নয়াদিল্লি: ভারতশাসিত কাশ্মীরের হাজার হাজার তরুণ সহিংসতার সঙ্গে জড়িত। এর অধিকাংশই রক্তক্ষয়ী।
তবে সম্প্রতি রেজাসহ (১৭) তার আরও তিন ভাই নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়ার এ ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে।
অধিকাংশ সময়ই কাশ্মীরের এ অংশকে অশান্ত করে রাখা এসব অঘটন থেকে সেপ্টেম্বরে মুক্তি পেয়ে রেজা বলে, ‘মা-বাবা আমাদের জন্য দিল্লির টিকিট এবং থাকার ব্যবস্থা করেছেন এবং সামনের শিক্ষাবর্ষে আমাদেরকে কলেজে আবেদন করার নির্দেশ দিয়েছেন। ’ আলী রেজা বর্তমানে কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে।
রেজা জানায়, সে শ্রীনগরে তার স্কুলের কাসে প্রথম হতো এবং তার ইচ্ছা ব্যাংকিং শাখায় ক্যারিয়ার গড়ে তোলার। সে বলে, ‘সাম্প্রতিক সহিংসতায় এ বিষয়টিই পরিষ্কার হয় যে আমি যদি আমার জীবনে অর্থপূর্ণ কিছূ করতে চাই তাহলে আমাকে অবশ্যই কাশ্মীর ছাড়তে হবে। হয়তো আর কখনো ফিরে আসা হবে না। ’
‘কিন্তু ভারতের মতো শত্রু দেশের ভূখণ্ডে বাস করার কারণে শ্রীনগরে আমার স্কুলের পুরনো বন্ধুরা আমাকে অবিশ্বাসী বলছে। ’
এখানে তরুণরা মুখোশ পরে ভারতের বিরুদ্ধে স্লোগান বলে ভারতের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। স্বাধীন দেশের দাবিতে তারা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর পাথর ছোড়ে।
এর জবাবে নিরাপত্তা বাহিনী প্রায়ই গুলি ছোড়ে। আর পাল্টাপাল্টি এ আক্রমণে জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১১১ জন নাগরিকের মৃত্যু হয়, যার অধিকাংশই তরুণ শিক্ষার্থী।
স্বাধীনতাকামীদের বার বার ডাকা ধর্মঘট ও তাদের দমনে সরকারের কারফিউ জারির কারণে অধিকাংশ সময়ই কাশ্মীরের জনজীবন অচল হয়ে পড়ে। এমনকি দিনের পর দিন মানুষ ঘরে আটকা পড়ে থাকেন।
কাশ্মীরের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক মুসলিম জান বার্তাসংস্থা এএফপিকে টেলিফোনে বলেন, ‘সহিংসতার কারণে সামর্থ্যবান শিক্ষার্থীদের কাশ্মীর ছেড়ে যাওয়া উচিত। কেননা শিক্ষা এ সহিংসতার ভয়াবহ শিকার। ’
গত চার মাসের ধর্মঘট ও কারফিউয়ের কারণে এ অংশের সব স্কুল, কলেজ, সরকারি কার্যালয়, ব্যাংক এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য দোকান বন্ধ ছিলো। আর দীর্ঘসময় ঘরে বন্দী জীবন যাপন করায় তাদের মাঝে হতাশা দেখা দিচ্ছে বলে বাসিন্দারা জানায়।
সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক মির্জা রাংরেজ বলেন, ‘তাদের সবার মধ্যে ভয়াবহ হতাশা দেখা দিয়েছে। পড়ানোর সময় শিক্ষার্থীরা চিৎকার করে শান্তি ও সমতার কথা না বলার অনুরোধ জানায়। ’
‘এ গ্রীষ্মে ৯০ দিনের মধ্যে মাত্র ১০ দিন আমার স্কুল খোলা ছিলো। কিছু স্কুল শিক্ষার্থীদের কাছে ই-মেইল করে। কিন্তু অধিকাংশের বাড়িতেই কম্পিউটার নেই। তারা অলসভাবে বসে থাকে। আর সারা দিন টেলিভিশন দেখে এবং তাদের মা-বাবার কাছে সহিংসতা ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের কথা শোনে। ’
তবে এর বৈধতা দিয়ে ধমর্ঘট ও বিক্ষোভের সময়সূচি ধার্য করার দায়িত্বে থাকা সাইদ আলি গিলানি এএফপিকে বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতা চাই এবং এর জন্য কাশ্মীরের জনগণকে তাদের শিক্ষা, সম্পদ এমনকি জীবন বিসর্জন দিতে হবে। ’
১৯৫১ সালে কাশ্মীর প্রথম বাধ্যতামূলক শিক্ষার ঘোষণা দেয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি এ অঞ্চলের ভবিষ্যৎকে সুদূরপ্রসারী সমস্যায় ফেলতে যাচ্ছে।
শ্রীনগরের এক সরকারি ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘বেকারত্বকে বড় সমস্যা বলে সরকার মনে করলেও পড়াশোনা করে যোগ্য হতে না পারলে তরুণরা কিভাবে চাকরি পাবে তা তারা বলে দিচ্ছে না। ’ ‘আমার দুই ছেলে এখন পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে না। কাল তাদের কেউ চাকরি দেবে না। ’ এএফপি অবলম্বনে।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০১০