ভারতে আসন্ন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোটের পাল্লা ক্রমেই হালকা হচ্ছে। ভারী হয়ে উঠছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের পাল্লা।
কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে- শেষের মুহূর্ত যত এগিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে ব্যবধান। আর এ বক্তব্যে জনমত জরীপকে ভিত্তি ধরছে আনন্দবাজার। রোববার প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংবাদপত্রটি দেখাচ্ছে- এক মাস আগে জনমত সমীক্ষায় ইউপিএ জোটের থেকে ১২৫ আসনে এগিয়ে ছিল এনডিএ। কিন্তু সবশেষ সমীক্ষা বলছে, সেই ব্যবধান বেড়ে হয়ে যাবে ১৪৪!
একা বিজেপিরই ২১৭টি আসন পাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছে এই জরিপ। অন্যদিকে কংগ্রেস একার আসন একশোর নীচে নামতে পারে এমন ইঙ্গিত অনেক আগেই দিয়েছে জরিপকারীরা। সবশেষ সমীক্ষা অনুযায়ী তা নেমে যেতে পারে ৭৩-এ।
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে এমন সোচনীয় অবস্থা কংগ্রেসের কোনোকালেই ছিলো না। হারার সবচেয়ে খারাপ ইতিহাসটিই গড়তে যাচ্ছে কংগ্রেস।
উল্টো দিকে, বিজেপির কথা আনন্দবাজার বলছে, অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে জয়ের যে রেকর্ড দলটি গড়েছিলো নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সে জয়ও টপকে যেতে পারে।
শেষ রক্ষা পেতে রাহুল গান্ধিকেও প্রচারে নামিয়েছে কংগ্রেস। কিন্তু সমীক্ষা থেকে যা ফল আসছে তাতে বলা যায়, শেষ রক্ষা হবে না।
গান্ধি পরিবারের এই তরুণ নেতৃত্বকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন নরেন্দ্রভাই দামোদরভাই মোদী।
তবে আনন্দবাজার স্রেফ জনমত জরিপ থেকে শেষ কথা বলে দিতে নারাজ। বলছে, জরিপের ফল যে সব সময়ে মেলে, তা নয়। তবে মানুষের মনোভাব জেনে নিতে এই জরিপের একটি গুরুত্বও রয়েছে।
জরিপ পরিচালনা করেছে আনন্দবাজার নিজেই। সঙ্গে বিশ্বখ্যাত জরিপ প্রতিষ্ঠান এসি নিয়েলসেন।
এবিপি আনন্দ-এসি নিয়েলসেনের এই জনমত সমীক্ষা বলছে, এখনই লোকসভা ভোট হলে এনডিএ ২৩৬টি আসন পেতে পারে। জানুয়ারি মাসে এই একই সমীক্ষা বলেছিল, এনডিএ ২২৬টি আসন পেতে পারে।
অর্থাৎ এক মাসে মোদীর পাল্লায় আরও দশটি বাড়তি আসন যোগ হয়েছে। উল্টো দিকে ইউপিএ-র আসন ১০১টি থেকে কমে দাঁড়াচ্ছে ৯২টিতে।
টাইমস নাও-সি ভোটার অক্টোবরের পর ফেব্রুয়ারিতে ফের জনমত সমীক্ষা চালাল। তাতেও একই তথ্য। ইউপিএ-র আসন কমছে, এগিয়ে চলেছে বিজেপি।
জরিপে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে আসছে। তা হচ্ছে- আঞ্চলিক দলগুলি সকলে মিলে বিপুল আসন জিততে চলেছে। কংগ্রেস, বিজেপি ও বাম বাদ দিলে বাকি দলগুলি মিলে ১৮৬টি আসন পেতে পারে। ভোটের শতকরা হারের হিসেবেও এই দলগুলি একসঙ্গে মিলে ইউপিএ এবং এনডিএ-র থেকে বেশি ভোট পেতে পারে বলে জানাচ্ছে সমীক্ষা।
এনডিএ-র ৩১% ও ইউপিএ-র ২৪% ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা। সেখানে অন্য দলগুলির ঝোলায় যেতে পারে ৪০% ভোট।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এ বিষয়ে তাদের যে মত দিচ্ছেন তাও যাচ্ছে না কংগ্রেসের পক্ষে। তারা বলছেন, মোদী জাদুর চেয়ে মনমোহন-সরকারের প্রতি বিরক্তিই দলটির জন্য ভোট কমাবে।
তাদের এ বক্তব্য থেকে এটা বোঝা যাচ্ছে মোদীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে অনেকে ভোট দেবেন এটা তারা মানতে নারাজ। বলছেন, বিজেপি-র যদি জয়জয়কার হবে, তা হলে আঞ্চলিক দলগুলি এত আসন পায় না।
দেখা যাচ্ছে যে রাজ্যে যে আঞ্চলিক দল শক্তিশালী, সেখানে বেশির কংগ্রেস বা বিজেপি কারোই পাত্তা নেই।
পশ্চিমবঙ্গের কথাই ধারা যাক। এখানে সবশেষ সমীক্ষায় ৪২ আসনের ২৯টিই যাবে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূলের ঝোলায়। এখানে দ্বিতীয় অবস্থানে অন্যান্য বামদল আর কংগ্রেসের ভাগ্যে ২টি আসন জুটলেও বিজেপি’র ভাগ্যে জুটবে না একটিও।
উড়িশ্যায় বিজু জনতা দল। তামিলনাড়–তে পাচ্ছেন জয়ললিতার ডিএমকেও একইভাবে এগিয়ে।
এবিপি আনন্দ-এসি নিয়েলসেনের সমীক্ষা সেটাই বলছে।
সারা দেশের ১২৯টি কেন্দ্রের ২৯ হাজার ২৫২ জনের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে এই সমীক্ষায়। কংগ্রেসের প্রতি তাদের নাখোশ থাকার প্রধান কারণ হিসেবে দেখা গেছে দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা আর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি। তারপরে এসেছে দুর্নীতি ও বেকারত্ব।
বিজেপি উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খ-েও বড় জয় পাবে বলে সমীক্ষায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। মোদীর ‘ভোট ফর ইন্ডিয়া’ প্রচারকেই এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, অটলবিহারী বাজপেয়ীর সময়ে যেমন ‘কার্পেট বম্বিং’ প্রচার চালিয়েছিল বিজেপি (যার অর্থ, একাধিক নেতা একাধিক জায়গায় একসঙ্গে প্রচার চালাবেন), এ বারে তা নয়। এই ভোট-প্রচারের একটাই কথা, একটাই ক্রেজ মোদী। কখনও উত্তর-পূর্বের অরুণাচল প্রদেশে, কখনও কেরলে। এভাবেই চলছে তার প্রচার অভিযান।
ওদিকে রাহুল গান্ধীকে সামনে দিয়ে প্রচার চালাচ্ছে কংগ্রেসও। কিন্তু ৫৭ শতাংশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদীকেই দেখতে চাইছেন। আর মাত্র ১৭ শতাংশ চাইছেন রাহুলকে।
জরিপের ফল যাই হোক ভারতবাসীর মনের কথা জানতে ভোটের দিনটি পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।
বাংলাদেশ সময় ২২৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৪