ঢাকা: যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার জের ধরে আঙ্কারার বিরুদ্ধে নানামুখী পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে মস্কো। তুরস্কের সিরিয়া সীমান্তে মিসাইল ক্রুজার মোতায়েনের পর এবার রাশিয়া তাদের বিভিন্ন অঞ্চলে তুর্কি কারখানাগুলোতে অভিযান চালানো শুরু করেছে।
দু’জন তুর্কি ব্যবসায়ী ও কয়েকজন নাগরিকের বরাত দিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) এ খবর দিয়েছে। এ বিষয়ে আলাপ করা হলে তুরস্ক বা রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয় কোনো মন্তব্য করেননি।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, গত ২৪ নভেম্বর তুর্কি যুদ্ধবিমান এফ-১৬ এর গুলিতে রুশ যুদ্ধবিমান এসইউ-২৪ ভূপাতিত হওয়ার ঘটনার পরই মস্কোর এ পদক্ষেপের খবর আসছে। অবশ্য, এর আগে ২৫ নভেম্বরই সিরিয়ার তুর্কি সীমান্তবর্তী এলাকা লাতাকিয়ায় আকাশ প্রতিরক্ষায় মিসাইল ক্রুজার ‘মস্কভা’ বসায় রাশিয়া।
রাশিয়ায় কর্মরত একটি তুর্কি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, রাশিয়ায় বিভিন্ন অঞ্চলে তুরস্কের কোম্পানিগুলোতে অভিযান চালানো হচ্ছে। বিশেষত নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমও কোথাও কোথাও স্থগিত করা হচ্ছে। অভিযানে আসা কর্মকর্তারা কর্মীদের ভিসা চেক করছেন এবং কোম্পানিগুলোর কাগজপত্রও খতিয়ে দেখছেন। তাদের অভিযানের কারণে অন্য কোম্পানিগুলোর কার্যক্রমেও শিথিলতা নেমে এসেছে।
রাশিয়ার কাজান শহরে কর্মরত ব্যবসায়ী কেভদেৎ সেইলানও তুরস্কের কোম্পানিগুলোতে অভিযানের কথা জানান।
এদিকে, তুরস্কের অলঙ্কার ও পণ্য রফতানিকারক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওসমান বাগদাতলিওগলু জানান, বুধবার (২৬ নভেম্বর) ফুলবাহী কিছু তুর্কি ট্রাক রাশিয়ায় ঢুকতে চাইলে সেগুলোকে ফিরিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন, গতকাল ছয়টি ট্রাক ফেরত পাঠানো হয়েছে। আমাদের সব সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কার্গো প্লেনেও আমাদের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বাগদাতলিওগলু বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা না হলেও অনানুষ্ঠানিক বাধার সম্মুখীন হচ্ছি আমরা। এটা আমাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে ভয়ানক প্রভাব ফেলছে। ইউরোপে রাশিয়া আমাদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার।
তুর্কি রফতানিকারক পরিষদের সদস্য আদনান দালগাকিরানও পণ্যবাহী ট্রাক ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, রাশিয়ার কাস্টমসে তুর্কি পণ্য ঢোকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে তুরস্কের কিছু পর্যটক সংবাদমাধ্যমকে জানান, তাদের নানা ‘অজুহাত’ দেখিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এছাড়া, যেসব তুর্কি নাগরিকের কাজের বা বসবাসের অনুমোদন রয়েছে তাদেরও রাশিয়ায় প্রবেশ বিলম্বিত করা হচ্ছে।
২০১১ সালে একটি চুক্তির পর রাশিয়া ও তুরস্কের নাগরিকরা দু’দেশে ভিসা ছাড়া প্রবেশের সুযোগ পেয়ে আসছিল।
যুদ্ধবিমানটি ভূপাতিত হওয়ার পর থেকে মস্কো ও আঙ্কারার মধ্যে বাকযুদ্ধ চলছে। রাশিয়া এ ঘটনার পর যথার্থ প্রতিক্রিয়া দেখানোর কথা বললেও পরে আবার জানায়, তারা তুরস্কের সঙ্গে যুদ্ধ বানাবে না। তুরস্কের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করায় যুদ্ধবিমানটি ভূপাতিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করারও কিছু নেই। যদিও এখন মস্কোকে শান্ত হওয়ার কথা বলছে আঙ্কারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৫
এইচএ/