মানার: সবার জীবন নিরাপদ করতে নিজেই ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছেন ভালমতি জেগাদাস (৩৭)। শুধু জেগাদাসই নয় শ্রীলঙ্কার হাজারো নারী ঝুঁকি নিয়ে স্থলমাইন পরিষ্কার করার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।
পদে পদে মৃত্যু ভয়। যে কোনো মুহূর্তে পুঁতে রাখা মাইনের বিস্ফোরণ ঘটে যেতে পারে। এতো ভয়, ঝুঁকি, নিরাপত্তাহীনতার পরও এই কাজই নারীদের করতে হয়। এর চেয়ে ভালো বেতনের কাজ গ্রামে থেকে পাওয়া সম্ভব নয়। জীবনের সব ঝুঁকি পেছনে ফেলে সংসারের অভাব দূর করা, একটু ভালো থাকাই প্রধান হয়ে ওঠে।
জেগাদাস বলেন, ‘গ্রামে এটাই সবচেয়ে ভালো বেতনের চাকরি। ’ তার তিন ছেলে-মেয়ে। ২০০৭ সালে গোলন্দাজ বাহিনীর আক্রমণে তার স্বামী ও মা নিহত হয়েছে। মাসপ্রতি জেগাদাসের আয় ২০০ মার্কিন ডলার।
এক বছর আগে সুইস ফাউন্ডেশন ফর মাইন অ্যাকশন-এ যোগ দেওয়ার পর থেকে তিনি ৭০০টির বেশি মাইন নিষ্ক্রিয় করেন। কয়েক দশক দরে চলা রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের সময় মাইনগুলো শত্রুপক্ষকে আঘাত করার জন্য পুঁতে রাখা হয়।
শ্রীলঙ্কার ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের পর এখানে যুদ্ধে বিধবার সংখ্যা ৯০ হাজার। পরিবার, সন্তানের দায়িত্ব আজ সেই সব নারীর কাঁধে। এজন্য প্রয়োজন অর্থ। সেকারণে জীবনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও তারা মাইন নিষ্ক্রিয় করার কাজই বেছে নিয়েছে।
সব মাইন হয়তো দুর করা সম্ভব নয়। তবে একটি মাইন নিরাপদে তুলে অকেজো করা গেলে এক থেকে ১০ জন মানুষের জীবন রা পাবে।
শ্রীলঙ্কার মাইন নিষ্ক্রিয় করার কাজে ৯০ লাখ মার্কিন ডলার বাৎসরিক বাজেট রয়েছে জাতিসংঘের। তবে চলতি বছর ২০ লাখ ডলার ঘাটতি আছে বলে জানা গেছে।
আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, লোকজন যে গতিতে গ্রামে ফিরে আসছে সেই গতিতে ওই গ্রামগুলো থেকে মাইন নিষ্ক্রিয় করার কাজ এগুচ্ছে না। এখন নারী শ্রমিকরা ভয় পাচ্ছেন, যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ সহায়তা না পাওয়া যায় তবে পুরোপুরি মাইন পরিষ্কার করা সম্ভব হয়ত হবে না।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময়: ১৪২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১০