বেফাঁস কথা বলে মনোযোগ আকর্ষণ কি ডোনাল্ড ট্রাম্প ইচ্ছা করেই করেন? সত্যিই কি তিনি পারমাণবিক বোমা হামলা আর পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পার্থক্য বোঝেন না? নাকি ইসরায়েলের সঙ্গে মিলে ইরানে হামলা চালিয়ে কথিত জয়ের আনন্দে তিনি এখনো আত্মহারা?
গত জুনের শেষের দিকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করার জন্য দেশটির তিনটি স্থানে বোমা হামলা চালান ট্রাম্প। ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে নেদারল্যান্ডস সফরের সময় তিনি সেই ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে অপ্রত্যাশিত মন্তব্য করে বসেন।
ট্রাম্প তার বক্তব্যে বলেন, তিনি হিরোশিমা-নাগাসাকির উদাহরণ ব্যবহার করতে চান না, তবে সেটা নাকি ইরানে হামলার মতোই ছিল। কারণ বোমা হামলাই সেই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটিয়েছিল। তার এমন উদ্ভট তুলনায় জাপানে দেখা দিয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। দেশটির কর্মকর্তারা, পারমাণবিক বোমা হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া হিরোশিমা-নাগাসাকির মানুষ এবং যুদ্ধবিরোধীরা ট্রাম্পের মাপজোখহীন বক্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাদের ভাষ্যে, এমন তুলনা অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও বেপরোয়া।
হিরোশিমার মেয়র কাজুমি মাতসুই ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় জানান, ইরানের সঙ্গে এভাবে তুলনা করা জাপানি জনগণের দুর্ভোগকে উপেক্ষা করার সমান। তিনি জোর দিয়ে বলেন, অতীত বা বর্তমান—কোনো কালেই গণবিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যবহার ন্যায্য হতে পারে না।
নাগাসাকির মেয়র শিরো সুজুকিও এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের বক্তব্যের নিন্দা জানান। তিনি বলেন, কোনো পরিস্থিতিতেই পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের ন্যায্যতা দেওয়া যায় না। যুদ্ধ শেষ করার উপায় হিসেবে ওই হামলাকে সামনে আনা ভুক্তভোগীদের জন্য অপমানজনক।
তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে ট্রাম্পের বিবৃতির নিন্দা জানিয়েছেন জাপানে পারমাণবিক বোমা হামলায় বেঁচে যাওয়া মানুষেরাও। তাদের একজন সংবাদমাধ্যমে সেদিনের সেই বীভৎসতা তুলে ধরেন। জাপানের মানুষদের আগুনে পুড়তে দেখার বর্ণনা দেন তিনি। তার দাবি, কেউ যদি পারমাণবিক বোমা হামলাকে শান্তির উপায় মনে করে, তবে সেটা নিষ্ঠুরতা আর মূর্খতার পরিচয়।
ট্রাম্পের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন জাপানে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত পেইমন সাদাতও। এমন বক্তব্যকে অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ট্রাম্পের কথা জাপান এবং ইরানের প্রতি অপমান। তিনি পারমাণবিক বোমা হামলার শিকার জাপানকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলি ও মার্কিন সামরিক হামলার বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
জাপানের পারমাণবিক বোমায় ক্ষতিগ্রস্তদের সংগঠনকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেন পেইমন সাদাত। তিনি বলেন, পারমাণবিক বোমা হামলার শিকার হিসেবে জাপানের কণ্ঠস্বর সারাবিশ্ব শুনছে।
এমএইচডি