ঢাকা: লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির ‘মিলিশিয়া-নিয়ন্ত্রিত’ বিমানবন্দর থেকে ১১টি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ নিখোঁজ প্রেক্ষিতে দুশ্চিন্তায় কপালে ভাঁজ দেখা দিয়েছে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর।
কুখ্যাত নাইন ইলেভেনের (৯/১১) ১৩তম বার্ষিকী ঘিরে একই কায়দায় পশ্চিমা টার্গেটে নতুন করে হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিশ্লেষকরা।
মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর পশ্চিমাপন্থি জেনারেল হাফতারের অনুগত বাহিনীকে হটিয়ে গত ২৬ আগস্ট ত্রিপোলি বিমানবন্দরের দখল নেয় ইসলামপন্থি মিলিশিয়া গ্রুপগুলোর জোট ইসলামিক ফজর বা ডন অব লিবিয়া।
উভয় পক্ষের তীব্র লড়াইয়ে প্রায় পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয় আফ্রিকার মহাদেশের অন্যতম সুরম্য ও অত্যাধুনিক বিমানবন্দরটি। ধ্বংস হয় বেশ কয়েকটি মূল্যবান সামরিক-বেসামরিক উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার।
এছাড়া ইসলামপন্থি মিলিশিয়ারা কব্জা করে লিবিয়ার রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা লিবিয়া এয়ারলাইন্স ও আফ্রিকিয়াহ এয়ারওয়েজের বেশ কিছু যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ।
তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, বিমানবন্দরে ধ্বংস হওয়া ও রক্ষা পাওয়া উড়োজাহাজগুলোর মধ্যে নাকি ১১টির কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
পশ্চিমাদের মাথা ব্যথার শুরু এখান থেকেই। মার্কিন গোয়েন্দা বিশ্লেষকদের ধারণা, নাইন ইলেভেনের বার্ষিকীতে পশ্চিমা লক্ষ্যবস্তুতে নতুন করে হামলার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নেই নাকি ডন অব লিবিয়া মিলিশিয়া গ্রুপের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা জঙ্গিরা ওই ১১ উড়োজাহাজ গায়েব করেছে।
অবশ্য আগেই ‘ডন অব লিবিয়া’ মিলিশিয়া গ্রুপকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের দাবি আল কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন অনেক গ্রুপ ওই মিলিশিয়া সংগঠনের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে এতোগুলো উড়োজাহাজ নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখছে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও পেন্টাগন, এমনটাই জানা গেছে মার্কিন সংবাদ মাধ্যমগুলোর বরাতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, অনেকগুলো বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ নিখোঁজ রয়েছে। ওই প্লেনগুলোকে ঘিরে ১১ সেপ্টেম্বরে সন্ত্রাসীদের পরিকল্পনা কি? আমরা এখন তা উদঘাটনে কাজ করছি।
এদিকে পশ্চিমাদের জন্য আরও শঙ্কার বিষয় হলো, নাইন ইলেভেনের বার্ষিকীতে ২০১২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর লিবিয়ার বেনগাজীর মার্কিন কনস্যুলেটে হামলা চালায় জঙ্গিরা। প্রাণ হারান রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টোফার স্টিভেন্সসহ চার আমেরিকান।
এ পরিস্থিতিতে গোয়েন্দারা আশঙ্কা করছেন ছিনতাইকৃত উড়োজাহাজগুলো মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন টার্গেটে সন্ত্রাসী হামলার জন্যও ব্যবহার করা হতে পারে।
অপরদিকে উড়োজাহাজগুলো ‘মাসকড মেন ব্রিগেড’ নামের একটি জঙ্গি গোষ্ঠী নিজেদের কব্জায় নিয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে ডেইলি মেইল, মিরর ও হাফিংটন পোস্ট সহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায়।
জানা গেছে, নবগঠিত এই জঙ্গি সংগঠনটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন উত্তর আফ্রিকা ও সাহারা মরুভূমি এলাকায় তৎপর ‘কুখ্যাত’ আল কায়েদা নেতা মোখতার বেল মোখতার।
পশ্চিমা নাগরিকদের ওপর হামলা এবং পশ্চিম ও উত্তর আফ্রিকায় বিভিন্ন পশ্চিমা টার্গেটে হামলা চালানোর দীর্ঘ সুখ্যাতি আছে এই জঙ্গি নেতার।
এ পরিস্থিতিতে নিখোঁজ প্লেনগুলোর সহায়তায় নাইন ইলেভেনের অনুরূপ নতুন হামলার আশঙ্কায় এখন নির্ঘুম পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
হুমকিকে আমলে নিয়ে ইতোমধ্যেই লিবিয়ার সঙ্গে সব রকমের আকাশযান চলাচল বাতিল করেছে প্রতিবেশী তিউনিশিয়া ও মিশর। এছাড়া, লিবিয়াগামী ও লিবিয়া থেকে ছেড়ে আসা উড়োজাহাজগুলোর ব্যাপারেও সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থানে রয়েছে আলজেরিয়া, মরক্কো ও নাইজেরিয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৪