ঢাকা, সোমবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০০ জিলকদ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ভারত কি পাকিস্তানে হামলার ‘ছুতো’ খুঁজছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:০৫, এপ্রিল ২৮, ২০২৫
ভারত কি পাকিস্তানে হামলার ‘ছুতো’ খুঁজছে ছবি সংগৃহীত

গত সপ্তাহে কাশ্মীর হামলার পর, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক ডজনেরও বেশি বিশ্বনেতার সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন। দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই বিষয়ে  ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্রিফিংয়ে নয়াদিল্লিতে অবস্থিত ১০০টি দেশের দূতাবাসের কূটনীতিকরা উপস্থিত হয়েছিলেন।

তবে ভারতের উদ্দেশ্য মূলত পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা কমাতে আন্তর্জাতিক সহায়তা চাওয়া নয়। এই সম্পর্কিত আলোচনার সাথে জড়িত চারজন কূটনৈতিক কর্মকর্তার মতে, নয়াদিল্লি তাদের প্রতিবেশী ও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের জন্য একটি ভিত্তি তৈরি করছে।  

গত বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) এক ভাষণে পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সন্ত্রাসী আস্তানাগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়ার এবং কঠোর শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ে, ভারতীয় কর্মকর্তারা অতীতের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে পাকিস্তানের সমর্থনের প্রমাণ তুলে ধরেছেন বলে জানা গেছে।

বিশ্লেষক ও কূটনীতিকদের মতে, এখন পর্যন্ত দৃঢ় প্রমাণের অভাব দুটি সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত করে; হয় ভারত আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য সময় নিচ্ছে, অথবা বর্তমান বৈশ্বিক বিশৃঙ্খলার মধ্যে তারা মনে করছে তাদের পরিকল্পিত পদক্ষেপের জন্য কারও কাছে ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

২০১৯ সালে কাশ্মীরে আরও একটি সন্ত্রাসী হামলায় কয়েক ডজন ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মী নিহত হওয়ার পর দুদেশ সংঘাতে জড়িয়ে ছিল। হামলাকারীরা জইশ-ই-মুহাম্মদ নামক একটি জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্য ছিল এবং তাদের সম্পৃক্ততা স্পষ্ট ছিল। সেই ঘটনার পর ভারত পাকিস্তানে সীমান্ত পার হয়ে বিমান হামলা চালায়। তবে সেই হামলার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বিতর্ক আছে। পরে পাকিস্তান পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং একটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে নামায়, যার পাইলটকে বন্দী করা হয়।  

ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের পারমাণবিক অস্ত্র মজুত রয়েছে, তাই সামরিক সংঘর্ষ দ্রুত বড় ধরনের সংঘাতে রূপ নিতে পারে। তবে এখন ভারতের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ তুলনামূলকভাবে কম, এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তির বিকাশের সাথে সাথে ভারত আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে।

এ বিষয়ে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব অ্যাডভান্সড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর সিনিয়র ফেলো ড্যানিয়েল মার্কি বলেন, আগেরবারের তুলনায় এবার ভারত ‘কিছু নতুন’ করতে চাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। পাকিস্তানও ঘোষণা দিয়েছে, তারা ভারতের যেকোনো হামলার জবাবে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে এবং তা ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে।

মার্কি বলেন, পাল্টাপাল্টি এই প্রতিক্রিয়ার চক্র দ্রুত চলতে পারে এবং ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই নিজেদের উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা নিয়ে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ।

ভারতের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শংকর মেনন বলেন, ২০১৬ ও ২০১৯ সালের হামলার পর মোদি সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল, তাই এবারও সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া তার সামনে আর তেমন কোনো বিকল্প নেই। কারণ সরকার এমন একটি অঞ্চলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইছে, যেখানে তারা পর্যটনকেও উৎসাহিত করছে।

তবে মেনন মনে করেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই উত্তেজনা খুব বেশি হাতের বাইরে যাবে না। তিনি বলেন, আমি খুব একটা উদ্বিগ্ন নই কারণ উভয় পক্ষই একটি ‘নিয়ন্ত্রিত বৈরিতা’র অবস্থায় থাকতেই বেশ খুশি।

সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস

এমএম
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।