ঢাকা: তুমুল বাকযুদ্ধ চলছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়্যব এরদোয়ানের মধ্যে। প্রতিপক্ষকে কথার তীর ছুঁড়ছেন তাদের অনুসারী কর্মকর্তারাও।
রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার খবর পাওয়ার পরপরই পুতিন খেদোক্তি করেন, পিঠে ছুরি মেরেছে তুরস্ক। এর যথার্থ প্রতিক্রিয়া দেখানো হবে। এর জবাবে এরদোয়ান বলেন, সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন হলে তুরস্ক নিশ্চয়ই বসে থাকবে না।
এরপর রুশ প্রেসিডেন্টর দাফতরিক বাসভবন ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে প্লেন ভূপাতিত করার ঘটনায় আঙ্কারাকে দুঃখ প্রকাশ করার কথা বলা হয়। কিন্তু তুরস্কের প্রেসিডেন্টের বাসভবন থেকে বলা হয়, এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করার কিছু নেই। কেবল দায়িত্ব পালন করেছে তুর্কি বাহিনী।
আর শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সম্প্রচারিত এক ভাষণে এরদোয়ান আবারও রাশিয়াকে হুঁশিয়ার করে দেন। তিনি বলেন, পুতিন আগুন নিয়ে খেলছেন।
তার ভাষণের আগেই তুরস্ককে অভিযুক্ত করে পুতিন একটি অনুষ্ঠানে বলেন, তারাই আগুন নিয়ে খেলছে, যারা সন্ত্রাস দমন ইস্যুতে দ্বৈত-নীতি অবলম্বন করছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তার ভাষণে বলেন, আমি রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এ বিষয়ে মুখোমুখি আলাপ করতে চাই। এক্ষেত্রে প্যারিসে অনুষ্ঠেয় জলবায়ু সম্মেলন ভালো সুযোগ হতে পারে। যে উত্তেজনা ছড়িয়েছে তাতে আমরা বিরক্ত। তাছাড়া, আমরা রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে চাই না।
কিন্তু তার এই আগ্রহ প্রত্যাখ্যান করে রুশ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র বলেন, যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার ঘটনায় তুরস্ক ক্ষমা না চাইলে এরদোয়ানের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন না পুতিন।
পুতিন-এরদোয়ানের ‘আগুন নিয়ে খেলার’ পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে কথার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের পেছনের সৈনিকেরাও।
তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী আহমদ দাউতগলু বলেন, আমাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করায় একটি জঙ্গিবিমান ভূপাতিত করা হয়েছে। এটিকে কোনো রাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান মনে করেনি তুর্কি বাহিনী। এখন এ নিয়ে কারও সঙ্গে সম্পর্কও নষ্ট করতে চাই না আমরা।
তবে, সন্ত্রাস নির্মূলে সকল অংশীদারদের ঐক্যবদ্ধ থাকার কথাও বলেন তিনি।
আর রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্জেই লাভরভ হুঁশিয়ার করে বলেন, যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার ঘটনা তুরস্কের উদ্দেশ্যকে দারুণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। আমরা বিশ্বাস করি, তুরস্কের নেতৃত্ব তাদের সীমা অতিক্রম করে ফেলেছেন।
এছাড়া, ২০১১ সালে রাশিয়া ও তুরস্কের নাগরিকদের দু’দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণের যে সুযোগ ছিল তা-ও আগামী জানুয়ারি থেকে বাতিল করা হবে বলে জানান লাভরভ।
গত ২৪ নভেম্বর আকাশ সীমা লঙ্ঘনের অভিযোগে রুশ যুদ্ধবিমান এসইউ-২৪ কে গুলি করে ভূপাতিত করে তুর্কি যুদ্ধবিমান এফ-১৬। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ২৫ নভেম্বরই সিরিয়ার তুর্কি সীমান্তবর্তী এলাকা লাতাকিয়ায় আকাশ প্রতিরক্ষায় মিসাইল ক্রুজার ‘মস্কভা’ বসায় রাশিয়া। এরপর বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) থেকে আঙ্কারার বিরুদ্ধে নানামুখী পদক্ষেপ নিতে শুরু করে মস্কো। এখন পর্যন্ত রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে তুর্কি কারখানাগুলোতে অভিযান ও কিছু কারখানার কার্যক্রম স্থগিত করার খবর পাওয়া গেছে। খবর পাওয়া গেছে রাশিয়ায় তুর্কি পর্যটক ও পণ্যবাহী ট্রাক ঢুকতে না দেওয়ারও।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৫
এইচএ/
** রাশিয়ায় তুর্কি কারখানায় অভিযান, ঢুকতে পারছে না ট্রাক-পর্যটক