ঢাকা: এই বিশ্বকে সবার জন্য বাসযোগ্য করে রাখতে অযথা যান্ত্রিক যানবাহন পরিহারের আহবান জানানো হয়েছে। পরিবেশ সংক্রান্ত দিল্লির এক সেমিনারে বলা হয়েছে মানুষ সাধারণভাবে চলাফেরা করতে গিয়েও গাড়ি ব্যবহার করেন।
এ কারণে দক্ষিণ এশিয়ার শহরগুলোর মধ্যে বায়ুদূষণের দিক দিয়ে প্রথম স্থানে রয়েছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। কলকাতা রয়েছে তৃতীয়স্থানে। মাঝখানে ঢাকা। তবে চট্টগ্রামের অবস্থাও বেশ খারাপ।
নয়াদিল্লির পরিবেশ দুষণ মাত্রা রোধে কর্তৃপক্ষ নানা পদেক্ষেপ নিচ্ছে বলে সেমিনারে জানানো হয়। যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিং রোধে তা নজরদারিতে আনা হচ্ছে। নারীদের উত্যক্ত করা এমনকি ধর্ষণের মতো অনাকাঙিক্ষত ঘটনা রোধে গাড়িতেও সিসি ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা করছে দিল্লি প্রশাসন।
বায়ুদূষণে এশিয়ার ছোট বড় ৫০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। আর চট্টগ্রামের অবস্থান প্রথম ৭টির মধ্যে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আয়তনের তুলনায় বেশি মাত্রায় ছোট গাড়ি চলাচল বৃদ্ধিই এই দূষণের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।
বায়ুদূষণের হাত থেকে মুক্তি পেতে সাইক্লিংসহ বেশি বেশি হাঁটার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট - সিএসই‘র ডিরেক্টর জেনারেল সুনীতা নারায়ণ বায়ুদূষণের হাত থেকে দক্ষিণ এশিয়ার শহরগুলোকে রক্ষায় প্রাইভেট কারের জায়গায় বেশি বেশি পাবলিক বাস এবং সাইক্লিংয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রামে আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি। এই বিপুল লোকসংখ্যার চলাফেরার জন্য পাবলিক ও মেট্রোবাস, সাইকেলই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হওয়া উচিত। নয়াদিল্লির মতো ঢাকায়ও যেভাবে প্রাইভেট কার বাড়ছে তাতে বায়ুদূষণ আরও বাড়বে।
শহরগুলো এতে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে সুনীতা আরও বলেন, পাবলিক বাস সাশ্রয়ী। এতে জ্বালানি কম লাগে, একসঙ্গে বেশি মানুষ চড়তে পারেন। অথচ প্রাইভেট কারে ১জন বা ৩/৪ জন চড়েন মাত্র। অনেক প্রাইভেট কারের তুলনায় একটি বাস ব্যবহার যানজট কমাতেও বিশাল ভূমিকা রাখে।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, বায়ুদূষণের ফলে মানুষের স্বাস্থ্যহানি হচ্ছে। ছড়াচ্ছে নানা রোগব্যাধি। হচ্ছে ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ অসুখও। সেমিনারে সিএসইর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি অ্যাডভোকেসি) অনুমিতা রায়চৌধুরী বলেন, দূষণমুক্ত নির্মল বায়ু নিশ্চিত করতে গত ১৫ বছর ধরে আমরা ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, বায়ু দূষণমুক্ত রাখতে চীন বিরাট সাফল্য দেখিয়েছে। তারা বছরে ছোট গাড়ি বিক্রির সংখ্যা বেঁধে দিয়েছে। দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করছে হাঁটা ও সাইকেল চালানোর ওপর জোর দিয়েছে। অথচ আমাদের দেশে গাড়ি কিনতে কম সুদে লোন দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ভারতে বায়ুদূষণই ‘মেজর কিলার্স’। এখানে বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে বড় শহরগুলোর তুলনায় ছোট শহরগুলো ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কারণ বড় শহরগুলো ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে নানা ধরনের প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। কিন্তু ছোট শহরগুলোতে তা তেমন একটা হয় না। আর দক্ষিণ এশিয়ায় ছোট শহরের সংখ্যাই বেশি।
দক্ষিণ এশিয়ার জনস্বাস্থ্যের ওপর বায়ুদূষণের প্রভাব শীর্ষক এক প্রবন্ধে কলকাতার চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী মানস রঞ্জন রায় বলেন, বায়ুদূষণের ফলে অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্ট, হাইপারটেনশন এমনকি ডায়াবেটিসসহ লিভার-কিডনির জটিল সব রোগ হচ্ছে। এসব রোগ থেকে বাঁচতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
নয়াদিল্লিতে ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর ‘কনক্লেভ অব চেঞ্জমেকার্স ফর ক্লিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেন্যাবল মবিলিটি’ শীর্ষক সেমিনারে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। রাজধানি নয়াদিল্লির লোধী রোডের হ্যাবিট্যাট সেন্টারে দু’দিনব্যাপী ওই সেমিনারের আয়োজন করে ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (সিএসই)’। এতে দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সেক্টরের শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন।
দু’দিনের সেমিনারে প্রথমদিনে ৬টি সেশনে বক্তব্য রাখেন ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা, এনজিও প্রতিনিধি, চিকিৎসক, পরিবেশবিদসহ মিডিয়াকর্মীরা। এতে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভূটান, নেপাল, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের প্রায় ২৫ জন সাংবাদিক অংশ নেন।
সমাপনী দিনে দুটি সেশনসহ দিল্লির পুরো পরিবহন ব্যবস্থার ওপর ফিল্ড ভিজিট করানো হয় অংশ গ্রহণকারীদের। নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লি ইন্টিগ্রেটেড মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট সিস্টেমের সদর দপ্তরে। সেখানে ঢোকার ডানপাশে রয়েছে কাশ্মীর গেট। সেমিনারে অংশ গ্রহণকারী কলকাতার সাংবাদিক প্রহ্লাদ চট্টোপাধ্যায় জানান বহিঃশত্রুর আক্রমন থেকে দিল্লিকে সুরক্ষিত রাখতে প্রবেশের জন্য মোঘল বাদশাহরা এমন আটটি গেট তৈরি করেছিলেন।
যাইহোক, ইন্টিগ্রেটেড মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট সিস্টেমের সদর দপ্তরে দেখানো হয়, দিল্লির ট্রাফিক ব্যবস্থা কীভাবে পরিবেশ-নির্ভর ও আধুনিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে। তারা রুমে বসেই দেখছেন কোন গাড়ি আইনভঙ্গ করছে। কে ছিনতাই করছে সবই ধারণ করা হচ্ছে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরায়। এখান থেকে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। ই-টিকিটিংসহ সবকিছুর দেখভালই করতে পারছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
কর্মকর্তারা জানান, শহরের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার গাড়ি ওই ব্যবস্থার আওতায় আনা হচ্ছে। এরই মধ্যে সাত শতাধিক গাড়ি এই পদ্ধতির আওতাভুক্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৩,
এসএস/বিএসকে