ঢাকা: নিখোঁজ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটির খোঁজে অনুসন্ধান কার্যক্রম এবার মালাক্কা প্রণালীর পশ্চিমে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত সম্প্রসারণ হতে পারে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিংগামী উড়োজাহাজটি একঘণ্টা পর রুট হারিয়ে পশ্চিমের দিকে ভারত মহাসাগরে চলে আসতে পারে- এমন ধারণা থেকে উড়োজাহাজটির খোঁজে মালয়েশিয়ার পশ্চিম উপকূলবর্তী বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরের সংযোগস্থল ভারতের আন্দামান-নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানো হতে পারে।
এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকায় অত্যাধুনিক পসাইডোন বিমান মোতায়েন করেছে ভারত। ইতোমধ্যে মালাক্কা প্রণালীতে যুক্তরাষ্ট্রও তার সর্বশেষ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির পসাইডোন পি৮-এ টেকনিক্যাল এয়ারক্রাফট মোতায়েন করেছে।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জে কার্নি বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেন, নতুন কিছু তথ্যের ভিত্তিতে এবার ভারত মহাসাগরে তল্লাশি চালানো শুরু হতে পারে।
তবে নতুন কী তথ্যের ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে সে বিষয়টি স্পষ্ট করেননি কার্নি। এছাড়া, মালয়েশিয়ান কর্মকর্তারাও তাৎক্ষণিকভাবে এখনও এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি।
আধুনিক উড়োযোগাযোগ ব্যবস্থায় সপ্তাহখানেক ধরে নিখোঁজ মালয়েশীয় উড়োজাহাজটিই এখন বিশ্ববাসীর রহস্যের কেন্দ্রবিন্দু। দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে ডজনখানেকেরও বেশি দেশের সশস্ত্র বাহিনী তন্ন তন্ন করে খোঁজ করেও উড়োজাহাজটির এখন পর্যন্ত হদিস পায়নি। কয়েকবার তেলের রেখা, ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন পাওয়া গেছে দাবি করা হলেও এর পক্ষে জোরালো কোনো বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
নিখোঁজ হওয়ার পর মালয়েশিয়ান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, বোয়িং ৭৭৭-২০০ইআর উড়োজাহাজটি থাইল্যান্ড উপসাগর দিয়ে ওড়ার সময়ই সর্বশেষ যোগাযোগ করতে পেরেছিল।
থাইল্যান্ড উপসাগরে থাকাবস্থায় যোগাযোগ হয়েছিল বলে মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষের দাবির প্রেক্ষিতে দক্ষিণ চীন সাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ব্যাপক অনুসন্ধান চালায় ভিয়েতনাম, চীন, মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ এশীয় বেশ কয়েকটি দেশের নৌ ও বিমান বাহিনী।
প্রথম দিকে ভিয়েতনাম উপকূলে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে ভিয়েতনামের নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানালেও পরে এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
এরপর চোরাই পাসপোর্ট ব্যবহার করে দুই ব্যক্তি ভ্রমণ করায় উড়োজাহাজটির নিখোঁজের পেছনে সন্ত্রাসীদের সংশ্লিষ্টতার আশঙ্কা জোরালো হয়। কিন্তু ওই দুই ব্যক্তির পরিচয় উন্মোচিত হলে মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের সংশ্লিষ্টতা নেই।
এরপর জানা যায়, মাল্লাকা প্রণালীতে উড়োজাহাজটির ধ্বংসাবশেষ দেখতে পেয়েছে মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পরে মালয়েশিয়ার বিমান বাহিনীর প্রধান বিষয়টি অস্বীকার করেন।
সবশেষে চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়, দক্ষিণ চীন সাগরে তিনটি বস্তু ধরা পড়েছে তাদের স্যাটেলাইটে। আর ওই বিশালাকারের বস্তু তিনটিকেই উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষ বলে মনে করা হয়।
কিন্তু চীনের এই বক্তব্যের পক্ষেও জোরালো কোনো বক্তব্য না থাকায় এ বিষয়টিও নাকচ করে দেয় মালয়েশিয়া।
দাবি-নাকচের দৃশ্যমান খেলা চললেও সবাই চাইছেন নিখোঁজ উড়োজাহাজটির ভাগ্যে কোনো মিরাকল ঘটুক। প্রার্থনা চলছে, উড়োজাহাজটি ফিরে আসুক বিশ্ববাসীর মাঝে। এ আশাবাদ থেকেই আশার শেষ বিন্দু থাকা পর্যন্ত অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানোর ঘোষণা দিয়েছে চীন।
উড়োজাহাজটির খোঁজে ইতোমধ্যেই দক্ষিণ এশীয় বেশ কিছু দেশের জাহাজ ও এয়ারক্র্যাফট জড়ো হয়েছে মালয় উপদ্বীপ ও আন্দামান সাগরের দু’পাশে। মালয় উপদ্বীপ ও সুমাত্রার ইন্দোনেশিয়ান অঞ্চলের নিকটবর্তী জলরাশিতে অরিয়ন এয়ারক্র্যাফট পি-৩ মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরের সংযোগস্থলে দুর্গম আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জে জাহাজ, এয়ারক্র্যাফ ও হেলিকপ্টার মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার ভারতীয় নৌবাহিনীর পি৮আই পসাইডোন পর্যবেক্ষক বিমান পাঠানো হয়েছে সেখানে।
গত শুক্রবার রাত স্থানীয় সময় ১২টা ৪১ মিনিটে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের উদ্দেশে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর ছেড়ে যায়। কিন্তু এর ঘণ্টাখানেক পর রাডার থেকে হারিয়ে যায় উড়োজাহাজটি।
কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিংগামী উড়োজাহাজটিতে ১৪টি দেশের নাগরিক ছিলেন। মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের উড়োজাহাজে চীনের ১৫৩, মালয়েশিয়ার ৩৮, ইন্দোনেশিয়ার ১২, অস্ট্রেলিয়ার ৭, ফ্রান্সের ৩, যুক্তরাষ্টের ৩, নিউজিল্যান্ডের ২, ইউক্রেনের ২, কানাডার ২, রাশিয়ার ১, ইতালির ১, তাইওয়ানের ১, নেদারল্যান্ডসের ১ ও অস্ট্রিয়ার ১ নাগরিক রয়েছেন। এদের মধ্যে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া, উড়োজাহাজটিতে ১২ জন ক্রু রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৪