টোকিও: “প্লিজ, নিজেকে ফাঁসিতে ঝোলানোর আগে, বিষ বা বড়ি খাওয়ার আগে এক মিনিট অপেক্ষা করুন। অল্প কিছু শক্তি সঞ্চয় করে ইন্টারনেটে একটি কিক বা একটি ফোন কল করুন।
আত্মহত্যার মুহূর্ত থেকে জীবনে ফিরে আসা কোজি সুকিনো শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে এমনই বলছিলেন। জাপানে আত্মহত্যা প্রতিরোধে আয়োজিত একটি কর্মশালা ইন্টারনেটের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ পর্যবেক্ষণ করেছিলো। কর্মশালায় ১০০ জন অংশ নেয়। উল্লেখ্য, জাপাানে প্রতি বছর ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে।
কোজি সুকিনো এক সময় মারাত্মক অ্যালকোহলসেবী, অতিরিক্ত মাদক নেওয়ায় অভ্যস্ত ছিলেন, হাতের কব্জি কেটেছিলেন এবং নিজেকে ফাঁসিতে ঝোলানোরও চেষ্টা করেছিলেন। “স্টপ সুইসাইড! স্টার্টিং ফ্রম রক বাটন” নামে এই অনুষ্ঠানটি পরিচিত।
সুকিনো বলেন, “আমি কোনোভাবে বেঁচে গেছি। তবে অনেক মানুষই অতিরিক্ত মাদক নিয়ে অথবা ভবন থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, জাপানে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। বিষয়টা জাতীয় রাজনৈতিক বিতর্কেও পরিণত হয়েছে। জাপানে বার্ষিক আত্মহত্যার হার হলো প্রতি এক লাখ পুরুষে ৩৫ দশমিক ৮ জন। ব্রিটেনে এই হার ১০ দশমিক ১।
জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নাওতো কান বার বার আত্মহত্যার সংখ্যা উল্লেখ করেন এবং বলেন, তিনি তাঁর দেশ সম্পর্কে যা ভাবতেন তা ছিলো ভুল। গত রোববার উচ্চ কক্ষ পার্লামেন্টের বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি মানুষের “বিষাদগ্রস্ততা কমিয়ে” ফেলারও ঘোষণা দেন।
পরিবার ব্যবস্থার বিলোপ, সামাজিক সম্পর্ক শিথিল হয়ে যাওয়া, তরুণদের ইন্টারনেট ক্যাফেতে রাত কাটানো, বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের পার্কে রাত কাটানো ইত্যাদি জাপানের সাধারণ চিত্র। গত দুই দশক ধরে সামাজিক এই বিচ্ছিন্নতা ধীরে ধীরে সৃষ্টি হয়েছে, একই সময়ে অর্থনৈতিক মন্দাও টিকে রয়েছে।
নাওতো কান বলেন, “জাপানের অর্থনীতি গত বিশ বছর ধরে নিশ্চল হয়ে রয়েছে। এর ফলে মানুষ তাদের পুরোনো আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে এবং অস্বস্তিকর অস্পষ্ট ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা হতাশ। ”
জাপানে মানুষের মধ্যে সম্পত্তির বৈষম্য বেড়েছে। ঘরহীন মানুষ দেখা যাচ্ছে আজকাল, এই চিত্র এক সময় অত্যন্ত দুর্লভ ছিলো। অথচ জাপানের শহরগুলোতে এই চিত্র খুব সাধারণ। অল্প আয়ের তরুণের সংখ্যাও বাড়ছে।
মনোবিদ রিকা কায়ামা বলে, “জাপানের বহু মানুষ চরম খারাপ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। জীবন ধারণ করাই এখানে সবচেয়ে পরিশ্রমের কাজ। ”
হোক্কায়িদো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মাসাহিরো কান বলেন, “ ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি অর্জন ও উন্মুক্ত বাজার অর্থনীতির মূল্যবোধে পরিণত হয়েছে জাপানের সমাজ। ” এছাড়া ‘অদৃশ্য দারিদ্র্য’ রয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন অনেকেই। প্রায় সাত লাখ ৫০ হাজার মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নেই। স্কুলের শিশুরা পর্যন্ত দারিদ্রের এই আঘাত পেয়েছে।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময়: ১৩১৯ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১০