ঢাকা: বাংলাদেশের পর এবার পাকিস্তানে পোশাক কারখানায় ভূতের ভয় পেয়ে বসেছে। দেশটির একটি কারখানায় শ্রমিকরা ‘ভূত দেখা’র পর তাদেরকে জিন্নাহ পোস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
গত সোমবার পাকিস্তানের করাচি শহরে এই ঘটনা ঘটে। বেশ কয়েকজন নারী শ্রমিক দাবি করেন, তারা কারখানার ভেতরে ভূত দেখতে পেয়েছেন।
পাকিস্তানের বিভিন্ন সংবাদপত্র জানায়, এই ঘটনার পর দ্রুত শ্রমিকদের মতো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কারখানায় ইমার্জেন্সি ঘন্টা বেজে উঠে। শ্রমিকরা চিৎকার করতে থাকে।
শ্রমিকদের হুড়োহুড়িতে অনেক শ্রমিক অসুস্থ্ হয়ে পড়ে। কারখানার কর্মকর্তারা এই ঘটনায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। বিপুল সংখ্যক আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা নিয়ে তারা হিমশিম খান।
শফটা নাজ নামে এক শ্রমিক জানান, আমি কারখানার ওয়াশরুমে কালো রঙয়ের বড় একটি ভূত দেখতে পেয়েছি। এটি দেকতে ছায়ার মতো তবে এ ধরণের বিশালাকার ছায়া কখনো দেখিনি।
এর আগে গত জুনে একই ঘটনা ঘটে বাংলাদেশের গাজীপুর সদর উপজেলার নর্ফ নিটিং ফ্যাক্টরিতে। সমস্যাটা শুরু হয় সেখানকার এক নারী শ্রমিক হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ার পর থেকে। ওই শ্রমিক দাবি করেন, নারীদের টয়লেটে থাকা এক ভূতের আক্রমণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
কারখানার প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক এর প্রতিবাদে নগরীর রাস্তায় নেমে আসেন ও কারখানা ভাঙচুর করেন। পরবর্তীতে পুলিশ এসে টিয়ার গ্যাস ছুঁড়ে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে দুই পুলিশসহ ১৪ জন আহত হন।
আপাতদৃষ্টিতে এ ঘটনাকে ‘তুচ্ছ’ ও ‘অর্ধশিক্ষিত পোশাক শ্রমিকদের কাণ্ড’ বলে মনে হলেও ব্যাপারটা শুধু তা নয়। এর পেছনে রয়েছে মনোবিজ্ঞান, কর্মস্থলের পরিবেশ, সাম্প্রতিক ঘটনা, সংস্কৃতির দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব।
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন পোশাক কারখানায় রহস্যময় ও অজানা কারণে হঠাৎ শ্রমিকদের অসুস্থ হয়ে পড়া নতুন কিছু নয়। ২০১১ সালের জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কম্বোডিয়ার একটি জুতা ও পোশাক কারখানার এক হাজারেরও বেশি শ্রমিকের মধ্যে অকস্মাৎ অবসাদ, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাবসহ নানা উপসর্গ দেখা দিয়েছিল। পরবর্তীতে চিকিৎসার পর তারা মোটামুটি সুস্থ হয়ে কাজে ফিরে যান। ওই কারখানার পরিবেশে এমন কোনো উপাদান বা ক্ষতিকর কিছু পাওয়া যায়নি, যার ফলে শ্রমিকরা এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।
ডাক্তারদের মতে, এ ধরনের বেশিরভাগ উপসর্গের কারণ ম্যাস হিস্টেরিয়া (mass hysteria) বা গণ মৃগীরোগ, যাকে ম্যাস সোশিওজেনিক ইলনেসও (mass sociogenic illness) বলা হয়।
বদ্ধ সামাজিক মিলনস্থল, যেমন- স্কুল, হাসপাতাল বা কর্মস্থলে সাধারণত ম্যাস হিস্টোরিয়া দেখা যায়, বিশেষ করে যেসব স্থানের কর্মীদের নিয়মিত মানসিক চাপ ও কোনো ধরনের আতঙ্কে থাকতে হয়। যেমন- যেসব স্কুলে শিশুদের উপর অতিরিক্ত চাপ দেওয়া হয় এবং তারা শিক্ষকদের কাছে লাঞ্ছিত হওয়ার ভয়ে থাকে, সেসব স্কুলের শিশুরা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ে। এছাড়া যেসব কারখানায় কাপড়, কেমিক্যাল, গন্ধের আধিক্য থাকে এবং চাপ ও একঘেয়েমি বিরাজ করে, সেসব কারখানায় এসব উপসর্গ বেশি দেখা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘন্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৩
কেএইচ/এসআরএস