ঢাকা: আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে ইউরোপে একজন মানুষ বাস করতেন কৃত্রিম পা ব্যবহার করে যিনি স্বাভাবিকভাবেই চলাফেরা করতেন।
এ ধরনের তথ্যে পাঠকদের একটু খটকা লাগলেও সম্প্রতি প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রাচীন এক কবরে সমাহিত ব্যক্তির কঙ্কালে এ ধরনের কৃত্রিম অঙ্গের সন্ধান পেয়েছেন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই অগ্রগতির যুগেও যেখানে কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপনের বিষয়টি অতটা সহজসাধ্য নয় সেখানে এ ধরনের খবর একটু চমকে দেয়ার মতই।
২০১৩ সালে দক্ষিণ অস্ট্রিয়ার হেমারবার্গ অঞ্চলে একটি প্রাচীন গির্জার কাছে কৃত্রিম পা সমেত সমাহিত ওই ব্যক্তির কবরের সন্ধান পান প্রত্নতত্ত্ববিদরা। তার দেহাবশেষের ওপর করা গবেষণার বিষয়বস্তু খুব শিগগিরই ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব পালিওপ্যাথলজিতে প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে।
গবেষণাপত্রটির একজন সম্পাদক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ইউরোপের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত সবচেয়ে পুরনো অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রমাণ এটি। মধ্যবয়স্ক ওই লোকের বাম পা ছিলো না। সেখানে ছিলো একটি কাঠের পা, যা মূল পায়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলো লোহার আঙটা দিয়ে।
রেডিওগ্রাফি এবং সিটি স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে গবেষকরা দেখতে পান ওই ব্যক্তির বাম পায়ে ক্ষত ছিলো। পরবর্তীতে তা সেরেও গিয়েছিলো।
অস্ট্রিয়ান আর্কিওলজিক্যাল ইন্সটিটিউট এর গবেষক সাবিনে ল্যাডস্ট্যাটার বলেন, পায়ের ক্ষত থেকে সেরে উঠেছিলেন ওই ব্যক্তি। এছাড়া অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পরও দুই বছর বেঁচে ছিলেন এবং ভালভাবেই হাঁটতে পারতেন।
ষষ্ঠ শতাব্দীতে বেঁচে থাকা এই ব্যক্তি কোন অবস্থায় তার পা হারিয়েছিলেন তা জানা না গেলেও ধারণা করা হয় তিনি অভিজাত শ্রেণীভুক্ত ছিলেন। একটি গির্জার পাশে তরবারি সমেত সমাহিত হওয়ায় এই ধারণা করেন গবেষকরা।
অস্ট্রিয়ান আরকিওলজিক্যাল ইন্সটিটিউটের বায়ো আর্কিওলজিস্ট মিচেলা বাইনডার বলেন, সাধারণত যখন সংযোগ স্থলে না কেটে একটি পা’কে হাড় বরাবর কাটা হয় তখন এটি অসংখ্য রক্ত নালিকাকে বিদীর্ণ করে, ফলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। তাছাড়া এ ধরনের অস্ত্রোপচার খুবই সংক্রমণ প্রবণ। এই কারণে এখনও কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ঘটনা মোটামুটি বিরল।
তাই প্রায় দেড় হাজার বছর আগে এ ধরনের একটি ঘটনার পর ওই ব্যক্তির ভালো হয়ে যাওয়া কিংবা তার আবার স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে আসার ব্যাপারটি খুবই অসাধারণ একটি ঘটনা।
প্রাচীন মিশর কিংবা গ্রিক ও রোমান যুগেও এ ধরনের ঘটনার খবর জানা থাকলেও দ্বিতীয় সহস্রাব্দের আগে এর প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়ার ঘটনাও খুবই বিরল বলে জানান গবেষকরা।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৬
আরআই