যদি সত্য হয়, তাহলে অবাক হবার মতোই। এ দুনিয়ায় এর আগে এরকম নজির আর একটিমাত্র আছে।
ভেবে দেখুন, মাটি থেকে ৩৫ হাজারেরও বেশি ফুট উচ্চতায় এবং মাইনাস ৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বিমানের চাকার ফাঁকে বসে ভ্রমণ করে দিব্যি বেঁচে আছে এক কিশোর। তার ভ্রমণকাল ছিলো সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার।
বাবা-মায়ের সঙ্গে রাগ করেই ক্যালিফোর্নিয়ার বাড়ি থেকে পালিয়েছিল সে। আর কোনো কিছু না বুঝেই নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে রানওয়ে পেরিয়ে গিয়ে বসে পড়ে হাওয়াইয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমানের চাকার ফাঁকে, যে জায়গাটিকে বলা হয় ‘হুইলস ওয়েল’। খবর: ভারতীয় গণমাধ্যম।
নির্দিষ্ট সময়ে বিমানটি ছেড়ে যায় মাউই বিমানবন্দরের দিকে। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার আকাশ পথ। বিমানের মতোই নিরাপদে অবতরণ করার পর ‘হুইলস ওয়েল’ থেকে নেমে উদভ্রান্তের মতোই এদিক-সেদিক করতে থাকে সেই কিশোর। তখনি তার উপর নজর পরে নিরাপত্তারক্ষীদের। প্রথমে জঙ্গি ভেবে হইচই শুরু হয়ে যায়। পরে পুরো দেহ তল্লাশি চালিয়ে ওই কিশোরের কাছ থেকে একটি চিরুনি ছাড়া আর কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি নিরাপত্তাকর্মীরা।
পরে তাকে নিয়ে ভর্তি করা হয় স্থানীয় একটি হাসপাতালে। এখনো পর্যন্ত খারাপ কিছু পাওয়া যায়নি তার দেহে। তবে এখনো কোনো মামলায় জড়ানো হয়নি বেঁচে আসা ওই কিশোরকে। বরং কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে বের করার চেষ্টা করছেন কীভাবে নিরাপত্তার ফাঁক গলে কিশোরটি বিমানের চাকায় স্থান নিলো।
কিন্তু এটি কী করে সম্ভব? ৩৫ হাজারেরও বেশি ফুট উচ্চতায়, যেখানে কোনো অক্সিজেন নেই, তার উপর মাইনাস ৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা- সেখানে কীভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব? এটা মিরাকল নয় কি? এমন প্রশ্ন কিন্তু অনেকের।
এক দল চিকিৎসক অবশ্য এর একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন। তারা বলছেন, এই ধরনের পরিবেশে কিশোরটি হয়তো ‘হাইবারনেশন’-এ চলে গিয়েছিল। এতে শরীরে বিপাক ক্রিয়া ঘটে না বললেই চলে। শ্বাসপ্রশ্বাস চলে খুব ধীরে ধীরে। নাড়ির গতিও থাকে সামান্য। দেহের তাপমাত্রাও খুব কমে যায়।
বিপাক ক্রিয়া যেহেতু একেবারে কমে যায়, তাই অল্প শক্তির ব্যবহারেই বেঁচে থাকা সম্ভব হয়। প্রতিকূল অবস্থায় খাপ খাইয়ে নিতে মানুষের শরীরে এ ধরনের পরিবর্তন ঘটতে পারে। এ ভাবে বেঁচে থাকাকেই বিজ্ঞানের ভাষায় ‘হাইবারনেশন স্টেট’ বলে।
কিন্তু তাতে যেন ঠিক ভরসা রাখতে পারছেন না মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআই।
এফবিআই এর কর্মকর্তা সিমন বলেন, “ওর ভাগ্য ভাল। নয়তো সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা এভাবে...!”
একই বক্তব্য দেন হাওয়াইয়ান এয়ারলাইন্সের মুখপাত্র অ্যালিসন ক্রোয়েলেরও। তিনি জানান, “ছেলেটির শরীর-স্বাস্থ্য নিয়েই চিন্তিত আমরা। যদিও প্রাথমিক পরীক্ষায় খারাপ কিছু ধরা পড়েনি। ”
বিমানের চাকায় ভ্রমণ করতে গিয়ে মৃত্যুর খবর এর আগেও এসেছে। তবে প্রথমবার জীবিত ফিরেছিলো নাইজেরিয়ার ১৪ বছরের এক কিশোর। সে অবশ্য ভ্রমণ করেছিল মাত্র ৩৫ মিনিট। বিজ্ঞানীরা তখন বলেছিল, “মাত্র ৩৫ মিনিটের ভ্রমণ ছিল বলেই প্রাণে রক্ষা পেয়েছিল সে।
কিন্তু এবার? হাইবারনেশনের তত্ত্বও বিশ্বাস করতে পারছেন না অধিকাংশ লোকই।
তাদের দাবি, “যা শুনছি, তার বাইরেও হয়তো অন্য কোনও গল্প আছে। ”
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৪