ঢাকা: মিশরের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির বিচার স্থগিত করা হয়েছে। আদালতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেন কায়রোর পুলিশ অ্যাকাডেমিতে স্থাপিত বিশেষ আদালত।
বিচার চলার সময় মুরসি বিচাকদের বলছিলেন তিনি এখনও প্রেসিডেন্ট রয়েছেন। আর এ বিচার অবৈধ।
দেশটির সেনাসমর্থিত রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, সোমবার বিকেলে এজলাসকক্ষে তোলা হলে মুরসিসহ মুসলিম ব্রাদারহুডের অন্য নেতারা বিচারের বিরুদ্ধে চেঁচামেচি শুরু করলে এ সিদ্ধান্ত নেন আদালত। এ সময় এ বিচার অবৈধ ও সেনা অভ্যুত্থান মানি না বলে স্লোগান দেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ও তার দলের নেতারা।
এর আগে সোমবার সকালে সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, বিকেল ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে শুরু হতে যাচ্ছে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির বিচার। সোমবার স্থগিত করা হলেও অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, মুরসিসহ আরও ১৪ জন মুসলিম ব্রাদারহুড নেতা ২০১২ সালে রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে বিরোধী দলের কর্মীদের হত্যা ও সহিংসতায় উস্কানির অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে মুরসিকে একটি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত অজ্ঞাত স্থানে রাখা হয়েছিল। কিন্তু বিচারক তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে কায়রোর উপকণ্ঠে তোরা কারাগার অথবা আলেজান্দ্রিয়ার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হবে।
এদিকে আদালতের সামনে ও কায়রোর বিভিন্ন জায়গায় বিচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে মুরসি সমর্থকরা। মুরসির বিচার কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে সহিংসতার আশঙ্কায় পুরো মিশরজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা গ্রহণ করেছে দেশটির সেনাসমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের অবস্থান ও ব্রাদারহুডের পাল্টা অবস্থান নিয়ে পুরো দেশটিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, মুরসিকে সকাল ১০টার দিকেই অজ্ঞাত স্থান থেকে হেলিকপ্টারে চড়িয়ে এনে কায়রোর পুলিশ অ্যাকাডেমির ভেতরে স্থাপিত একটি বিশেষ আদালতে হাজির করা হয়। তার সঙ্গে হাজির করা হয় ব্রাদারহুড নেতা এসাম এল-এরিয়ান, মোহাম্মদ এল-বেলতাগি ও আহমেদ আবদেল আতাইসহ অন্য নেতাদেরও।
সেনাবাহিনী সমর্থিত সরকার মুরসিকে বিচারের মুখোমুখি করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় দেশজুড়ে বড় ধরনের বিক্ষোভ করার হুমকি দিয়েছে এক সময়ের নিষিদ্ধঘোষিত দল ব্রাদারহুড।
ব্রাদারহুডের হুঁশিয়ারির পরিপ্রেক্ষিতে দেশজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থে কায়রোজুড়ে বাড়তি ২০ হাজার নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে ব্যারিকেড, তল্লাশি ও পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র।
সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, মুরসির বিচার শুরুর একদিন আগেই পদত্যাগ করেছেন তিন বিচারপতি। ব্রাদারহুড নেতা মোহাম্মদ বদিই ও তার দুই উপদেষ্টার বিচার চলাকালে রোববার তিন বিচারপতি এই বিচারকার্যে বিব্রত বোধ করছেন উল্লেখ করে পদত্যাগ করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, হত্যা ও সহিংসতায় উস্কানির অভিযোগ প্রমাণিত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, এমনকি মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে সাবেক প্রেসিডন্টের।
রাজনীতি বিশ্লেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, সোমবার স্থগিত হলেও পরবর্তীকালে শুরু হওয়া বিচারের মাধ্যমে সেনাবাহিনী এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নিলে আরব দেশটি আরও গভীর সঙ্কটে পড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৩/আপডেটেড: ১৯১০ ঘণ্টা
এইচএ/কেএইচকিউ/জিসিপি