ঢাকা: কট্টরপন্থি মোল্লা ফজুল্লাহকে প্রধান নেতা হিসেবে মনোনীত করার পর পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ধারাবাহিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশটির জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান (টিটিপি)।
শুক্রবার টিটিপির পক্ষ থেকে বলা হয়, সাবেক প্রধান হাকিমুল্লাহ মেহসুদকে মার্কিন ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যায় সহযোগিতা করার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে চরম প্রতিশোধ নেওয়া হবে।
গত ১ নভেম্বর মার্কিন ড্রোন হামলায় হাকিমুল্লাহ মেহসুদ নিহত হওয়ার পর পাক সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান ও লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল অবস্থানের জন্য পরিচিত ফজুল্লাহর নামই টিটিপি প্রধান হিসেবে বেশি উচ্চারিত হচ্ছিল।
শেষ পর্যন্ত কট্টরপন্থি ফজুল্লাহকেই প্রধান মনোনীত করলো প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় আগ্রহ দেখানো টিটিপির শুরা কাউন্সিল।
একটি অজ্ঞাত স্থান থেকে শুরা কাউন্সিলের প্রধান আসমাতুল্লাহ শাহীন ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম রর্যটার্সকে মোবাইল বার্তায় বলেন, হাকিমুল্লাহকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে আমরা নিরাপত্তা বাহিনী, সরকারি কার্যালয় ও রাজনৈতিক নেতাদের টার্গেট করে হামলা চালাবো।
তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দুর্গ খ্যাত পাঞ্জাব প্রদেশের সরকারি কার্যালয় ও সেনাবাহিনীর স্থাপনা উড়িয়ে দেওয়া হবে।
শাহীন বলেন, সরকারকে টার্গেট করলেও এই বিষয়টি স্পষ্ট করতে চাই যে, বেসামরিক লোকজন, বাজার, কিংবা লোক সমাগম টার্গেট করে হামলা চালানোর কোনো পরিকল্পনা নেই আমাদের। অতএব সাধারণ জনগণের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
টিটিপি মুখপাত্র শাহীন বলেন, হাকিমুল্লাহ মেহসুদকে হত্যা করতে মার্কিন ড্রোন হামলার ব্যাপারে পাক সরকারের কাছে সবরকমের তথ্য ছিল এবং তারা সহযোগিতাও করেছিল। পাক সরকার আমেরিকার দাস। এটা একটি আমেরিকান উপনিবেশ।
উল্লেখ্য, দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের কথা বলে প্রকাশ্যে মার্কিন ড্রোন হামলার বিরোধিতা করলেও সম্প্রতি ফাঁস হওয়া উইকিলিকসের তথ্য মতে, পাকিস্তান সরকারের সহযোগিতায়ই দেশটির দুর্গম অঞ্চলে এ ধরনের হামলা চালিয়ে যাচ্ছে মার্কিন বিশেষ বাহিনী।
অন্যদিকে, পাকিস্তান সরকারকে উৎখাত করে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশটিতে ইসলামি সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে লড়াই চালিয়ে আসছে টিটিপিসহ দেশটির অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলো।
সাম্প্রতিক নির্বাচনে শান্তি আলোচনায় আগ্রহ দেখানো মুসলিম লিগ সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশটিতে ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে টিটিপি। এই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সাল নাগাদ পার্শ্ববর্তী আফগানিস্তান থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সৈন্য প্রত্যাহার হলে আফগান সরকারের মতো পাক সরকারকেও তালেবানদের হুমকির মুখে বেশ বেকায়দায় পড়তে হতে পারে বলে মনে করছেন সমর ও রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
তাছাড়া, নিহত হাকিমুল্লাহ মেহসুদ ও শুরা কাউন্সিলের কিছু সদস্য সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করতে চাইলেও সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানকারী ও নারী শিক্ষা অধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাইয়ের ওপর হামলার প্রধান অভিযুক্ত কট্টরপন্থি ফজুল্লাহ টিটিপির প্রধান মনোনীত হওয়ার পর তালেবানদের বিষয়ে সরকারকে নতুন করে ভাবতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৩
এইচএ/জিসিপি