ঢাকা: বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিরূপ প্রভাব স্বচক্ষে দেখতে গত শনিবার উত্তরমেরু সফর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন।
নরওয়ের একটি গবেষণা ট্রলারে করে বিজ্ঞানী এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে উত্তরমেরুর উপকূলীয় অঞ্চলে ঘুরে এলেন হিলারি।
তবে বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে উত্তরমেরুর বরফগলা নিয়ে খুব একটা মাথাব্যাথা নেই যুক্তরাষ্ট্রের। খনিজ সম্পদের বিশাল ভাণ্ডার বরফাচ্ছাদিত এ অঞ্চলটির গুরুত্ব তাদের কাছে সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক।
বিশেষজ্ঞদের হিসাবে, আর্কটিকে প্রাকৃতিক গ্যাস ও খনিজ বাদেই শুধু তেলের মজুদ আছে ৯শ’ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যমানের। আর্কটিকের উপকূল ঘিরে অবস্থিত পাঁচটি দেশ এ সম্পদের মালিক। এ এলাকায় তাদের জন্য অভাবনীয় সৌভাগ্য অপেক্ষা করে আছে।
আর সে কারণেই বৈশ্বিক উষ্ণতা তাদের জন্য এক প্রকার আশীর্বাদ হয়েছে। জলবায়ুর উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রতি বছর বরফ ঢাকা ৪৬ হাজার বর্গকিলোমিটার পথ খুলে যাচ্ছে। আর ধারণা করা হচ্ছে খুব শিগগির এ অঞ্চলের ব্যাপক বিস্তৃত এলাকা খুলে যাবে। তেল অনুসন্ধান তো চলছেই সেই সঙ্গে উত্তরাঞ্চলী রুটের সঙ্গে পূর্ব-পশ্চিমের বাণিজ্য পথ আরো সম্প্রসারিত হবে।
তবে আর্কটিকের এ পরিবর্তনটির ব্যবস্থাপনা আর্কটিক কাউন্সিলের মাধ্যমে হোক এমনটাই চায় আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন সনদে স্বাক্ষর না করা দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এ কাউন্সিলটি একটি উপদেষ্টা গ্রুপ যার মধ্যে আর্কটিক ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দেশগুলো। আর্কটিক কাউন্সিলের সদরদপ্তর ট্রমসোনে।
এসব সম্পদের মালিকানা বণ্টনের বিষয়টি আর্কটিক কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানেই হোক তা চায় যুক্তরাষ্ট্র। হিলারিও সাংবাদিকদের তেমনটিই বলেছেন।
আর্কটিকের সম্পদ নিয়ে বিশ্বশক্তিগুলোর মধ্যে উত্তেজনার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। চীনসহ অন্যান্য দেশও আর্কটিকের বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের নেশায় উন্মুখ হয়ে আছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মত, সমুদ্র আইন অনুযায়ী আর্কটিকের বেশিরভাগ সম্পদের মালিকানা দাবি করার অধিকার আছে মাত্র পাঁচটি দেশের।
উপকূলীয় এ পাঁচটি দেশ হলো- রাশিয়া যা প্রায় অর্ধেক উপকূলের অংশীদার, এরপর আছে কানাডা, নরওয়ে, ডেনমার্ক এবং যুক্তরাষ্ট্র।
তবে আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন অনুযায়ী যেকোনো দেশ উপকূল থেকে দুইশ’ নটিকেল মাইল পর্যন্ত অর্থনৈতিক সীমার অধিকারী। এ সীমার বাইরে মহাদেশীয় শেলফ থেকে আরো দূর পর্যন্তও তারা সমুদ্র সীমা বিস্তৃত করার অধিকার রাখে।
এ পাঁচটি দেশের জন্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, তারা সবাই মিলে আর্কটিকের ৯০ শতাংশ এলাকার মালিকানা পায়। আর গভীর সমুদ্রে মধ্যাঞ্চলের ছোট এলাকা বাইরের দেশগুলোর জন্য উন্মুক্ত।
নরওয়ের দাবি অনুযায়ী এলাকা জাতিসংঘ অনুমোদন করেছে। দেশটি ইতোমধ্যে কিছু এলাকায় তেল উত্তোলন করা শুরুও করেছে।
এদিকে যথেষ্ট নথিপত্র দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় রাশিয়ার দাবি জাতিসংঘে অনুমোদন পায়নি। তবে এ বছর বা আগামী বছরেই তাদের সমস্যাটিও মিটে যাবে বলে আশা করছে রুশ কর্তৃপক্ষ।
অপরদিকে, আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইনের সনদে স্বাক্ষর করেনি যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণে অন্যদের মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত মার্কিনিদের অপেক্ষা করতে হবে। আর্কটিকের সীমানা নির্ধারণের জন্য তাদের পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে ১৫ বছর লেগে যেতে পারে।
আর্কটিক সীমার মধ্যে পড়ে না এমন অনেক দেশও এখন এ অঞ্চলে বেশ তৎপর। বরফ গলে যাওয়ায় উত্তরাঞ্চলীয় জাহাজ চলাচল পথ খুলে যাওয়ায় ইউরোপ ও এশিয়ার মাঝখানের দূরত্ব এখন ৪০ শতাংশ কমে গেছে।
এ অঞ্চলে অন্যান্য দেশের মধ্যে সবচে বড় খেলোয়াড় চীন। ইতোমধ্যে তারা গ্রিনল্যান্ড ও আইসল্যান্ডে নানা প্রস্তাব নিয়ে তৎপরতা শুরু করেছে। এখানে তাদের লক্ষ্য শুধু বিরল মৃত্তিকার মতো খনিজ ও জ্বালানি সম্পদই নয় বরং আর্কটিকে বাণিজ্য সম্প্রসারণও তাদের উদ্দেশ্য।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, আর্কটিকের ভেতর দিয়ে ইউরোপ এবং এশিয়ার মধ্যকার বাণিজ্যের ৭০ শতাংশই এক সময় চীনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে।
আর্কটিক অঞ্চলে জাহাজপথ সব সময় খোলা থাকে না বলে বর্তমানে বাণিজ্যের পরিমাণ নগণ্য। দু’বছর আগে মাত্র চারটি আর গত বছর ৩২টি বাণিজ্য জাহাজ এ পথে যাতায়াত করেছে। কিন্তু অনেক কর্মকর্তারা আশা করছেন, ২০১৩ সাল নাগাদ এ পথে ৬শ’ থেকে ৭শ’ জাহাজ চলাচল করবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০১২
সম্পাদনা: জাহাঙ্গীর আলম, নিউজরুম এডিটর