ঢাকা: গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে নতুন রোগ চাগাস এর দ্রুত বিস্তার জনস্বাস্থ্য নিয়ে গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ রোগের এইডসের মতো খুব দ্রুত বিস্তৃতি এবং প্রায় নিরাময় অযোগ্য বলে উদ্বেগটা বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক লাইব্রেরি অব সায়েন্স প্রকাশিত চিকিৎসা বিষয়ক জার্নালের নেগলেকটেড ট্রপিক্যাল ডিজিসেস এর সম্পাদকীয়তে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, পূর্বে এইচআইভি/এইডস যেমন ছিল ঠিক তেমনি দ্রুত গতি এ রোগের বিস্তার ঘটছে। রোগটিকে তারা ‘আমেরিকার নতুন এইডস’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
জার্নালে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে প্রায় ৮০ লাখ মানুষ চাগাস রোগে আক্রান্ত হয়েছে। লাতিন ও মধ্য আমেরিকায় আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ।
চাগাস রোগটি আমেরিকান ট্রাইপ্যানোসমিয়াসিস নামেও পরিচিত। প্রতিবছর এ রোগে ২০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায় বলে জার্নালে উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, চাগাস ও এইডস রোগে আক্রান্তদের মধ্যে আশ্চর্য মিল রয়েছে। তুলনামূলকভাবে দরিদ্র দেশের মানুষ এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। আক্রান্তদের বাঁচাতে দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল চিকিৎসার প্রয়োজন হয় যা খুবই কঠিন বা কখনো অসম্ভব। আর রোগ সংক্রমণের প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা শুরু করতে না পারলে আর সারানো যায় না।
তবে এইডসের মতো যৌনবাহিত রোগ নয় চাগাস। এটা মূলত পরজীবী বাহিত রোগ। এক ধরনের রক্তচোষা পোকা মানুষের শরীরে কামড় দিলেই জীবানু সংক্রমিত হয়। এভাবে প্রথম পর্যায়ে পোকার কামড়ের মাধ্যমেই মানুষের শরীরে এ রোগ প্রবেশ করে। গর্ভবতী মায়ের শরীর থেকে শিশুর শরীরে এবং রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমেও এ রোগ ছড়াতে পারে।
জানা যায়, চাগাসের জীবাণু সংক্রমিত হওয়া লোকদের মাত্র ২০ শতাংশের অবস্থা প্রাণঘাতী পর্যায়ে পৌঁছে। আর এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেলে এ রোগ নির্মূল করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
আক্রান্তদের এক-চতুর্থাংশের ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ড অথবা অন্ত্র স্ফীত হওয়ার ঘটনা ঘটে। রোগ সংক্রমণের একেবারে শেষ ধাপে চলে গেলে এসব প্রত্যঙ্গ নিষ্ক্রিয় অথবা ফেটে গিয়ে রোগীর আকস্মিক মৃত্যু হতে পারে।
চিকিৎসকরা জানান, চাগাস প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্ত করা গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব। সেক্ষেত্রে তিন মাস অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে তীব্র মাত্রার এক ধরনের ওষুধ সেবন করার দরকার পড়ে। তবে এখানে সমস্যা হলো ওষুধগুলো অত্যন্ত বিষাক্ত।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০১২
সম্পাদনা: শামসুন নাহার ও জাহাঙ্গীর আলম, নিউজরুম এডিটর