অরুণাচল প্রদেশ: ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে বিলুপ্তপ্রায় একটি ভাষার সন্ধান পাওয়া গেছে বলে সোমবার দাবি করেছেন ভাষাবিজ্ঞানীরা। ওই ভাষাটির নাম কোরো।
ভাষাবিজ্ঞানীরা টেলিফোনে নেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ভাষাবিজ্ঞানে এ পর্যন্ত ‘কোরো’ অজানাই ছিলো। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের সহায়তায় ভাষাবিদরা ভারতের বিভিন্ন স্থানে অভিযানে বেরুলে ভাষাটি উদ্ঘাটিত হয়।
ভাষাবিদ কে. ডেভিড হ্যারিসন জানান, তিব্বতি-বার্মা ভাষার পরিবারের অংশ কোরো। প্রাথমিকভাবে তিব্বত ও বার্মাসহ পশ্চিম, মধ্য, দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ৪০০টি ভাষা এই পরিবারের অন্তভুক্ত।
পেনিসিলভ্যানিয়ার সোয়ার্থমোর কলেজের ভাষাতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর হ্যারিসন জানান, তিব্বত-বার্মা পরিবারের প্রায় ১৫০টি ভাষা ভারত জুড়ে চালু আছে। তবে ওই পরিবারের সঙ্গে এতো ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত কোনো ভাষা এর আগে পাওয়া যায়নি।
বেশিরভাগ ভাষার মতো কোরো’র কোনো লিখিত রূপ নেই, মুখে মুখেই এই ভাষা চলে আসছে। এটা হ্রুসো-আকা ভাষার আঞ্চলিক বা সহোদর কোনো রূপ নয়। যদিও হ্রুসো বা কোরো ভাষাগোষ্ঠীর লোকজন এটাই মনে করেন।
হ্যারিসন ও ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের আরেক সহকর্মী গ্রেগ অ্যান্ডারসন এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন। তাদের ওই কর্মসূচির নাম এনডিউরিং ভয়েসেস। ভাষা, সংস্কৃতির পুনরুত্থানে সহায়তা এবং বিলুপ্ত নথি সংগ্রহ করে।
এর মধ্য দিয়ে ভাষাবিজ্ঞানীদের তালিকায় কোরো নামের আরেকটি ভাষা যুক্ত হলো। এ নিয়ে তালিকায় বিশ্বের মোট ভাষার সংখ্যা দাঁড়ালো ৬,৯১০টি। হ্যারিসন তার দ্য লাস্ট স্পিকারস বইয়ে এ তথ্যগুলো উল্লেখ করেছেন।
একটি সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মাত্র ৮০০ লোক এই ভাষায় কথা বলে। যার খুব কম লোকেরই বয়স ২০ বছরের নিচে, তার মানে হলো ভাষাটি বিপদাপন্ন।
হ্যারিসন তার বইয়ে বলেন, ‘কোরো সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি দৃষ্টিভঙ্গি, ইতিহাস, পৌরাণিক কাহিনী, প্রযুক্তি ও ব্যাকরণ হাজির করে। ’
ভারতের অরুণাচল প্রদেশে দলটি ২০০৮ সালে কাজ শুরু করেন। একটি ছোট জেলায় সেখানে আকা ও মিজি ভাষা চালু আছে। বিভিন্ন অপরিচিত ভাষার সন্ধানে প্রতিটি বাড়ির দরজায় অভিযানটি চালানো হয়।
বিপদাপন্ন ভাষার জন্য জীবিত মুখ ইনস্টিটিউট নামের প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হ্যারিসন ও অ্যান্ডারসন। অরুণাচল প্রদেশে তাদের মূল কার্যক্রম। ভারতের এই রাজ্যটি ভাষার জগতের কৃষ্ণগহ্বর হিসেবে পরিচিত।
বাংলাদেশ সময়: ২১০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১০