ঢাকা: “প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করা হবে”- প্যানেট্টার এ ঘোষণার পর “অহেতুক জল ঘোলা করা থেকে বিরত থাকুন” বলে উল্লেখ করে এবার যুক্তরাষ্ট্রকেও পাল্টা সর্তক করলো চীন।
চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদসংস্থায় রোববার প্রকাশিত এক মন্তব্য প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, “এ এলাকায় কাউকেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে দেওয়া হবে না।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় অতিরিক্তি নৌবহর মোতায়েনের মার্কিন পরিকল্পনা ঘোষণার একদিন পরই চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদসংস্থা সিনহুয়ায় এ ব্যাপারে মন্তব্য করা হলো। “নট টু মেক ওয়েভস ইন সাউথ চায়না সি” শিরোনামের এক প্রতিবেদনে এ সব কথা বলা হয়।
পাশাপাশি দক্ষিণ চীন সাগর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাক গলানোতে অসন্তোষ প্রকাশ করে সিনহুয়ার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “দক্ষিণ চীন সাগরে বহিরাগত কারও অযোচিত হস্তক্ষেপ সহ্য করা হবে না। ” যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে এখানে উল্লেখ করা হয় “কোনো বংশীবাদককে এখানে স্বাগত জানানো হবে না। ”
শনিবার সিংগাপুরে অনুষ্ঠিত এক নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিও প্যানেট্টা ঘোষণা দেন, তার দেশ অদূর ভবিষ্যতে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেই তাদের নৌবহরের অধিকাংশ যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করবে। সিনহুয়ায় প্যানেট্টার এ ঘোষণারই পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানানো হলো বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি সিংগাপুরে অনুষ্ঠিত সাংগ্রি-লা সম্মেলনে অংশ নিয়ে লিও প্যানেট্টা বলেন, “বিশ্ব রাজনৈতিক মানচিত্রে ক্রমশই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে এশীয়-প্রশান্তঃমহাসাগরীয় অঞ্চল। তাই নিজেদের মিত্রদের স্বার্থ রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র আগামী ২০২০ সালের মধ্যেই এই অঞ্চলে তাদের মোট নৌশক্তির ৬০ ভাগ মোতায়েন করবে। ”
প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান চীনা প্রভাবের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবেই প্যানেট্টা এ পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করা করেন বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
স্বাভাবিকভাবেই প্যানেট্টার এই ঘোষণাকে ভালোভাবে নেয়নি চীন। তাই তার বক্তব্যের একদিন পরই রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানালো চীন। এ অঞ্চলে বহিরাগত কোনো শক্তির তৎপরতা মেনে নেবে না বলেও উল্লেখ করা হয় সেখানে।
সিনহুয়ায় বলা হয় “কারও কারও প্রতি আমাদের পরার্মশ, এ অঞ্চলের পানি ঘোলা করে মাছ শিকারের চেষ্টা থেকে বিরত থাকুন। ” পাশাপাশি এতদঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেরও সর্তক করে দেওয়া হয়। তাদের উদ্দেশ্যে বলা হয়, “কোনো বংশীবাদকের পেছনে তার বাঁশীর সুরে নাচা থেকে কারো কারো বিরত থাকা উচিৎ, কারণ এই বংশীবাদকই হয়তো তাদের বিপথে পরিচালিত করবে। ”
মূলত যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করেই “বংশীবাদক” শব্দটি উচ্চারণ করা হয়েছে এখানে। এবং কোনো সন্দেহ নেই যে এ এলাকার মার্কিন মিত্ররাষ্ট্রগুলোকেই ওই বংশীবাদকের অনুসরণকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
পাশাপাশি দক্ষিণ চীন সাগরে আগ্রাসনকারী হিসেবে চীনকে দেখানোর যে চেষ্টা চলছে তার উল্লেখ করে এগুলোকে সম্পূর্ণ কল্পিত বিষয় ও মিথ্যা প্রচারণা হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছে সিনহুয়ার ওই মন্তব্য প্রতিবেদন। দক্ষিণ চীন সাগরকে ঘিরে চীনের অবস্থানের বিষয়ে মিথ্যা প্রচারণা চলছে উল্লেখ করে সিনহুয়ায় বলা হয়, এ এলাকায় চীন সম্পর্কে যে ভীতি দাঁড় করানো হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কল্পিত প্রচারণা। সিনহুয়ায় উল্লেখ করা হয়, বেইজিংয়ের প্রকৃত ইচ্ছা হলো বৈরীতার বদলে দক্ষিণ চীন সাগরকে “বন্ধুত্ব, সহযোগিতা এবং শান্তির সাগরে” পরিণত করা।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ চীন সাগরকে ঘিরে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে সংঘাতের সম্ভাবনার ব্যাপারটিকে মাথায় রেখেই যে যুক্তরাষ্ট্র প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় নৌবহর মোতায়েনের তোড়জোর করছে তা চীনের সামরিক মহলে অজানা নয়। কারণ কৌশলগতভাবে দক্ষিণ চীন সাগর বৃহত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেরই অন্তর্গত। তাই সিনহুয়ার মাধ্যমে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে অনেকটা আগাম সর্তকতা দিয়ে রাখলো চীন।
বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর পূর্ন সার্বভৌমত্ব দাবি করছে চীন। পাশাপাশি এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশ যেমন ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, তাইওয়ান ও ফিলিপিনসহ প্রভৃতি দেশসমূহও এই সাগরের বিভিন্ন অংশের ওপর আংশিক বা সম্পূর্ণ মালিকানা দাবি করছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র রোববার আবারও ঘোষণা করেছে ছয়টি বিমানবাহী রনতরীসহ তাদের নৌবহরের অধিকাংশ যুদ্ধজাহাজকেই ২০২০ সালের মধ্যে প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলে মোতায়েন করা হবে। এশীয় প্রশান্তমহাসাগরীয় এলাকায় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে আরো দৃঢ় করার লক্ষ্যে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সুচিন্তিতভাবে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে এসময় উল্লেখ করেন প্যানেট্টা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘন্টা, জুন ০৩, ২০১২
সম্পাদনা: আহ্সান কবীর আউটপুট এডিটর