ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসএ’র আড়ি পাতা কেলেঙ্কারিতে এবার নতুন করে নাম যুক্ত হলো স্পেনের। আটলান্টিক ও ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ইউরোপীয় অঞ্চলের দেশটির সংবাদ মাধ্যমগুলো দাবি করছে, মাত্র এক মাসের মধ্যেই ৬ কোটি স্প্যানিশ ফোনোকলে আড়ি পেতেছিল এনএসএ।
এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, ৬ কোটি স্প্যানিশ ফোনোকলে যে এনএসএ আড়ি পেতে ছিল সে ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ রয়েছে তাদের হাতে। আর এই তথ্য প্রমাণগুলো মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র সাবেক কর্মকর্তা এডওয়ার্ড স্নোডেনের পক্ষ থেকেই দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বলা হচ্ছে, গত ১০ ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত স্প্যানিশ নাগরিকদের ৬ কোটি ফোনোকল, ক্ষুদে বার্তা (মেসেজ) ও ইমেইল বার্তায় নজরদারি চালায় এনএসএ। নজরদারির সময় কলার ও রিসিভারের নাম্বারের সঙ্গে লোকেশন পর্যন্ত সংগ্রহ করেছিল এনএসএ।
স্পেনের ‘এল পায়াস’ ও ‘এল মুন্দো’ নামক প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম দু’টিতে প্রকাশিত সোমবারের এই অভিযোগের ব্যাপারে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি হোয়াইট হাউস।
তবে, দেশের নাগরিক ও রাজনীতিবিদদের ওপর এনএসএ’র এই গোয়েন্দাগিরির কারণ ব্যাখ্যা করতে সোমবার বিকেলে মাদ্রিদে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে স্প্যানিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এশীয় অঞ্চলে গোয়েন্দাগিরির চেষ্টা এনএসএ’র
এদিকে, জাপানের একটি সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ২০১১ সালে ফাইবার অপটিক ক্যাবল পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ব্যক্তিগত ফোনোকলে নজরদারি চালাতে জাপানের সহযোগিতা চেয়েছিল এনএসএ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে কিয়োদো নামক সংবাদ সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে দাবি করেছে, বিশেষ করে চীনের ওপর গোয়েন্দাবৃত্তি চালাতেই যুক্তরাষ্ট্র এ ইচ্ছে প্রকাশ করেছিল। কিন্তু জাপান সে অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে।
ফরাসি ও জার্মান ফোনোকলে এনএসএ’র গোয়েন্দা নজরদারির খবর ফাঁসের পরিপ্রেক্ষিতে যখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিশেষ পরিষদ ওয়াশিংটনে দফায় দফায় বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখনই এই নতুন কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশ পেল।
ওয়াশিংটনে ইইউ’র বিশেষ প্রতিনিধিরা গোয়েন্দা নজরদারির ব্যাপারে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ ও এ ব্যাপারে তদন্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন বলে জানা গেছে।
এর আগে, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেলের ফোনোকলের ওপর ২০০২ সাল থেকে এনএসএ নরজাদারি চালিয়ে আসছে বলে দাবি করে দেশটির সংবাদ মাধ্যমগুলো। এমনকি মেরকেলের ফোনোকলে আড়ি পাতার ব্যাপারে ২০১০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকেও জানানো হয়েছিল বলে দাবি করে দেশটির প্রভাবশালী ট্যাবলয়েড পত্রিকা ‘বিল্দ অ্যাম সোনতাগ’।
অবশ্য, নজরদারি ওবামার জ্ঞাতসারে হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে রোববার রাতে বিবৃতি দিয়েছে এনএসএ ও মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউস।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ফরাসি, জার্মান এবং সবশেষে স্প্যানিশ ফোনোকলে মার্কিন গোয়েন্দা নজরদারির তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বেশ বেকায়দায়ই পড়ে গেছে বিশ্বের মোড়ল রাষ্ট্রটি। এমনকি ইউরোপীয় অঞ্চলের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গেও তাদের সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৩
এইচএ/আরআইএস