এ বছরের সবচেয়ে আলোচিত সেরা ১০ ব্যক্তিত্বের তালিকা উল্লেখ করা হলো। বছরজুড়ে বিশ্বব্যাপী তাদের প্রভাব, আন্তর্জাতিক বিশ্ব এবং গণমাধ্যমে তাদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ভিত্তিতে এ তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে।
অং সান সু চি: ১৫ বছরের গৃহবন্দিত্বের অবসান শেষে গত ১৩ নভেম্বর মুক্তি পান মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি। সু চির দল দ্য ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি ১৯৮৯ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় পেলেও কখনোই দলটিকে ক্ষমতায় যেতে দেওয়া হয়নি। একইসঙ্গে নানা অজুহাতে বার বারই সু চিকে গৃহবন্দী করে রাখে দেশটির জান্তা সরকার। কিন্তু তারপরও কখনোই নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেনি সু চি। এমনকি মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য নিজের পারিবারিক জীবনও বিসর্জন দেন তিনি। তাই আমাদের চোখে এ ‘লৌহ মানবী’ চলতি বছরের প্রথম সেরা ব্যক্তিত্ব।
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ: উইকিলিকস নামের হৈ চৈ ফেলে দেওয়া ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা ও এডিটর-ইন-চিফ অস্ট্রেলীয় নাগরিক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ সম্প্রতি ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধসহ পরারষ্ট্র বিষয়ক আড়াই লাখ গোপন মার্কিন দলিল ফাঁস করে দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করা হলে তাকে হত্যা করার জোরালো সম্ভাবনা আছে বলে সম্প্রতি আশঙ্কা প্রকাশ করেন অ্যাসাঞ্জ। সুইডেনে তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা রয়েছে।
মার্ক জুকারবার্গ: সামাজিক নেটওয়ার্কের ওয়েবসাইট ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করে বিখ্যাত হয়েছেন মার্কিন কম্পিউটার বিজ্ঞানী, সফটওয়্যার নির্মাতা এবং জনসেবক মার্ক ইলিয়ট জুকারবার্গ। বর্তমানে তিনি ফেসবুকের সিইও এবং প্রেসিডেন্ট। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় ২০০৪ সালে সহপাঠী ডাস্টিন মস্কোভিটজ, এডওয়ার্ড স্যাভেরিন এবং ক্রিস হাগের সঙ্গে যৌথভাবে ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ২০১০ সালে টাইম ম্যাগাজিনের ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ বা বছরের সেরা ব্যক্তিত্বও নির্বাচিত হয়েছেন জুকারবার্গ।
ডেভিড ক্যামেরন: লেবার দলের ১৩ বছরের প্রশাসনকে হারিয়ে গত ১১ মে ক্ষমতায় আসেন যুক্তরাজ্যের করজারভেটিভ দলের প্রধান ডেভিড ক্যামেরন। যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে ৪৩ বছর বয়সী ক্যামেরনই সবচেয়ে কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী। নতুন এ প্রধানমন্ত্রী এবার বিরোধী লিবারেল ডেমোক্রেটদের সঙ্গে জোট সরকার গঠন করেন।
দিলমা রউসেফ: ১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৫৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন ব্রাজিলের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট দিলমা রউসেফ। ২০১১ সালের প্রথম দিন তিনি রাষ্ট্রের ক্ষমতা গ্রহণ করবেন। ব্রাজিলের ওয়ার্কাস পার্টির প্রধান রউসেফ দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুই ইনাসিও লুলা দ্য সিলভার একজন বিশ্বস্ত ও অনুগত ব্যক্তি। ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশের অর্থনেতিক শক্তি বৃদ্ধি করা ও ব্রাজিলকে আন্তর্জাতিক বিশ্বের সামনে তুলে ধরার লক্ষ্যে কাজ করার অঙ্গীকার করেন রউসেফ।
দিমিত্রি মেদভেদেভ: রাশিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ১ নভেম্বর কুরিল দ্বীপ পরিদর্শন করেন দিমিত্রি মেদভেদেভ। কয়েক দশক ধরে টোকিওর সঙ্গে বিরোধপূর্ণ প্রত্যন্ত এ ভূখ-ে মেদভেদেভের সফর রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের দাবিকেই জোরালো করেছে। ৪২ বছর বয়সী মেদভেদেভ রাশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী প্রেসিডেন্ট।
জুলিয়া এইলিন গিলার্ড: কেভিন রাড তার দলের সমর্থন হারিয়ে ২৪ জুন ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান। তখন অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় নেতা এবং পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী হন লেবার দলের জুলিয়া গিলার্ড। এর মধ্য দিয়ে তিনিই হন দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। ১৯৬১ সালে যুক্তরাজ্যের ওয়েলসে জন্মগ্রহণ করা গিলার্ড তার পরিবারের সঙ্গে ১৯৬৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান।
লেখ কাকজিনস্কি: রাশিয়ার স্মোলেস্কে ব্যক্তিগত বিমান বিধ্বস্ত হয়ে পোল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট কাকজিনস্কি, তার স্ত্রী ও দেশটির সরকারী কর্মকর্তাসহ মোট ৯৫ জন নিহত হন। কাতিন হত্যাকান্ডের শিকার ব্যক্তিদের ৭০তম বার্ষিকী পালনের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় এ দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি।
স্ট্যানলি অ্যালেন ম্যাকক্রিস্টাল: রোলিংস্টোন ম্যগাজিনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনের আফগাননীতি বিষয়ে খোলামেলা সমালোচনা করে আলোচনায় আসেন ন্যাটো বাহিনীর সাবেক কমান্ডার ম্যাকক্রিস্টাল। এ ঘটনার পর পরই তাকে ওয়াশিংটনে জরুরি তলব করা হয় এবং ২৩ জুলাই তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন ওবামা। এর কিছুদিন পরই আফগানিস্তানের দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হলে অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দেন এ চার তারকাখচিত জেনারেল।
স্টিভেন পল জবস: স্টিভ জবস অ্যাপেলের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন এবং একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী। ফোর্বেসের হিসাব অনুযায়ী ২০০৯ সালে তার মোট সম্পদের পরিমাণ ছিলো ৫শ ১০ কোটি ডলার যা তাকে বিশ্বের ৪৩তম ধনী ব্যক্তিতে পরিণত করে।
সিনহুয়া ও দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে নুসরাত জাহান।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘন্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১০