ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মৃত্যু পারলো না ৭০ বছরের প্রেমের ইতি টানতে!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৪
মৃত্যু পারলো না ৭০ বছরের প্রেমের ইতি টানতে! সংগৃহীত

ঢাকা: কৈশোর ছাড়িয়ে তারুণ্যে উড়বার মুহূর্তে পরিচয়, এরপর প্রণয়, তারপর পরিণয়। দীর্ঘ ৭০ বছর হাতে হাত রেখে পথচলা।

সকাল-দুপুর-রাত, প্রত্যেকটি মুহ‍ূর্ত, প্রতিটি নিঃশ্বাস যেন কেটেছে একসঙ্গে। দু’জনের প্রেমের বন্ধন এতেটাটাই পোক্ত ছিল যে একজনকে আরেকজনের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টায় ব্যর্থ হলো মৃত্যুও। যুক্তরাষ্ট্রের অহিওর বাসিন্দা ওই যুগলের অকৃত্রিম ভালোবাসার ইহজাগতিক সমাপ্তি ঘটেছে ঠিকই, কিন্তু মৃত্যুকে হারিয়ে তারা মিলে গেছেন পারলৌকিক ভালবাসার জগতে!

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, সম্প্রতি ৯২ বছর বয়সে মারা যান স্ত্রী হেলেন ফেলুমলি। তার মৃত্যুকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি ৯১ বছর বয়সী স্বামী কেনেথ। মাত্র ১৫ ঘণ্টা পরই স্ত্রীর পিছু পিছু না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি।

৭০ বছরের সংসার জীবনে একটি মাত্র মুহূর্তের জন্য যারা আলাদা থাকতে পারেননি, তাদের আলাদা করে রাখতে মৃত্যুর এ কেমন স্পর্ধা! পারেনি মৃত্যু। বলছিলেন যুগলের আট সন্তান।

তারা বলেন, এতো দীর্ঘ সময় তারা একসঙ্গে ছিলেন, কখনো দেখিনি দু’জনের কারও মন খারাপ থাকতে। এমনও সময় গেছে, একবার কোথাও যাওয়ার সময় নৌযানে যায়গা হচ্ছিল না। তখন কেনেথকে থাকতে হবে নৌযানটির ছাদে একটি সংকীর্ণ জায়গায়। হেলেন সেটা মানেননি, সবার নিষেধ অমান্য করে স্বামীর বুকে মুখ গুঁজে থাকতে ছুটে গেছেন সেখানে।

তাদের কন্যা লিন্ডা কোডি জানান, কৈশোর, তারুণ্য, দুরন্ত বসন্ত ছাড়িয়ে তারা যখন জীবনের সায়াহ্নে এসে পৌঁছান তখনও তারা অবিচ্ছেদ্য ছিলেন। একসঙ্গে সকালের খাবার খেয়েছেন, ঘুমিয়েছেন একসঙ্গে। একজনের হাতে অপরজন হাত রেখে খাবার খেতেন।

কোডি বলেন, মা যখন চলে গেলেন, আমরা জানতাম, বাবাও বিদায় নেবেন। কিন্তু সেটা যে এতো শিগগিরই তা আমাদের ধারণার বাইরে ছিল।

কোডির উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, হেলেনের মৃত্যুর পর কেনেথ দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়েন এবং তার সন্তানদের কাছে ডেকে বিদায় চেয়ে নেন। আশ্চর্যভাবে পরের দিন সকালেই মারা যান তিনি।

সন্তান কোডি জানান, বাবা চিরবিদায়ের জন্য প্রস্তুত ছিলেন, তিনি কখনোই মাকে ছাড়া থাকতে পারেননি।

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম জানায়, ১৯৪৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ওহিও নদীর সিনসিন্নাতিতে পরিচয় হয় দু’জনের। পরিবার থেকে পালিয়ে যান কেন্টাকির নিউপোর্টে। এখানে থাকেন বেশ ক’বছর। বয়স কম হওয়ায় তখন বিয়ে করতে পারেননি তারা।

এরপর একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী পদে চাকরি নিয়ে আয় করা শুরু করেন কেনেথ। পরিণত হওয়ার পর বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন দু’জন। তারপর একটি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন কেনেথ। স্ত্রী হেলেন সংসার সাজানোর পাশাপাশি পাড়ার শিশুদের পড়িয়ে সময় কাটাতেন।

এভাবে সময় গড়াতো, তাদের প্রেমের বন্ধন হতে থাকলো পোক্ত। হতে হতে কেমন দৃঢ় হয়েছে তাদের ভালোবাসা বিনিময়ের এ বন্ধন, সেটা খোদ মৃত্যুও বোঝেনি!

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।