নয়াদিল্লি : বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বহু প্রত্যাশিত তিস্তা পানিবন্টন চুক্তি শেষ পর্যন্ত সংশোধিত আকারে ‘গ্যারান্টি ক্লজ’ ছাড়াই বাস্তবায়িত হতে চলেছে।
সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের দাবি মাফিক তিস্তার সমপরিমাণ পানি পাওয়ার প্রশ্নে কিছুটা অনিশ্চয়তা থেকে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তিস্তা পানিবন্টন চুক্তি হবে দশ বছরের অন্তর্বর্তীকালীন। বাংলাদেশের দাবি ছিল ১৫ বছরের অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি। গত সেপ্টেম্বরের খসড়া চুক্তিতে বলা হয়েছিল, ২০% পানি তিস্তার স্বাভাবিক প্রবাহের জন্য রেখে অবশিষ্ট পানি আধাআধি ভাগ করে নেওয়া হবে।
কিন্তু বর্তমানে বিশিষ্ট পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রের তিস্তা পানিসমীক্ষার রিপোর্ট খতিয়ে দেখার পর নতুন করে খসড়া চুক্তি তৈরি করা হয়েছে ২০% পানি তিস্তার স্বাভাবিক প্রবাহের জন্য রেখে বাকি পানির ৪৫% ভারত এবং ৩৫% বাংলাদেশ ভাগ করে নেবে। তিস্তার গজলডোবায় যে পানি প্রবাহিত হচ্ছে তার ভিত্তিতেই এই পানি বন্টন হবে।
উজানের ভারতীয় এলাকার ৫০ কিমি‘র মধ্যে ভারত কোনও ড্যাম নির্মাণ করবে না- চুক্তিতে এটা থাকছে। এক্ষেত্রে অবশ্য বাংলাদেশের আশঙ্কা, গজলডোবায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পৌঁছবার আগেই ভারত উজানে বিভিন্ন ব্যারাজ, বিভিন্ন নদী, শাখা নদীতে প্রচুর পানি টেনে নেবে।
এর ফলে গজলডোবায়, বিশেষ করে খরা মরশুমে পানির পরিমাণ যথেষ্ট কম থাকার কারণে বাংলাদেশ চাহিদামতো পানি পাবে না। ২০১০-এর ১৭-২০ মার্চ যৌথ নদী কমিশনের সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল দিল্লিতে। ইতিমধ্যে তিন বছর পার হয়ে গেছে। এর মধ্যে আর একবার বৈঠকের কথা থাকলেও তা অনুষ্ঠিত হয়নি।
অবশেষে ৩ বছর ৩ মাস পর ভারতের পানিসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী হরিশ রাওয়াতের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল ৩৮তম যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে বসতে চলেছে আগামী ১৭ জুন ঢাকায়। বৈঠক শেষে ভারতীয় প্রতিনিধিদল ঢাকায় বাংলাদেশের প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ভারতে ফিরবেন ২০ জুন।
ঢাকায় ১৪ সদস্যের বাংলাদেশ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে আলোচনায় বসবেন বাংলাদেশ পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশচন্দ্র সেন। আলোচনার তালিকায় বাংলাদেশের পক্ষে থাকবে তিস্তা-ফেণীর অন্তবর্তী পানিবন্টন চুক্তি, খরা মরশুমে গঙ্গার প্রবাহ বৃদ্ধিসহ ১২টি বিষয়।
মেঘালয়ের উমিও নদীতে মাউপু ড্যাম ও মাউন্ডু নদীতে মাইন্ডু ড্যাম পরিকল্পনা প্রত্যাহারের প্রস্তাবও রাখবে বাংলাদেশ। এই দুই ড্যাম প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের পরিবেশগত মারাত্মক ক্ষতি হবে বলে তাদের আশঙ্কার কথা তুলে ধরবে।
তিস্তা পানিবন্টন চুক্তিকে তালিকার শীর্ষে রেখেই আলোচনা হবে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা। কারণ, এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে উভয় দেশই আর অমীমাংসিত রাখতে আগ্রহী নয়। ১৭-২০ জুন ঢাকার ৩৮তম যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকেই বিষয়টি চূড়ান্ত হতে চলেছে বলে মনে করছে উভয় দেশের ওয়াকিবহাল মহল।
বাংলাদেশ সময় : ১২১৭ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৩
এস পি/ সম্পাদনা: এসএস