লন্ডন: ব্রিটেনের সাবেক এক মন্ত্রীকে ছুরিকাঘাত করার অভিযোগে বাঙালি এক তরুণীকে দোষী সাব্যস্ত করেছে সে দেশের একটি আদালত।
ব্রিটেনের সাবেক ট্রেজারি মিনিস্টার ও লেবার দলীয় এমপি স্টিফেন টিমসকে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ছুরিকাঘাতের অভিযোগে বাঙালি তরুণী রোশনারা চৌধুরীকে অভিযুক্ত করা হয়।
হিজাব পরিহিত বাঙালি তরুণী রোশনারা চৌধুরীর উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতের ঘটনা তখন সারা ব্রিটেন জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
এ ঘটনার পর পরই রোশনারাকে গ্রেফতার করে তদন্ত শুরু করে ব্রিটেনের পুলিশ। কয়েক মাস তদন্তের পর হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার অভিযোগ আনা হলে দুইদিন শুনানি শেষে আদালত মঙ্গলবার তাকে দোষী সাব্যস্ত করে।
লন্ডনের ওল্ডবেইলি আদালতে জাষ্টিস কুক হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ ও অবৈধভাবে দুটো অস্ত্র রাখার অপরাধে আজ বুধবার রোশনারার শাস্তি ধার্য করবেন।
তবে মঙ্গলবার শুনানির সময় অভিযুক্ত রোশনারা আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। এ সময় ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে আদালতে তার উপস্থিতি দেখানো হয়।
গ্রেফতার হওয়ার পর পরই রোশনারা তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে হত্যার উদ্দেশ্যে যে এ হামলা করেছিলেন, তা অকপটে স্বীকার করেন।
তিনি তার স্বীকারোক্তিতে বলেন, অন্যায়ভাবে ইরাকযুদ্ধের পে সমর্থন দেওয়ায় তিনি স্ট্রিফেন টিমস-এর ওপর প্রতিশোধ স্পৃহায় উপর্যুপরি ছুুরিকাঘাত করেন।
তিনি তদন্ত কর্মকর্তাদের বলেন, ‘টিমস-এর মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত আমি ছুরিকাঘাত করতেই থাকতাম, যতণ না কেউ আমাকে আটকে দিতো। ’
রোশনারার এ স্বীকারোক্তির কথা সরকার পরে আইনজীবী উইলিয়াম ভয়সি কিউসি আদালতকে জানান। আদালতে শুনানিকালে সরকারের প থেকে নিযুক্ত রোশনারার পরে আইনজীবী জেরেমি ডেইন কিউসি বলেন, ‘অভিযুক্ত রোশনারা আদালত পদ্ধতিতে বিশ্বাস করেন না এবং তার পে কোনো আইনজীবী আদালতে লড়–ক, এটাও তিনি চাননি। আর তাই, তাকে আদালতে উপস্থিত করাও সম্ভব হয়নি। ’
এর আগে তদন্ত চলাকালে পুলিশ রোশনারার ব্যাগ থেকে আরো কয়েক জন এমপির নামের একটি তালিকা উদ্ধার করে, যারা ইরাক যুদ্ধ ইস্যুতে তৎকালীন টনি ব্লেয়ার সরকারকে সমর্থন দিয়েছিলেন।
এ ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, সুযোগ পেলে রোশনারা ওই এমপিদেরও হামলা করার চেষ্টা করতেন। তার কম্পিউটার থেকে পুলিশ জানতে পারে যে, রোশনারা ইয়েমেনভিত্তিক আল-কায়েদা নেতা আল-আওলাকির আদর্শের অনুসারী ছিলেন, যিনি গত সপ্তাহে ইয়েমেন থেকে প্রিন্টার্স কার্টিজে করে ব্রিটেনের ইস্ট মিডল্যান্ড ও দুবাইতে প্রেরিত বিস্ফোরক পাঠানোর ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৪ মে, শুক্রবার পূর্ব লন্ডনের বেকটন গ্লোব লাইব্রেরিতে সাবেক মন্ত্রী স্টিফেন টিমস উপর্যুপরি হামলার শিকার হন। সাবেক লেবার মিনিস্টার টিমস এ সময় তার নির্বাচনী এলাকার জনসাধারণের সঙ্গে একটি মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছিলেন।
২১ বছর বয়সী বাঙালি তরুণী রোশনারা চৌধুরী ছুরি দিয়ে স্টিফেন টিমস-এর পেটে উপর্যপুরি আঘাত করতে থাকলে আশেপাশের লোকজন তাকে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেয়। ঘটনার পর পরই একটি মহলের প থেকে গ্রেফতারকৃত রোশনারাকে মাদকাসক্ত ও অপ্রকৃতিস্থ বলে প্রচার করার চেষ্টা করা হয়।
এদিকে, হামলার শিকার স্টিফেন টিমস শরীরের যে অংশে আঘাত করা হয়েছিল, আদালতকে সেই অংশ দেখিয়ে বলেন, ‘অভিযুক্ত রোশনারা হিজাব ও ইসলামী পোশাক পরে যখন আমার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন, তখনই আমার কিছুটা সন্দেহ হয়েছিল এই ভেবে যে, কোনো পর্দানশীল মুসলমান মহিলা তো কোনো পুরুষের সাথে এভাবে হাত মেলানোর ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারেন না। কিন্তু আমার চিন্তা পুরোপুরি শেষ হতে না হতেই রোশনারা ছুরি হাতে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করতে থাকেন।
সাবেক মন্ত্রী স্টিফেন টিমস লেবার সরকারের ট্রেজারি মন্ত্রী হিসেবে এর আগে বাংলাদেশও সফর করেছেন। অভিযুক্ত রোশনারার গ্রামের বাড়ি সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলায় বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১০