ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মেরকেলের ফোনে আড়ি পাতার খবর জানতেন না ওবামা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৩
মেরকেলের ফোনে আড়ি পাতার খবর জানতেন না ওবামা

ঢাকা: জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেলের ফোনে আড়ি পাতার বিষয়টি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে ২০১০ সালেই জানানো হয়েছিলো বলে জার্মানির প্রভাবশালী পত্রিকা ‘বিল্দ অ্যাম সোনতাগ’ দাবি করলেও এ কথা অস্বীকার করছে হোয়াইট হাউস।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মেরকেলের ফোনে কথিত আঁড়ি পাতার বিষয়টি ওবামার সঙ্গে আলোচনা করেনি মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসএ।



এনএসএ’র একজন মুখপাত্র সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাটির তৎকালীন প্রধান জেনারেল কেইথ আলেক্সান্ডার কখনোই কথিত আড়ি পাতার বিষয়টি ওবামার সঙ্গে আলোচনা করেননি।

‘বিল্দ অ্যাম সোনতাগ’র প্রতিবেদনের তথ্য অস্বীকার করে এনএসএ’র মুখপাত্র ভ্যানি ভিনেস রোববার রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, জেনারেল আলেক্সান্ডার ২০১০ সালে কোনোভাবেই ওবামার সঙ্গে মেরকেলের ফোনের ওপর কথিত গোয়েন্দা নজরদারির বিষয়টি আলোচনা করেননি।

তবে, কখন ওবামাকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছিল তাও বিবৃতিতে পরিষ্কার করেননি এনএসএ মুখপাত্র।

জার্মান সংবাদ মাধ্যমগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চ্যান্সেলর হওয়ার আগে ২০০২ সাল থেকেই মেরকেলের ফোনে নজরদারি চালিয়ে আসছে এনএসএ। আর এই বিষয়ে ওবামাকে জানানো হয়েছিল ২০১০ সালে।

‘বিল্দ অ্যাম সোনতাগ’র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, মেরকেলের ফোনে আড়ি পাতার বিষয়টি কেইথ আলেক্সান্ডার প্রেসিডেন্ট ওবামাকে জানানোর পর তা থামাতে না বলে, বরং অব্যাহত রাখতে  সম্মতি দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট।

সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত এসব গোপন নজরদারির সংবাদে বন্ধু রাষ্ট্র দু’টির মধ্যকার সম্পর্কে ব্যাপক টানাপোড়েন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করতে ওয়াশিংটনে শীর্ষস্থানীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছে জার্মানি।

এর আগে, গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মেরকেলের ফোনে এনএসএ গোয়েন্দা নজরদারি চালিয়ে আসছে বলে দাবি করে জার্মানির প্রভাবশালী সাময়িকী ‘ডের স্পিগেল’।

সংবাদ মাধ্যমটির দাবি, মেরকেল চ্যান্সেলর নির্বাচিত হওয়ার আগে ২০০২ সাল থেকেই তার ফোনে এনএসএ নজরদারি চালিয়ে আসছে বলে তাদের কাছে তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। ২০১৩ সাল পর্যন্ত তার ফোনে এনএসএ এ নজরদারি চালিয়ে আসছিল বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

তবে, মেরকেলের ফোনে নজরদারি কী ধরনের ছিল এ ব্যাপারটি তথ্য প্রমাণে পরিষ্কার নয় বলে স্বীকার করেছে ডের স্পিগেল।

অবশ্য, মেরকেলের কথোপকথন রেকর্ড অথবা সেটি সহজেই এনএসএ হস্তগত করে থাকতে পারে বলে জানায় সংবাদ মাধ্যমটি।

যুক্তরাষ্ট্রের এমন নজরদারির কথা ফাঁস হয়ে ‍যাওয়ার পর জার্মানিজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। গত শুক্রবার জার্মানি ও এনএসএ’র গোয়েন্দাগিরির শিকার আরেকটি রাষ্ট্র ফ্রান্স জানিয়েছে, এ বছরের শেষ নাগাদই আর কোনো ধরনের গোয়েন্দা নজরদারি চালানো হবে না মর্মে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে চায় তারা।

এর আগে, বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যম দাবি করে, মেরকেলের ফোনে নজরদারি ছাড়াও জার্মানি ও ফ্রান্সের লাখো জনগণের ফোনোকলে আড়ি পাতে এনএসএ।

এনএসএ’র গোয়েন্দাগিরির প্রতিবাদে জার্মানি-ফ্রান্সছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে বিক্ষোভ করেছেন মানবাধিকারকর্মীরা।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের একের পর এক গোপন নজরদারির কথা ফাঁস হওয়ায় একটু বেকায়দায়ই পড়ে গেছে বিশ্বের মোড়ল রাষ্ট্রটি। সবশেষে ফ্রান্স ও জার্মানির মতো বন্ধু রাষ্ট্রের ফোনে আড়ি পাতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলোর মধ্যকার সম্পর্কে টান টান অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে আঙ্গেলা মেরকেল বলেন, একবার যদি অবিশ্বাসের বীজ বপন হয় তাহলে গোয়েন্দামূলক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে।

তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বৈঠকের প্রথমদিনের শেষের দিকে জার্মানি ও ফ্রান্স যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নজরদারি নিয়ে ‘একটি ফ্রেমওয়ার্ক’ তৈরি করতে চান।

যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারি নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক ইইউর বৈঠকে ছায়া ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ওয়াশিংটনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার নিশ্চয়তা চেয়েছেন মেরকেল। আর এটি শুধু ক্ষমা চাওয়ামূলক বাক্যে নয়-এমনটিও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেছেন, এতেই ভবিষ্যত পরিষ্কার হবে..কিছু অবশ্যই পরিবর্তিত হবে এবং গুরুত্বপূর্ণভাবে।

এনএসএ মেরকেলের ফোনে আড়ি পেতেছিল মর্মে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরই বিষয়টি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে ফোনে আলাপ করেন মেরকেল।  

উল্লেখ্য, চলতি বছরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নজরদারির কথা ফাঁস করে দেন দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র সাবেক কর্মকর্তা এডওয়ার্ড স্নোডেন। এরপর থেকে নিজ দেশের লাখো ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নাগরিক, সরকারি কর্মকর্তা, কূটনীতিক ও সরকার-রাষ্ট্রপ্রধানদের ফোনো যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আড়ি পাতার খবর প্রকাশ পেতে থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৩
এইচএ/বিএসকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।