আঙ্কারা: আফগান যুদ্ধাবসানে ক্রমশ আগ্রহী হয়ে উঠছে তালেবান। আর এজন্য তারা চায় আফগান সরকারের সঙ্গে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্ততায় সমঝোতা আলোচনায় বসতে।
তালেবানের এই চাওয়াকে সমর্থন করেছেন খোদ আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই। বিশেষ করে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে তুরস্ককে বেছে নেওয়ায়। তার মতে এর জন্য প্রয়োজনে সেখানে একটি দপ্তরও খোলা যেতে পারে।
অবশ্য তুরস্ক বলছে, আফগান প্রতিনিধি ও তালেবানের সঙ্গে সমঝোতা আলোচনার মধ্যস্থতাকারী থাকার ব্যাপারেই তারা বেশি মনযোগী। তবে প্রতিনিধিত্ব দপ্তর খোলার বিষয়টি আলোচনার এজেন্ডা হিসেবে এখনও ভাবা হচ্ছে না।
সম্প্রতি ইস্তাম্বুলে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আফগান প্রেসিডেন্ট তার এই ভাবনার কথা ব্যক্ত করে বলেন, তালেবান এরই মধ্যে তাকে এ ব্যাপারে প্রস্তাবও দিয়েছে। আর তিনি সে প্রস্তাবকে ইতিবাচক চোখেই দেখছেন।
তার ভাষায়, ‘তাদের (তালেবান) প্রস্তাবটি ছিল- তুরস্ক এমন একটি নিরপেক্ষ ভ্যেনু হতে পারে যেখানে তারা নিশ্চিন্তে আলোচনা করতে পারবে। ’
ওই সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তান ও তুরস্কের প্রেসিডেন্টও উপস্থিত ছিলেন। তবে ঠিক কোনদিন সংবাদ সম্মেলনটি হয়েছে কারজাইয়ের বক্তব্যে তা স্পষ্ট নয়।
হামিদ কারজাই আরও বলেন, ‘তুরস্ক যদি এমন একটি নিরপেক্ষ ভ্যেনু হিসেবে ভূমিকা পালন করে তাহলে আলোচনার যে পথ তৈরি হয়েছে আমার সরকারের সে পথে এগোনো আরও সহজ হবে। ’
এদিকে, রোববার তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্থানীয় একটি দৈনিককে এ সম্ভাবনার কথা নাকচ করে দিয়ে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তালেবানের জন্য তুরস্কে প্রতিনিধিত্ব দপ্তর খোলার যে প্রস্তাব আসছে সে ব্যাপারে আফগান সরকারের সঙ্গে কোনো কথাই হয়নি।
একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘তুরস্কে তালেবানের প্রতিনিধিত্ব দপ্তর খোলার প্রক্রিয়াটি এখনও ধারণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে আফগান সরকার যদি এ বিষয়টিতে আলোকপাত করে সেক্ষেত্রে আমরা বিষয়টি নিয়ে ভাবতে পারি। ’
একই সঙ্গে ওই কর্মকর্তা আইনী বাধা-নিষেধের বিষয়েও তার বক্তব্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘তালেবান কোনো রাজনৈতিক দল নয়। আর এজন্য বিষয়টিতে আইনী জটিলতা রয়েছে। ’
আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যস্ততাকারীর ভূমিকায় থাকার বিষয়েই আঙ্কারা এ মুহূর্তে বেশি মনযোগী বলেও মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফে সাবেক তালেবান নেতা মোল্লাহ আব্দুল সালাম জাইফের এক সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর পরই হামিদ কারজাইয়ের এ বিষয়ে খোলাখুলি মন্তব্য করলেন।
ওই সাক্ষাৎকারে আব্দুল সালাম জাইফ নিরপেক্ষ ভ্যেনুতে প্রতিনিধিত্ব দপ্তর খোলার প্রস্তাবকে সমঝোতা আলোচনায় একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে হামিদ কারজাই বলেন, ‘আমি যদি তালেবানের কেউ হতাম সেক্ষেত্রে আলোচনার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো নিরপেক্ষ স্থান বেছে নিতাম যারা আফগানিস্তানের বিষয়ে কখনো হস্তক্ষেপ করবে না। ’
তালেবান বিশেষজ্ঞ আহমেদ রশিদ ওই দৈনিককে বলেন, সম্প্রতি তিনি অন্তত পাঁচজন বিদ্রোহী নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন যাদের প্রত্যেকেই নিরপেক্ষ অঞ্চলে দপ্তর খোলার বিষয়ে তাদের মনোবাসনা ব্যক্ত করেছেন।
নিরপেক্ষ স্থান হিসেবে তারা জার্মানি, তুরস্ক বা জাপানের মতো দেশের কথা উল্লেখ করেছেন বলেও জানান এই বিশেষজ্ঞ।
তবে টেলিগ্রাফের ওই সাক্ষাৎকারের বিষয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ গুলের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, টেলিগ্রাফের ওই সাক্ষাৎকার তিনি পড়েননি।
তবে এই প্রস্তাবকে তিনি সমর্থন করেন এমন কথা জানিয়ে বলেন, ‘আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে তার দেশ আগ্রহী। ’
তুরস্কে তালেবানের দপ্তর করার যে প্রস্তাব আসছে এ বিষয়ে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেত দাভুতোগ্লু বলেন, মন্ত্রণালয় এ ধরনের প্রস্তাবের উত্তর দেওয়ার জন্য সব সময়ই প্রস্তুত। আফগানিস্তানের শান্তির জন্য তুরস্ক সব সময়ই প্রস্তুত।
সম্প্রতি আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই দেশটিতে চলমান সহিংস পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে তালেবানের সঙ্গে আলোচনায় একটি শান্তি পরিষদ গঠন করেন। এই পরিষদ তালেবানের আলোচনায় বসাতে কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১০