো হয়েছে) যেহেতু নাবালক, তার বন্ধু হিসাবে আবেদনকারী আগরওয়ালের দায়ের করা মামলাটি অবশ্যই বিচার্য। ’

ভারতীয় বিচারব্যবস্থায় ভগবানের অস্তিত্ব আইনসিদ্ধ। এর আগেও ১৯৮৩ সালে বেনারসের কাশীতে অবস্থিত বিশ্বনাথ মন্দিরের আরাধ্য দেবতা ভগবান শ্রী আদি বিশ্বেশ্বরও সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলার বাদীপক্ষ ছিলেন। তখনও তাকে নাবালক দেখিয়ে তার পে একজন মামলাটি করেছিলেন।

এদিকে এলাহাবাদ হাইকোর্টের দেওয়া রায়টি সারা ভারতবাসীর কাছে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। কারণ, অযোধ্যার বিতর্কিত জমিটির মালিকানা নিয়ে বহুবছর ধরেই দেশের প্রধান দু’টি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মাঝে বিরোধ আর অশান্তি চলছিল। ভারতের সাবেক তিন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমা রাও, ভিপি সিং ও চন্দ্রশেখর বহু চেষ্টা করেছেন আদালতের বাইরে এ বিরোধের নিষ্পত্তি করতে। কিন্তু উভয় পরে অনমনিয়তার কারণে তারা সবাই ব্যর্থ হয়েছেন।

অযোধ্যার বিতর্কিত জমি নিয়ে আদালতে প্রথম মামলাটি করেন জনৈক গোপাল সিং বিশারদ। ১৯৫০ সালে দায়ের করা ওই মামলায় অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে ভগবান রামের পূজোর ওপর নিষেধজ্ঞা চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন গোপাল সিং। একই দাবিতে কিছুদিন পরেই মামলা দায়ের করেন পরমহংস দাস। যদিও ওই মামলা পরে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

এরপর ১৯৫৯ সালে নির্মোহি আখড়া তৃতীয় মামলাটি করে। ১৯৬১ সালে উত্তরপ্রদেশের সুন্নি সেন্ট্রাল বোর্ড অব ওয়াক্ফ জমিটি কার, তার ফয়সালা চেয়ে মামলা করে। সর্বশেষ ১৯৮৯ সালের ১ জুলাই শ্রী রামলাল বিরাজমানের তথা ভগবান রামের পে মামলাটি দায়ের করা হয়।

২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে নতুন করে শুরু হওয়া এ মামলায় মোট ৯৮ জন সাক্ষী আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫৮ জন জন হিন্দু ও ৩৬ জন ছিলেন মুসলমান সম্প্রদায়ের।

তবে ঐতিহাসিক এ মামলার রায়কে বিভিন্ন মহল নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গিতে মূল্যায়ন করলেও আইন বিশেষজ্ঞসহ সব পই এই উপলব্ধি করলেন যে ‘ভগবানও ভারতের আদালতে বাদীপক্ষ হতে পারেন’। এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনৌ বেঞ্চ-এর দেওয়া রায়ে একথা অন্তত আরও একবার প্রমাণিত হল।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৪ ঘণ্টা, ৩ অক্টোবর, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।