ঢাকা: সোফায় বসে যারা পায়ের ওপর পা দিয়ে টিভি সেটের সামনে বসে অলস সময় কাটিয়ে থাকেন, বিশেষ করে চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত শহুরে মানুষরা- তাদের কর্মঠ হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন সুইডেনের একদল গবেষক।
গবেষকরা হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলছেন, নতুবা অকালে এই সুন্দর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হবে!
স্টকহোমের কারোলিন্সকা ইউনিভার্সিটি হসপিটালের গবেষকরা বলেন, এক্ষেত্রে অন্তত বাড়ির ছাদে কিংবা আঙিনায় ছোটখাট বাগান করলে দুঃশ্চিন্তার মাত্রা কমে যেতে পারে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক জার্নাল স্পোর্টস মেডিসিনের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪ হাজার ২৩২ জন ষাটোর্ধ ব্যক্তির ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, বাগান করা, বাড়ির ছোটখাট কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে অনেকের হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে গেছে।
১২ বছর ধরে গবেষণা শেষে সম্প্রতি প্রকাশিত এই ফলাফল প্রতিবেদনে বলা হয়, অবসরপ্রাপ্তির পর অনেক ষাটোর্ধ ব্যক্তিই অলস সময় কাটান। এ কারণে, তাদের হৃদরোগ ও স্ট্রোকসহ বিভিন্ন বার্ধক্যজনিত রোগ দেখা দেয়। এসবে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয় তাদের।
কিন্তু যারা বয়স হওয়ার পরও কিংবা চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্তির পরও বাগানের ছোটখাট চর্চায় সময় কাটিয়েছেন বা সংসারের কাজে হাত লাগিয়েছেন তাদের হৃদরোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে পরামর্শ দিয়ে বলা হয়, শরীর ও হৃদযন্ত্র সচল রাখতে কর্মঠ হওয়ার বিকল্প নেই। তবে কর্মঠ হতে গিয়ে ব্যায়ামাগারে ভর্তি হতে হবে এমনও কোনো শর্ত নেই। হালকা ধরনের কাজের ওপর থাকলেই চলবে।
গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, যারা নিয়মিত কাজের পাশাপাশি ব্যায়ামও করেন তারা শুধুই কাজ করা ব্যক্তিদের চেয়ে অনেক কম হৃদরোগের ঝুঁকিতে থাকেন। আবার যারা কাজ করেন তারা অলস ব্যক্তিদের চেয়ে অনেক কম হৃদরোগের ঝুঁকিতে থাকেন। তবে, বাড়িতে অলস সময় কাটানো ব্যক্তিরাই সবচেয়ে বেশি হৃদরোসহ স্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকেন।
গবেষণায় অংশ নেওয়া ৪ হাজার ২৩২ ব্যক্তির ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যারা কাজের ওপর ছিলেন তারা স্ট্রোক করা থেকে ২৭ শতাংশ ঝুঁকিমুক্ত হয়েছেন এবং অন্যান্য রোগের ঝুঁকি থেকে থেকে রেহাই পেয়েছেন ৩০ ভাগ।
গবেষণার ফলাফল বিষয়ে শেফিল্ড টিচিং হসপিটালের কলসালট্যান্ট কার্ডিওলজিস্ট ড. টিম চিকো বলেন, গবেষকরা কেবল ষাটোর্ধ ব্যক্তির ওপর এই গবেষণা চালিয়ে এমন সুফল পেয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে যারাই কাজ করবেন তারাই অলসদের চেয়ে অনেক বেশি দিন বাঁচবেন।
তিনি বলেন, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে অনেক বেশি কর্মঠ হওয়ার বিকল্প নেই। এছাড়া, অনেক বেশি সময় ধরে বসে থাকার অভ্যাস ত্যাগ করে হাঁটাহাঁটি করার অভ্যাস করতে হবে। ব্যস্ত থাকতে হবে দৌঁড়াদৌঁড়ি বা ঘোরাঘুরি করা যায় এমন বিনোদনমূলক কাজেও।
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ক্রিস্টোফার অ্যালেন বলেন, শারীরিকভাবে সবসময় ব্যস্ত থাকলে হৃদযন্ত্র সচল রাখা সম্ভব।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৩
এইচএ/এসআরএস