ঢাকা: সোমবার থেকে বিচার শুরু হচ্ছে মিশরের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির। দেশটির সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে উত্থাপিত সহিংসতায় উস্কানি ও বিরোধীদের হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, এমনকি মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থিত সাবেক প্রেসিডেন্টের!
এজন্য মুরসি ও সহিংসতায় উস্কানির অভিযোগে আটক ব্রাদারহুডের অন্য নেতাদের বিচারকে কেন্দ্র করে সোমবার থেকে ফের দেশটিতে ব্যাপক আকারে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত ৩ জুলাই সেনাঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত মুরসির সঙ্গে সহিংসতায় উস্কানির অভিযোগে বিচারেরর মুখোমুখি হচ্ছেন ব্রাদারহুডের শীর্ষস্থানীয় আরও ১৪ নেতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাষ্ট্রপক্ষের কয়েকজন কৌঁসুলি সংবাদ মাধ্যমগুলোকে বলছেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে মুরসিসহ অপর আসামিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, এমনকি মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। আর যদি এমনটি হয়ে থাকে তাহলে ব্রাদারহুড ও সেনাসমর্থিত সরকারের মধ্যে আবারও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তবে দেশটির সেনাসমর্থিত রাষ্ট্রিয় সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, যেহেতু তাঁবুতে অভিযান চালিয়ে কয়েকশ’ মানুষকে হত্যা করে ব্রাদারহুড দমানো গেছে, তাই অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে মুরসিকেও ফাঁসিতে ঝোলাতে হয়তো খুব বেশি বেগ পেতে হবে না। তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের পাশাপাশি সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অনেক আরব রাষ্ট্রের সমর্থন পাচ্ছে সেনাবাহিনী।
মিশরের পররাষ্টমন্ত্রী নাবিল ফাহমি সংবাদ মাধ্যম রয়টার্সকে বলেন, আমরা আজ কী করছি বা কাল কী করবো এ নিয়ে কোনো বিচার-বিশ্লেষণ হতে পারে না। তবে আমি কথা দিচ্ছি, আমরা এই পদক্ষেপে সফল হবো, যদিও আমরা হোঁচট খেতে পারি।
ব্রাদারহুডের শীর্ষস্থানীয় নেতা ফাতিহ আওয়াদাল্লাহ সরকারের এ ধরনের চিন্তাভাবনার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যদি মুরসিকে এ ধরনের কথিত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে কোনো রকমের দণ্ড দেওয়া হয় তবে মিশরে গণঅভ্যুত্থান ঘটবে।
নিজেরা কোনো ধরনের শক্তি প্রদর্শনের কথা নাকচ করে দিলেও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, অন্য ইসলামপন্থিরা সেনাবাহিনীর এ উস্কানিমূলক পদক্ষেপে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের পতনের পর প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতাগ্রহণ করেন মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থিত মুরসি।
কিন্তু ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকেই বিপ্লবের চেতনা মুছে দিয়ে মুরসি জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন দাবি করে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে থাকে দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধীদলগুলো।
তাদের বিক্ষোভের মুখে গত ৩ জুলাই সেনাঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে গৃহবন্দি করা হয়।
কিন্তু মুরসির পতনের পর তাকে স্বপদে বহাল করতে রাস্তায় নেমে আসে কট্টর ইসলামপন্থি ব্রাদারহুড সমর্থকরা।
অবশ্য, এখন পর্যন্ত ব্রাদারহুড সমর্থকদের শক্ত হাতে দমন করে আসছে সেনাবাহিনী। মুরসির ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকে দেশটিতে চলা সহিংসতায় এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজারেরও বেশি ব্রাদারহুড সমর্থক নিহত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৩
এইচএ/জিসিপি